1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নব্য জঙ্গিদের অবস্থান নিয়ে রহস্য ঘনীভূত | Bastob Chitro24
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৮ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নব্য জঙ্গিদের অবস্থান নিয়ে রহস্য ঘনীভূত

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩

পাহাড়ের পর নব্য জঙ্গি সংগঠনের ‘সামরিক শাখার প্রধান ও বোমা বিশেষজ্ঞের’ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। আত্মগোপন নাকি সদস্য সংগ্রহ এবং প্রশিক্ষণের জন্য ক্যাম্পে জঙ্গিদের অবস্থান, তা নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে।

তবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন তারা। ক্যাম্পের ভেতরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তার জন্য কার্যকর তৎপরতা বজায় রাখা হচ্ছে, মনিটরিং হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, নব্য জঙ্গি সংগঠন হিন্দাল শারক্কিয়া’র সামরিক শাখার প্রধান মাশেকুর রহমান ওরফে রনবীর। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে ৫৫ জনসহ অনেককে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, অস্ত্র সরবরাহ করছেন ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন- এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব মাঠে নেমে শনাক্ত করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার অবস্থান।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার অবস্থান শনাক্তের পর র‌্যাবের অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যায় রনবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার। পরে পিছু নিয়ে গহীন পাহাড়ে গোলাগুলির পর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও নগদ টাকাসহ গ্রেফতার করা হয় তাদের। তবে আত্মগোপন, নাকি সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য তাদের ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া, তা নিশ্চিত করতে পারেনি র‌্যাব।
এ ব্যাপারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মূলত নব্য জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাশেকুর রহমান ওরফে রনবীর দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহ করছিলেন। অর্থ সংগ্রহ করছিলেন। এরও একটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে, ক্যাম্পে তার সদস্য সংগ্রহ করা বা আত্মগোপনে থাকা। আমরা সন্দেহ করছি, এজন্যই তিনি ক্যাম্পে আসতে পারেন। আমরা তাকে মাত্র গ্রেফতার করেছি; হয়তো জিজ্ঞাসাবাদে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারব।’

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির রয়েছে। যার অবস্থান পাহাড়ের পাশেই। তাই ক্যাম্পে শীর্ষ জঙ্গিদের অবস্থান ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়সহ জনপ্রতিনিধিদের।

উখিয়ার কুতুপালংয়ের রাজাপালং ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, এরইমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে নতুন একটা বিষয় দেখলাম সেটি হচ্ছে, ক্যাম্পে জঙ্গি সংগঠন আশ্রয় নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। র‌্যাব একটি প্রশংসনীয় অভিযান চালিয়েছে। আশা করবো, এই ধরনের সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে ক্যাম্পে যারা এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার পরিকল্পনা করছে, তাদের ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে।’
উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শীর্ষ জঙ্গি সংগঠনের দুজন প্রধান নেতা গ্রেফতার হয়েছে। বিষয়টি আমাদের এই অঞ্চলের জন্য খুবই উদ্বেগের। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর জন্য এবং সেখানে যৌথ অভিযান চালানোর জন্য। যে জঙ্গিরা ধরা পড়েছে তাদের নিশ্চয়ই ডালপালা এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছে, তাদের অনুসারী আছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি, এ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যৌথ অভিযান চালিয়ে যে জঙ্গি সংগঠন এবং যে সন্ত্রাসীরা রয়েছে তাদের নির্মূল করা। তা না হলে যে কোনো সময় তারা কক্সবাজার অঞ্চলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।’
এ ব্যাপারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছি। এখানে যে শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর র‌্যাব ফোর্সেস, এপিবিএন, পুলিশ শুধু তাই নয়, সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আছে; আমরা সবাই সমন্বিতভাবে একত্রে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছি। অবশ্যই আমাদের নজরদারি ছিল বলেই তো আমরা এই অভিযানগুলো করতে পারছি এবং নতুন যে জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান, তাকে আমরা এখান থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নজরদারি অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতে অবশ্যই নজরদারি আরও জোরদার করা হবে।’

