পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ড. ইউনূসের তৎপরতা অস্বীকার করে ইউনূস সেন্টার যে বিবৃতি দিয়েছে তা ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র অপচেষ্টা বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ইউনূস সেন্টারের বিবৃতির বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় অনেক বিরোধিতাকারী সুর পাল্টেছে। বিএনপিও কিছুটা সুর পাল্টানোর চেষ্টা করছে, যদিও মির্জা ফখরুল সাহেব এখনো কিছু বলেননি। আজকে দেখলাম ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, তখন বিশ্ব ব্যাংকের মিস্টার জেলিক বলেছিলেন, এটি বন্ধ করার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। কারণ প্রথমত বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের অন্যতম অংশীদার অর্থাৎ সেখানে আমাদের শেয়ার আছে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ কখনও ঋণখেলাপী হয়নি। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে খুবই ভালো। কোনও যুক্তিসঙ্গত কোনও কারণ না থাকায় মিস্টার জেলিকের ওপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করা হলেও তিনি কিন্তু সেটি করেননি। তিনি যেদিন অবসরে যাচ্ছেন, তার শেষ কর্মদিবসের শেষ ঘন্টায় তিনি অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্তে সই করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, এর কারণ ড. ইউনূস সাহেব বেআইনিভাবে ১০ বছর অতিরিক্ত সময় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি ছিলেন। আরও থাকতে চেয়েছিলেন। ব্যাংকের এমডিদের বয়সসীমা বাংলাদেশে ৬০ বছর। কোনও বেসরকারি ব্যাংকেও এ বয়সের পর আর এমডি থাকা যায় না। তার বয়স তখন ৭০ এর কোঠায়। আর গ্রামীণ ব্যাংক হচ্ছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বা কর্মসংস্থান ব্যাংকের মতো সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, যেখানে সরকারের শেয়ার আছে। গ্রামীণ ব্যাংকে তখন সরকারের শেয়ার ছিল ৫১ শতাংশ ও অন্যদের ৪৯ শতাংশ। সংবিধিবদ্ধ অন্য ব্যাংকের জন্য যে আইন এখানেও সেই আইন। কিন্তু তিনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এমডির দায়িত্বে ছিলেন। সরকার তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে সরে ব্যাংক ছেড়ে যেতে বলেনি, বরং উপদেষ্টা হতে বলেছিল। তখন তিনি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলেন। মামলায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত গেছেন এবং হেরেছেন।’
হাছান মাহমুদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে গ্রামীণ ফোনের লাইসেন্স দিয়েছিলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল গ্রামীণ ব্যাংকের নামে। তখন বলা হয়েছিল, গ্রামীণ ফোনের টাকাটা গ্রামীণ ব্যাংকে যাবে। কিন্তু সেই টাকা কি গ্রামীণ ব্যাংকে গেছে? যায়নি। গ্রামীণ ব্যাংকে না গিয়ে সেই টাকা বিভিন্ন জায়গায় গেছে। তিনি ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে যে অনুদান দিয়েছিলেন, তা গতকালের বিবৃতিতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু দেশ-বিদেশের সমস্ত পত্র-পত্রিকায় যখন সেটি বেরিয়েছিল তখন তো তিনি অস্বীকার করেননি। আজ এত বছর পর কেন তিনি অস্বীকার করছেন
‘ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি সত্যের অপলাপ’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউনূস সাহেব যে পদ্মা সেতু এবং এতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের বিরোধিতা করেছেন, সেটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তিনি আগে কখনও বলেননি যে তিনি এই অপচেষ্টা চালাননি। বরং যখন বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হলো, তখন দম্ভ করে বিভিন্ন জায়গায় তিনি নানা কথা বলেছিলেন, যেগুলো এখনো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এভাবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টায় লাভ নেই। যদি প্রয়োজন হয় আমরা আরও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো।
ড. ইউনূস পদ্মা সেতুর জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন -এবিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এখন সারাদেশ যখন উল্লসিত, যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিলো, তারা প্রচণ্ড লজ্জিত। এটি তার লজ্জা ঢাকার অপচেষ্টার অভিনন্দন।