রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সন্তানদের নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে শিরিন খান নামে এক নারীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাতে রূপগঞ্জ উপজেলার বরপা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল হান্নান সাউদ ও তার সহযোগী আয়েছ আলী ভূঁইয়া।
জানা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলার ভারগাঁও এলাকায় জালিয়াতি করে ভুক্তভোগী ওই পরিবারের কাছে জমি বিক্রির অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় একটি প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী শিরিন খাঁন।
পুলিশ ওই মামলায় দুজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠায়। পরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহসিনের আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
সময় সংবাদকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও এলাকায় ২০১৫ সালে বেড়িবাঁধের পাশে রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাউদের কাছ থেকে ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ৪ কাঠা জমি ক্রয় করেন শিরিন খাঁন। এ সময় আয়েছ আলী ভূঁইয়ার সহযোগিতা করেন।
পরবর্তীতে তিনি ওই জমিতে দোতলা বাড়ি নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এছাড়া তিনি ওই বাড়ির একটি অংশ ভাড়াও দিয়েছেন। সেই বাড়ি ভাড়ার টাকায় তাদের সংসারের খরচ চলতো।
এদিকে, গত ৮ মাস আগে বেসিক ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা থেকে তাদের কাছে বাড়ি ছাড়ার একটি নোটিশ আসে। সেই নোটিশে জমিবন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়।
বিষয়টি জানার পর শিরিন খাঁন এ ব্যাপারে জমি বিক্রেতা আবদুল হান্নান সাউদকে জিজ্ঞেস করলে তাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে এ ব্যাপারে শিরিন খাঁন আবদুল হান্নান সাউদের বিরুদ্ধে তালতলা ফাঁড়িতে লিখিতভাবে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে অভিযোগের কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় শিরিন খাঁন গত ১৮ অক্টোবর প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের সামনে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহননের চেষ্টা করেন। এতেও প্রশাসনের টনক না নড়ায় পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুই সন্তানসহ আত্মহননের চেষ্টা করেন। এছাড়াও তিনি বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন।
এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আত্মহননের চেষ্টার সময় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনার পর সোনারগাঁ থানা পুলিশের টনক নড়ে। ভোক্তভোগী শিরিন খাঁনের দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে শনিবার রাতে রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হান্নান সাউদ ও তার সহযোগী আয়েছ আলী ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ বলেন, ভুক্তভোগী শিরিন খাঁন মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত আবদুল হান্নান সাউদ ও সহযোগী আয়েছ আলী ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা অভিযোগ স্বীকার করেছেন। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..