২০২৩ সালের সংকট মোকাবিলায় খাদ্য আমদানিতে উৎসেকর ছাড়সহ ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার (১৪ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক হয়।
পরে সচিবালয়ে বৈঠকের বিস্তারিত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে বৈশ্বিক যে সংকট আসছে, সেগুলো মোকাবিলায় আমাদের কতগুলো পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ বলছে, যে তিনটি কারণে ২০২৩ সালে সংকট দেখা দেয়ার শঙ্কা রয়েছে; তার একটি হলো ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এতে অগ্রগতির ধারা পিছিয়ে যাচ্ছে। তৃতীয়ত চীনের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
সচিব বলেন, আগামী ২০২৩ সাল একটি সংকটের বছর হওয়ার শঙ্কা আছে। সে অনুসারে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বৈশ্বিক সংকটের ফাঁদে পড়ে দেশে যাতে কোনো কঠিন পরিস্থিতি তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ ৬টি নির্দেশনা এসেছে মন্ত্রিসভা থেকে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ওনারা যে পর্যবেক্ষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা, প্রথমত আমাদের সর্বাবস্থায় ফুড প্রোডাকশনটা বাড়াতে হবে। আমরা যতই ফুড ইমপোর্টের কথা বলি, ক্রাইসিসটা থাকবেই। যদিও ইউক্রেন ও রাশিয়াকে ফ্রি করে দেয়া হয়েছে যে ফুডের বিষয়ে কোনো ইমপোজিশন থাকবে না। তবে স্টিল এটি ম্যাটার করবে। আর যেহতু ফরেন কারেন্সির একটি সমস্যা হচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভের রেট অব ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি হওয়ার কারণে যেসব দেশ লোন নিয়ে কাজ করে বা যাদের ইমপোর্ট বেশি তাদের কিন্তু দুদিক থেকেই অসুবিধা হচ্ছে। আমরা যখন টাকা দিচ্ছি তখন বেশি দিচ্ছি আবার যখন পাচ্ছি তখন কম পাচ্ছি। সেজন্য ডাবল নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য ফার্স্ট ওন্ড ফর মোস্ট ইম্পরটেন্ট কাজ হলো সবাইকে ফুড প্রোডাকশন বাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। এটার সম্ভাবনাও আছে। আমরা গত ৪-৫ মাস থেকে দেখছি এগ্রিকালচার, ফিসারিজ ও লাইভস্টকে বেশ কিছু নতুন ভ্যারাইটি এসেছে। এগুলো অলরেডি টেস্টেড। এগুলো রিপ্লেস করলে আগামী ১-২-৩ বছরের মধ্যে ফুড প্রোডাকশন ডাবলের কাছাকাছি চলে যাবে।’
‘দ্বিতীয়ত, যারা বিদেশে যাচ্ছে, আমরা যেন আনস্কিলড লেবার না পাঠিয়ে, স্কিলড লেবার পাঠাই। তাহলে তাদের জন্য হাই সেলারিতে কাজ করার সুযোগ হবে। সেক্ষেত্রে যেসব দেশে আমরা পাঠাবো সেসব দেশের চাহিদা অনুসরণ করে যেন ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করা হয়। তাদের সার্টিফিকেটগুলো যেন প্রোপার ইনস্টিটিউট থেকে তারা পায়, না হলে তাদের স্কিল বা ট্রেনিংয়ের কোনো দাম থাকে না।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তিন নম্বর হলো, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য কিছু ইন্সট্রাকশন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে একটি সার্কুলার দিয়েছে যে এখন থেকে রেমিট্যান্স পাঠাতে কাউকে ফি দিতে হবে না। যে ব্যাংকে পাঠাবে সেই ব্যাংকই এটা হ্যান্ডেল করবে; কীভাবে বেনিফিট দেয়া যায়। এটা এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্লিয়ার করেছে বা করবে। বাহিরে থেকে যারা রেমিট্যান্স পাঠায় তাদের অনেকগুলো কলাম ফুলফিল করতে হয়; সেখানে তাদের কমফোর্ট দেয়া যায় কিনা। যেমন নাম বা এনআইডি দিয়ে পাঠানোর সিস্টেম। বাকিগুলো ডাটাবেইজ থেকে নেয়া যায় কিনা। তাহলে বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘চার নম্বর ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট আরও বাড়াতে হবে। এজন্য যে শর্ত আছে সেগুলোকে আরও কমফোর্ট করা যায় কিনা। অলরেডি আমরা কয়েকবার বসে কাজ করছি যাতে একমাত্র বিডাতেই যাবে ইনভেস্টররা। এক বিডাতেই কয়েকটি উইন্ডো খোলা হবে যেমন পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন যেখানে ইন্ডাস্ট্রিটা হবে লাইসেন্স নিতে যাতে তাকে সেখানে যেতে না হয়। এনবিআরের ট্যাক্স দেয়ার ক্ষেত্রেও যাতে তাকে এনবিআরে যেতে না হয়।’
খন্দকার আনোয়ারুল আরও বলেন, ‘ছয় নম্বরে বলা হয়েছে, ফুড স্টোরেজটাকে সব সময় কমফোরটেবল রাখতে হবে। এখন এটা ভেরি কমফোর্টেবল অবস্থায় আছে। প্রাইভেট সেক্টরকেও অনেক ফুড ইমপোর্ট করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। একাধিক বড় দেশ যারা সাপ্লিমেন্টারি ফুড যেমন তেল বা মসলা এক্সপোর্ট করে তাদের সাথে সরাসরি আমাদের ইমপোর্টারদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে সরাসরি করা যায় কিনা, তৃতীয় পক্ষ ছাড়া। সরাসরি গেলে কমফোর্টেবল প্রাইজে পাওয়া যাবে; এতে আমাদের মার্কেটে প্রভাব রাখতে।’
‘হলো ট্যাক্স কমফোর্টের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা আমাদের খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। উৎসে কর সংক্রান্ত কিছু বিষয় আছে এটা দিতে হয়। এনবিআরকে বলা হয়েছে, আলাপ-আলোচনা করে ইমিডিয়েটলি যেন তারা একটি সন্তোষজনক শর্তের মধ্যে যায় যাতে করে আমাদের ফুড ইমপোর্টাররা কমফোর্টে আসতে পারে।