এলসি জটিলতার কারণে পণ্য খালাস করতে না পেরে চট্টগ্রাম বন্দরে অলস সময় পার করছে বেশ কয়েকটি জাহাজ। এর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ডলারের সংকট নিরসন না হলে আসন্ন রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। অথচ এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল-চিনি-ছোলার মতো সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বুকিং রেট রয়েছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়ে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ২শ’ মিটার দীর্ঘ এমভি কমন এটলাস নামে জাহাজটিতে এখনও রয়ে গেছে প্রায় ৩৭ হাজার মেট্রিক টন চিনি। ডলার সংকটে এলসি’র অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় এটির মতো আরও অন্তত তিনটি জাহাজ এবং অয়েল ট্যাংকার খালাস বন্ধ রেখে বন্দরে অপেক্ষা করছে। এসব জাহাজে আনা হয়েছে রমজানের জন্য চিনি এবং ভোজ্যতেল।
বন্দরে এ ধরনের জাহাজ অপেক্ষায় থাকায় আসন্ন রমজানে পণ্য সংকটের পাশাপাশি দাম লাগামহীন হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি সপ্তাহে প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিন ১৩শ ৫০ মার্কিন ডলার এবং পাম অয়েল ৯৯০ মার্কিন ডলার নির্ধারন করা হয়েছে। অথচ গত মাসে সয়াবিন দেড় হাজার মার্কিন ডলার এবং পাম অয়েল ১ হাজার ৫০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়।
এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জের মেসার্স সবুজ কমার্শিয়াল মালিক শাহেদ উল আলম বলেন, এলসি পাস না করতে পারায় পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না। এতে জাহাজের ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।
রমজান মাসে সংকটের আশঙ্কা জানিয়ে খাতুনগঞ্জের মেসার্স আর এন এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজ বলেন, এলসির করার জন্য ডলারের সুবিধার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর কোন মিল নেই। এরকম চলতে থাকলে রমজান মাসে সংকট তৈরি হবে।
এদিকে বিশ্ববাজারেও সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে চিনির দাম। সেই সঙ্গে ছোলার বুকিং রেট প্রতি মেট্রিক টনে কমেছে অন্তত ৪০ মার্কিন ডলার।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স আলতাফ অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক আবদুল গাফ্ফার বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় চিনির দাম কমেছে। তবে রমজানে ডলারের দাম না কমলে এবং ব্যাংকগুলো এলসি না করলে, চিনির দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
আর খাতুনগঞ্জের মেসার্স তৈয়বিয়া বাণিজ্যালয়ের মালিক সোলায়মান বাদশা জানান, বিশ্ববাজারে গত মাসে ছোলার দাম ছিল ৬৭০ তেকে ৬৮০ জলার। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ তেকে ৬২০ ডলারে।
এর মধ্যেই দেশে রমজানের জন্য আমদানি করা ভোগ্যপণ্য খালাস শুরু হয়েছে। তবে এখনই জটিলতা নিরসন করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
রজমানে সংকট সৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে খাতুনগঞ্জের মেসার্স আর এম এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদুল হক লিটন বলেন, রমজানকে সামনে রেখে সরকারের উচিত মজুতে থাকা পণ্যগুলো বাজারে আনা, না হলে রজমানে সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
রমজান মাসে বাংলাদেশে আড়াই থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন চিনি, সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে।
এদিকে বিশ্ববাজারে এই মুহূর্তে সব ধরনের ভোগ্য পণ্যের বুকিং রেট তুলনামূলক কম রয়েছে। তবে আসন্ন রমজানে ভোগ্য পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে এলসির জটিলতা নিরসন করতে হবে। এর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ডলার সংকট।