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৩৮ জন সদস্য ও তাদের আশ্রয়ে থাকা এবং প্রশিক্ষণ দেয়া ১৪ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।
এদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৬ বছর চলছে ১১ লাখ রোহিঙ্গা একটা গণ্ডিবদ্ধ জীবনযাপন করছে। তারা হতাশায় ভুগছে। কারণ তারা কবে স্বদেশে ফেরত যাবে, কোথায় যাবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ কী এটা চিন্তা করে। হতাশাগ্রস্ত মানুষদের সবসময় যে কেউ উগ্রপন্থা হোক বা যেকোনো মাধ্যমে হোক আশার বাণী শোনায়, তাই স্বাভাবিকভাবে যে কেউ তাদের সহজে ভিকটিম বানাতে পারে।’

মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কফি আনান কমিশনের রিপোর্টে দেখা যাবে, মিয়ানমার, বিশেষ করে আরাকান অঞ্চলের ওপর যে রিপোর্টটা দিয়েছে; সেখানে বলেছে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই রোহিঙ্গাদের বিষয়টা দ্রুত এবং যথাযথভাবে বিবেচনায় না আনে ও সমাধান না করে তাহলে এ অঞ্চলটা উগ্রবাদের একটা উর্বর ভূমি হিসেবে পরিগণিত হবে। যেটার কারণে উগ্রবাদ শুধু বাংলাদেশ মিয়ানমারেই নয়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াসহ আরও অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। উগ্রবাদের কারণে পুরো অঞ্চল অস্থির এবং সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। যা কফি আনান কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে।’

মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো দুয়েকটা মানুষ ধরা পড়েছে মাত্র। এটা শুধুমাত্র আলামত। এটা হয়তো ভবিষ্যতে আরও কঠিন এবং সুপ্ত আগ্নেয়গিরি হিসেবে আছে। যদি ১১ লাখ রোহিঙ্গা দীর্ঘসময় গণ্ডিবদ্ধ জীবনযাপন আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের আগে যেমনটি ঘুমিয়ে থাকে, ঠিক তেমন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’
এই সংকট সমাধানের ব্যাপারে মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার বা রাষ্ট্র যতই করুক এখানে প্রথম কাজ হলো প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদের তার নিজ দেশে, স্বঅঞ্চলে পুনর্বাসিত করা বা ফেরত পাঠাতে হবে। এটা হলো সরকারের এক নাম্বার কাজ। দুই নাম্বার কাজ হচ্ছে, এখন যে ধরণের আলামতগুলো দেখা যাচ্ছে তা অচিরেই যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো না হয় এটা হবে আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে এখনো একটা রোহিঙ্গাকেও আমরা ফেরত পাঠাতে পারিনি। কূটনৈতিক উদ্যোগগুলো এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে। কূটনৈতিক উদ্যোগে যেহেতু দুজন রোহিঙ্গাও ফেরত পাঠানো যায়নি; বরং আরও রোহিঙ্গা আমাদের দেশে এসে ঢুকেছে। সুতরাং কূটনৈতিক উদ্যোগগুলো যাতে তামাশায় পরিণত না হয়, কাজের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফেরত যেতে বা প্রত্যাবর্তন করতে পারবে সেই ধরণের কূটনৈতিক উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে যারা দায়িত্বে আছে তারাই জানে কী ধরণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ যে গোয়েন্দা তৎপরতা সেটাকে জোরদার করতে হবে। তাহলে ভেতরে কী ঘটছে সেটা দ্রুত বের করা যাবে। নিশ্চয়ই এটা আছে; না হয় র‌্যাব কীভাবে জানল যে তারা ক্যাম্পের ভেতরে কাজ করছে। আমার মনে হয়, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী যথেষ্ট তৎপর আছে। এই তৎপরতা আরও বজায় রাখতে হবে। এটাকে আরও সচল এবং আরও কার্যকরী করতে হবে। আসল এবং প্রথম কাজ হলো রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে। আশ্রয় নেয় ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রিত ৯ লাখ রোহিঙ্গা পাাঁচ বছর পেরিয়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১১ লাখে। জাতিসংঘসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও, বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি