মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় মাছ ধরার জালে ১২ ফুট লম্বা একটি অজগর সাপ ধরা পড়েছে। সাপটির ওজন প্রায় ১০ কেজি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সাপটিকে উপজেলা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিলের মাঝে মাছ ধরার চাই (জাল) ওঠাতে গিয়ে সাপটিকে দেখতে পান স্থানীয় বাবু খান। পরে বাবু খান ও তার বড় ভাই উসমান খান সাপটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে উপজেলা বন বিভাগে হস্তান্তর করে।
স্থানীয় বাবু খান বলেন, প্রতিদিনের মতো ভোরে মাছ ধরার চাই ওঠাতে যাই। চাই টান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাপটি নড়াচড়া করতে শুরু করে। প্রথমে বড় মাছ ভেবে আমার বড় ভাই ওসমানকে ডাক দেই। পরে চাইটি একটু উপরে ওঠালেই বিশাল অজগর সাপটি দেখতে পাই। পরে সেখান থেকে সাপটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানাই। তারপর তাদের মাধ্যমে উপজেলা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করি।
স্থানীয় পাবেল চোকদার জানান, এতো বড় সাপ এর আগে আমরা দেখিনি। এটা দেখার পর থেকে আমরা আতঙ্কে আছি।
এদিকে অজগর সাপ ধরা পড়ার খবরে হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। অনেকেই সাপটিকে একনজর দেখতে ভিড় করেন। স্থানীয়দের ধারণা, অজগরটি বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে। মাছ খাওয়ার জন্য হয়তো চাইয়ের ভিতরে প্রবেশ করেছিল।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলা বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, অজগর সাপ ধরা পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাপটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এটি এখন টঙ্গীবাড়ি বন অফিসে আছে। এটাকে অবমুক্ত করা হবে।
এদিকে মুন্সীগঞ্জ থেকে অজগর উদ্ধারের ঘটনায় কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেন বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা। তিনি বলেন, ওই এলাকায় অজগরের কোনো বসতি নেই। সাপটি হয়তো নদীর স্রোতে ভেসে এসেছে অথবা পাচারকারীদের হাত থেকে ছুটে গিয়ে থাকতে পারে।তিনি জানান, অজগর নির্বিষ একটি সাপ। এই সাপটি নিশাচর ও খুবই অলস প্রকৃতির, প্রয়োজন ছাড়া নড়াচড়াও করে না। এই প্রজাতিটি গাছে একাকী বাস করলেও শুধু প্রজননকালে জোড়া বাধে। সাধারণত মার্চ থেকে জুনের মধ্যে প্রজননকাল। দেশের ম্যানগ্রোভ বন, ঘাসযুক্ত জমি, চট্টগ্রাম ও সিলেটের চিরসবুজ পাহাড়ি বনে এদের দেখা পাওয়া যায়। সাপটি সাধারণত মানুষের ক্ষতি করে না। খাদ্য হিসেবে এরা ইঁদুর, মুরগি, সাপ-কচ্ছপের ডিম, ছোট বন্যপ্রাণী ইত্যাদি খায়। এটি তার আকারের চেয়েও অনেক বড় প্রাণী খুব সহজেই গিলে খেতে পারে।
জোহরা মিলা বলেন, চামড়ার জন্য সাপটি পাচারকারীদের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ফলে আমাদের বনাঞ্চল থেকে এটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-২ অনুযায়ী এ বন্যপ্রাণীটি সংরক্ষিত, তাই এটি হত্যা বা এর যে কোনো ক্ষতি করা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ।