ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে সদ্য পদত্যাগী নেতা পাঁচবারের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার বিজয় নিশ্চিত করতে বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ।
গত ২৬ জানুয়ারি বিকেলে সরাইল সিরাজুল হক মিলনায়তনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সভা করেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। সভায় কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। নির্বাচনের দিন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেয়ার পাশাপাশি তারা সাত্তারের কলার ছড়ির প্রতীকে ভোট নিশ্চিত করার সব ধরনের প্রয়াস গ্রহণ করেছেন।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার দায়িত্ব মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি আপনাদের দায়িত্ব। আর কলার ছড়ি প্রতীকে ভোট নেয়ার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের।
তিনি বলেন, যারা সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পান, তারা কিন্তু মেম্বারদের লাইনে আছেন। আমরা এই কথা এখানে বলতে এসেছি যে, আপনার যারা বিভিন্ন ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আছেন, আল্লাহর ওয়াস্তে তারা আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আপনার ওয়ার্ডের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে হাজির করবেন।
‘আমাদের আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যেহেতু এখানে আমাদের দলীয় প্রার্থী নেই, তাই একজন ভালো মানুষ ও পাঁচবারের সংসদ সদস্য হিসেবে প্রবীণ নেতা হিসেবে আবদুস সাত্তারকে আমরা রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করি। সে কারণে সাত্তার সাহেবকে বিজয়ী করানো আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব। কে কী বলল, কোন নেতা কারে দাওয়াত করল, কারে করল না, কোন নেতা কারে কইছে, কারে কইছে না এসব চিন্তার দরকার নাই।’ তিনি নির্বাচনী মাঠে দলীয় নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
এদিকে বিএনপি নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা একাধিক সভায় বলেছেন, সরকার বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগকে বিতর্কিত করতে আব্দুস সাত্তারকে নির্বাচনে এনেছে। সরকার সেটা সফলভাবে করেছে। তাকে চাপ দিয়ে এই নির্বাচনে আনা হয়েছে। আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে তিনি আখ্যায়িত করেছেন।
সাত্তার ভূঁইয়ার নির্বাচন প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, ছাত্তার ভাই দলের একজন প্রবীণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি দলছুট হয়ে শেষ বয়সে দলের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সাল সাত্তার ভাইয়ের জীবনে কলঙ্কজনক অধ্যায়। দলের সঙ্গে বেইমানি করায় আমরা তাকে ধিক্কার জানাচ্ছি। পচন অবস্থায় আওয়ামী লীগ সাত্তার সাহেবকে নিয়ে সুগন্ধ ছড়াবে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই দেশের জনগণ অনেক সচেতন। জনগণ অনেক ভালো বোঝেন। তাদের বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নেই।
ব্যারিস্টার রুমিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক। অত্যন্ত মার্জিত ব্যক্তি ও উচ্চশিক্ষিত। রুমিন ফারহানা বাংলাদেশের যেকোনো আসন থেকে নির্বাচন করলে পাস করবেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দাঁড়ালেও। সুতরাং সরাইল আসন নিয়ে ভাবনার কিছু নেই।
এদিকে সচেতন মহল বলছে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কারণে কৌশল নিয়েছে। এখানে বিএনপির সিদ্ধান্ত যে ভুল তা প্রমাণের জন্যে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে আওয়ামী লীগ ব্যবহার করছে। তাই আওয়ামী লীগ তার দলীয় প্রার্থীদের বসিয়েছে।
এদিকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্যে নব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন তারা। এরইমধ্যে আবদুস সাত্তার ছাড়াও প্রার্থী হিসেবে মাছে কাজ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ, জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল, জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল হামিদ (ভাসানী)।
‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের মোট ১৭টি ইউনিয়নে ১৩২টি ভোটকেন্দ্রে মোট ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫০৩ জন। আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৫ জন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের পর ওই সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি। সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার তখনও (২০১৮) জোটের মারপ্যাঁচে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ায় সেখানে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে ভরাডুবি হয়। নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া জয়লাভ করেন, যিনি পাঁচ বারের সংসদ সদস্য। ব্যক্তিগত ও এলাকায় দলীয় অবস্থান বিবেচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে সামান্য ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. মঈন উদ্দিন মঈন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগের ওই নেতা হেরে যান বলে মনে করা হয়।
উপ-নির্বাচনে ভোটের আগে বেশ আলোচনায় আসেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা পাঁচ বারের সংসদ সদস্য ৮৪ বছর বয়সী আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করে ক্ষোভে দল থেকে পদত্যাগ করেন। তার নামে কেনা হয় মনোনয়নপত্র। এর পরপরই তাকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। সর্বশেষ সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।