দীর্ঘ ৬ মাস পর চালু হয়েছে বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। তবে নাব্য সংকটের দোহাই দিয়ে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল।
বৃহস্পতিবার (০৬ অক্টোবর) সকাল ৭টায় ৭৫০ জন পর্যটক নিয়ে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে রওনা হয় পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেস।
কিন্তু সাগরে জাহাজ ঘণ্টাখানেক যেতে না যেতেই অনেক পর্যটক অস্থির হয়ে ওঠেন। জাহাজের নিচ তলা থেকে বের হয়ে অবস্থান নেন দ্বিতীয় তলার ফ্লোরে। প্রথমে ফ্লোরে বসে পড়লেও কিছুক্ষণ পর অস্থিরতা বেড়ে যায়। এরপর শুরু হয় পর্যটকদের বমি করা। যা থেমে থেমে চলে বেলা ১২টা পর্যন্ত। একপর্যায়ে অনেক পর্যটক পরিবার-পরিজন নিয়ে অসুস্থ হয়ে শুয়ে পড়েন। আর বাচ্চারা শুরু করে দেয় কান্নাকাটি। তারপর জাহাজ কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের কাছে সরবরাহ করেন পলিথিন। পর্যটকরা বমি করে পলিথিন ভর্তি করে তা সাগরে ফেলছিলেন আর জাহাজ কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের কয়েকবার করে কালো পলিথিন সরবরাহ করেন।
মোহাম্মদ রাসেল নামের একজন বলেন, সকাল ১০টা থেকে শুরু করে বেলা সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত ৩ দফা বমি করেছি। শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পেরে জাহাজের ফ্লোরে অসুস্থ হয়ে শুয়ে পড়ি।
সিলেট থেকে আগত পর্যটক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মা, ভাই, স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে সেন্টমার্টিন যাবার উদ্দেশ্যে জাহাজে উঠি। কিন্তু এই অবস্থা হলে জীবনেও কোনোদিন জাহাজে উঠতাম না। আর সেন্টমার্টিনেও যেতাম না। পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছি বমি করতে করতে। বৃদ্ধ মা খুবই কষ্ট পেয়েছেন। মা অন্তত ৮ বার বমি করেছেন। আর পরিবারের আমিসহ বাকিরা ৪ থেকে ৫ বার বমি করেছি। সবাই অসুস্থ হয়ে একজনের গায়ের ওপর আরেকজন কোন রকম শুয়ে ছিলাম।’
আরেক পর্যটক নাহিয়ান আহমেদ বলেন, ‘স্ত্রী ও ৭ বছরের শিশু সন্তান নিয়ে জাহাজে খুব কষ্ট পেয়েছি। ঢেউয়ের কারণে জাহাজ এদিক ওদিক দুলছিল। যার কারণে বার বার বমি করছিলাম। চেয়ারে বসে সময় পার করতে না পেরে শেষমেশ জাহাজের ফ্লোরে শুয়ে পড়ি স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে। এরকম কঠিন অবস্থায় আর কোনোদিন পড়িনি।’
আরেক পর্যটক আজিম আহমেদ বলেন, ‘৬ ঘণ্টা জাহাজে চড়ে আর কোনোদিন সেন্টমার্টিন দেখতে আসব না। এমন পরিস্থিতিতে আর কোনোদিন হয়নি। যদি টেকনাফ থেকে জাহাজ ছাড়ে তখন সেন্টমার্টিন যাব, না হয় কক্সবাজার দিয়ে আর যাব না।’
এদিকে, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জাহাজ থেকে দেখা যায় প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। তখন ফ্লোরে শুয়ে থাকা পর্যটকরা একে একে দাঁড়িয়ে যেতে থাকেন। আর অবাক চোখে দেখতে থাকেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের অপরূপ সৌন্দর্য। কেউ দেখছিলেন সবুজ জলরাশির ঢেউ, আবার কেউ দেখছিলেন প্রবাল পাথর আর কাশবন। এরপর সবাই ব্যাগ নিয়ে তড়িঘড়ি শুরু করেন জাহাজ থেকে নামার জন্য। দুপুর ১টার দিকে জাহাজ সেন্টমার্টিনের ঘাটে ভিড়লে পর্যটকরা নামতে শুরু করেন।
মানিক নামের এক পর্যটক বলেন, ‘বমি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়লেও জাহাজ থেকে দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে অবাক। এমন সৌন্দর্য দ্বীপ যে বাংলাদেশে আছে তা নিজ চোখে না দেখলে কোন দিনও বুঝতে পারতাম না। দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছি।’
রিফাত আহমেদ বলেন, ‘কষ্ট সার্থক হলো দ্বীপে পৌঁছার পর। জাহাজে যে কষ্ট পেয়েছি, দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে তা এক মুহূর্তে কেটে গেল।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাহাজের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাগর কিছুটা উত্তাল ছিল। তাই জাহাজে যাত্রীদের বমি বমি হয়েছে। সাগর শান্ত থাকলে এমনটা হতো না।’
এমভি কর্ণফুলি জাহাজের কক্সবাজার অফিসের ইনচার্জ হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর জানান, তিনি কক্সবাজার রয়েছেন। জাহাজের পরিস্থিতি জেনে বলতে পারবেন। অসুস্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে অনেক সময় জাহাজে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকলে বমি হতে পারে। বিষয়টি তিনি দেখছেন।
এদিকে, ৭৫০ জন যাত্রী নিয়ে জাহাজ সেন্টমার্টিন গেলেও, কক্সবাজার ফেরার সময় জাহাজে যাত্রী ছিলেন ৩০ জনের কাছাকাছি।