শিল্পবিপ্লবের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বরগুনায় শিল্প, কলকারখানা গড়ে উঠছে না। কারখানা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন নামিদামি শিল্পপ্রতিষ্ঠান জমি কিনলেও গ্যাস না থাকায় সেই জমি খালি পড়ে আছে বছরের পর বছর।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণের জনপদ বরগুনার যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। অন্যদিকে বরগুনার পাশেই পায়রা বন্দর। সব মিলিয়ে শিল্প সম্ভাবনাময় জেলা বরগুনা। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কয়েক শত একর জমি কিনেও গ্যাস না থাকায় ফেলে রেখেছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
আবারও বিসিক শিল্পনগরীর প্লটও অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। জেলায় হাতে গোনা যে কয়েকটি কারখানা রয়েছে, সেগুলোও চলছে সিলিন্ডারের গ্যাসে। এ অবস্থায় গ্যাস না থাকায় প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়ছেন উদ্যোক্তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হলে বরগুনা একটি শিল্পনগরীতে পরিণত হবে। এতে পায়রা বন্দর ও পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে আমদানি-রফতানিসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন আসবে। সেই সঙ্গে হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপার সম্ভাবনা থাকার পরও শুধু গ্যাস না থাকায় বরগুনায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। পাইপলাইনের মাধ্যমে বরগুনায় গ্যাস সরবরাহ করা হলে শিল্পনগরীতে পরিণত হবে অনেকটা পিছিয়ে পড়া এ জেলা।
বিদ্যুৎ দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে না পারার কথা উল্লেখ করে বরগুনার বিসিক শিল্পনগরীতে প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার মালিক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের বিকল্প নেই। গ্যাস এলে এখানে যেমন কলকারখানা নির্মিত হবে, ঠিক তেমনিভাবে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে।
বিসিক শিল্পনগরীর খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ইরান হোসেন বলেন, ‘একে তো বিদ্যুৎবিভ্রাট, তার ওপর বাড়তি জ্বালানি খরচ। সব মিলিয়ে খুব বাজে সময় পার করছি। গ্যাস সরবরাহ করা হলে কম দামে পণ্য উৎপাদন করে তা কম দামে বিক্রি করা যেত। এতে ভোক্তাদের জন্যও সুবিধা।
বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট বগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহা. তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, তালতলীতে শতাধিক একর জমি কিনেছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু গ্যাস না থাকায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন না তারা। যদি ভোলার গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বরগুনায় সরবরাহ করা হয়, তাহলে এই অঞ্চলটি শিল্পনগরীতে পরিণত হবে।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে মন্তব্য করে বরগুনার বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক কাজী তৈফাজ্জেল হক বলেন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নামিদামি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বরগুনায় শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু গ্যাস না থাকায় তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ অবস্থায় দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা অত্যন্ত জরুরি।
এ বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ভোলার গ্যাস বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী অঞ্চলে আনার জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি আলোচনা চলছে।
খুব শিগগিরই পাইপলাইনের মাধ্যমে বরগুনায় গ্যাস সরবরাহের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।