1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
ভূমি জটিলতায় কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার বাসিন্দারা | Bastob Chitro24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ অপরাহ্ন

ভূমি জটিলতায় কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার বাসিন্দারা

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৮ মার্চ, ২০২৩

একসময়ের দেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল কুড়িগ্রামের দাসিয়ার ছড়ায় ভূমি জরিপে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, মালিকানাধীন জমি দেখানো হয়েছে খাস খতিয়ানভুক্ত হিসেবে। অনেক জমি রেকর্ড হয়েছে বেনামেও। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস জেলা প্রশাসনের।

২০১৭ সালে ভূমি জরিপ হয় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অধুনালুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ায়। এরপর থেকে ভূমি সংক্রান্ত নানা জটিলতায় পড়েন বাসিন্দারা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জরিপকারীদের অনিয়মে পূর্বপুরুষের ভোগদখল ও ব্রিটিশ রেকর্ডে থাকা তাদের প্রায় একশ একর জমি করা হয়েছে সরকারি এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। এ ছাড়া একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ডেরও অভিযোগ উঠেছে। এতে বসতঘর ও জমি হারানোর আতঙ্কে বাসিন্দারা।
বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার বাসিন্দারা জানান, মূলত ছিটমহল বিনিময়ের পর উপজেলা ভূমি জরিপকারী কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে তাদের। যারা ছিটমহল বিনিময়ের বিরোধিতা করেছিল তাদের চক্রান্তের ফলে এটা হতে পারে। কেননা তারা চায়, খাস খতিয়ানে যাওয়া এসব জমি তারা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ভোগদখল করতে।

দাসিয়ার ছড়ার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দিজীবনের পর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যুক্ত হয়েছি। সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছি। কিন্তু আমার সকল কাগজপত্র থাকলেও এক একর জমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। একটি চক্র ভূমি জরিপকারীদের দিয়ে এটি করিয়েছে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।’
ভুক্তভোগী শ্রী বাবু চন্দ্র বলেন, ‘আমার ৩৫ শতক জমি খাস খতিয়ানে রেকর্ড করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আমার বসতভিটাও রেকর্ড করা হয়েছে অন্যজনের নামে। এতে আমরা মানসিক হয়রানিতে পড়েছি। এই জমির রেকর্ড ঠিক করা না হলে আমরা ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়ে যাব।’

ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের আগে আমাদের এসব জমি ভারত সরকারের অধীন ছিল এবং আমরা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ব্রিটিশ রেকর্ড অনুযায়ী ভোগদখল করে আসছি। কিন্তু ২০১৫ সালে ছিট বিনিময়ের পর এসব জমি বাংলাদেশ সরকারের অধীন আসে এবং নতুন করে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড করা হয়। পরে ২০১৭ সালে করা রেকর্ডে আমরা দেখতে পাই, আমাদের বাপ-দাদার নামে ব্রিটিশ রেকর্ড থাকলেও এসব জমি খাস খতিয়ানে চলে গেছে।’

‘আমার বসতভিটাসহ প্রায় ৫ একর জমি খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। এরপর আমিসহ অন্যান্য জমির মালিক কুড়িগ্রাম আদালতে ২০১৮ সালে মামলা করলেও এখনও সমাধান পাইনি। আমরা চাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হোক,’ যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার বাসিন্দারা যে ভূমি সমস্যায় পড়েছে, সেটি আইনের আওতায় সমাধান করা হবে। যদি কারো জমি খাস খতিয়ানে রেকর্ড হয়ে থাকে, তাহলে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের যতটুকু করণীয় আছে তা করা হবে।’

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর ব্রিটিশ আইনজীবী সিরিল রেডক্লিফ পাকিস্তান-ভারতের সীমানা নির্ধারণ করে মানচিত্র তৈরি করেন। তখন থেকেই উভয় দেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিট মহলের মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করে আসছে।
১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিটি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ অনুমোদন করলেও দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখে ভারত। ২০১১ সালে ঢাকায় হাসিনা-মনমোহন প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৩ সালে ভারতের কংগ্রেস সরকার ল্যান্ড বাউন্ডারি চুক্তির বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের চেষ্টা করলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির মুখে বিলটি আলোর মুখ দেখেনি। নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ছিট মহল বিনিময়ের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। তখন নমনীয় হন মমতা ব্যানার্জি। পরে ভারতীয় মন্ত্রিপরিষদে স্থলসীমান্ত বিলটির অনুমোদন দেয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসভায় বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়। পরবর্তী সময়ে ভারতের লোকসভায় বিলটির চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টি আলোর মুখ দেখে এবং ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুদেশের ছিটমহল বিনিময় করা হয়।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ছিটমহলের অবস্থান রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামে-১২, লালমনিরহাটে-৫৯, পঞ্চগড়ে-৩৬ এবং নিলফামারী জেলায় -৪টি। এসব ছিটমহলের লোকসংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার ৩৩৬ জন। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ৫১টি ছিটমহলের অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় ৪৭টি এবং জলপাইগুড়ি জেলায় ৪টি।  লোকসংখ্যা ১৪ হাজার ২১১ জন।

ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ পায় ১৭ হাজার ২৫৮ একর এবং ভারত পায় ৭ হাজার ১১০ একর জমি। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ার ছড়ায় জমির পরিমাণ ১৬৪২ একর। ছিটমহল বিনিময়ের পর ১৮১ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে ১১১টি ছিটমহলের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করা হয়। এর মধ্যে শুধু দাসিয়ার ছড়ায় ৮১ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি