একসময় কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল ফসলি জমি আর বসতভিটা। ভাঙনে সবকিছুই চলে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদের পেটে। প্রতিবছর মাদারীপুরের কালকিনিতে শত শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভাঙন রোধে সরকার এখনও দীর্ঘমেয়াদি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে চলতি বছরও ভাঙনের মুখে পড়েছে দেড় শতাধিক পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। তবে ভাঙন ঠেকাতে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় জেলা প্রশাসন।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার চর সাহেবরামপুর গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন সরদার আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে এরই মধ্যে হারিয়েছেন ৩০ বিঘা জমি। বসতভিটা তিনবার গিলে খেয়েছে আড়িয়াল খাঁ। চোখে-মুখে এখন শুধুই হতাশা। একই অবস্থা জয়নাল সরদারেরও। এবারও ভাঙনের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত তিনি। এ নিয়ে পাঁচবার ভাঙনের শিকার হলেও পাননি সরকারি কোনো সহায়তা।
শুধু গিয়াস উদ্দিন কিংবা জয়নাল সরদারই নন, তাদের মতো আড়িয়াল খাঁয় ঘরবাড়ি হারিয়েছে সাহেবরামপুর ইউনিয়নের কয়েকশ পরিবার। চলতি বছরও দেড় শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। নদের ভাঙনে এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে ৫০০ মিটার সড়ক। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ইউনিয়নটির বড় একটি অংশ আড়িয়াল খাঁ নদে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের।
ক্ষতিগ্রস্ত গিয়াস উদ্দিন সরদার বলেন, ‘বারবার নদের ভাঙনে সবকিছুই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবারও নতুন করে সংসার গোছানোর চেষ্টা করছি। সরকারি বা স্থানীয় কোনো সহযোগিতা কখনো পাইনি।
জয়নাল সরদার বলেন, ‘বয়স ৮০ বছর হয়েছে। বেশিদিন বাঁচার ইচ্ছে নেই। পাঁচবার নদের ভাঙনের শিকার হয়েছি। এখন অল্প পরিমাণ জমি কিনে ঘর তুলেছি, সেটিও ভাঙনের মুখে। সরকার যদি বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করে, তাহলে বাঁচার কোনো রাস্তা নেই।’
নদের ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাটবাজার, মসজিদসহ একাধিক স্থাপনা। এরই মধ্যে ভাঙন রোধে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ হাজার ৮২০টি জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা স্থাপনার গুরুত্ব বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..