সাদামাটা মানুষ। ভাটি অঞ্চলের মাটি, কাদা-জলে মাখামাখি করে বেড়ে উঠেছেন তিনি। ভাটির মানুষের অতি আপনজন। দরদি এই মানুষটি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করলেও কথা বলার ভঙ্গি ও রসিকতা দিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি।
দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে আগামী ২৩ এপ্রিল অবসরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শেষে তিনি এক ভিন্ন জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক উত্তাল দিনগুলো কাটিয়ে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এবার তিনি শুরু করতে যাচ্ছেন অবসরজীবন।
বঙ্গভবন ছেড়ে তিনি কোথায় উঠবেন, তা নিয়েও চলছে জোর প্রস্তুতি। আবার কী কী সুবিধা পাবেন, তা নিয়েও রয়েছে আলোচনা। এক সময়ে লালমাটিয়ার বাসায় থাকতেন আবদুল হামিদ। অবসরে যাওয়ার পরে রাজধানীর নিকুঞ্জের একটি বাসায় উঠতে পারেন। সংবাদমাধ্যমে এমন তথ্য জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন।
এ ছাড়াও তার জন্য ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থিত একটি ফ্ল্যাটও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে গেছেন রাষ্ট্রপতি। এটিকে তার অবসরের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি এই মিঠামইনের কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
তার বাবার নাম হাজী তায়েব উদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুন। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে আবদুল হামিদ তৃতীয়। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ স্কুল জীবন থেকে ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৭১ সনের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
একাত্তরের মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কিশোরগঞ্জে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ মার্চ কিশোরগঞ্জ শহরের রথখোলা মাঠে ছাত্র-জনতার সভায় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন।
সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। পরবর্তীতে তিনি সংসদে স্পিকার ও বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও নবম জাতীয় সংসদে তিনি কার্য উপদেষ্টা কমিটি, কার্যপ্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং পিটিশন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করার অবসরে গেলেও তিনি কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন, যা আইন দিয়ে নির্ধারিত। একজন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কী কী সুবিধা পাবেন, তা রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইন, ২০১৬-এ বলা হয়েছে।
আইন অনুসারে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অন্যূন ৬ মাস দায়িত্ব পালন শেষে পদত্যাগ করলে অথবা মেয়াদ শেষ হলে তিনি আমৃত্যু রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার সর্বশেষ মাসিক বেতনের ৭৫ শতাংশ হারে অবসর ভাতা পাবেন।
রাষ্ট্রপতিদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত ‘দি প্রেসিডেন্টস (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট, ১৯৭৫ (মে ২০১৬ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী বর্তমানে রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। সে অনুসারে মাসে ৯০ হাজার টাকা অবসর ভাতা পাবেন আবদুল হামিদ।
কেউ এই আইনের অধীন অবসর ভাতা নেয়ার পর মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী কিংবা বিপত্নীক স্বামী তার প্রাপ্য মাসিক অবসর ভাতার দুই-তৃতীয়াংশ হারে আজীবন অবসর ভাতা পাওয়ার অধিকারী হবেন।
এ জন্য অবসরভাতা গ্রহণের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে অবসর ভাতার বদলে আনুতোষিক গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে। আর এই আনুতোষিকের পরিমাণ এক বছরের জন্য প্রদেয় অবসর ভাতার ততো গুণ হবে, যত বছর কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
এই সময়সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আংশিক বছরকে পূর্ণ বছর গণনা করা হবে। আর আনুতোষিক বলতে অবসরভাতার পরিবর্তে গ্রহণ করা এককালীন অর্থকে বোঝায়।
কোনো সাবেক রাষ্ট্রপতি তার জীবদ্দশায় নিজে, অথবা তিনি মারা গেলে তার মনোনীত কোনো ব্যক্তি অথবা মনোনীত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার উত্তরাধিকারীরা, এরইমধ্যে আনুতোষিক গ্রহণ না করে থাকলে, তিনি বা তার মনোনীত ব্যক্তি বা তার উত্তরাধিকারীরা এই আইনের অধীন আনুতোষিক গ্রহণ করতে পারবেন।
এ আইনে উত্তরাধিকার বলতে কেবল বাবা, মা, স্বামী বা স্ত্রী এবং ছেলে ও মেয়েকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা-সুবিধাদির সমপরিমাণ চিকিৎসা-সুবিধা পাবেন একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি। সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন। আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন। নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত তার বিল পরিশোধ থেকে তিনি অব্যাহতি পাবেন।
তার থাকবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট; দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্ট হাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থান করতে পারবেন। সাবেক রাষ্ট্রপতির স্বামী কিংবা স্ত্রীও আইন অনুসারে এসব সুবিধা পাবেন।