বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের কোনো শঙ্কা নেই। বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ তথ্য জানান কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন আমন ধান কাটা চলছে। ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডমেনিকো স্কালপেলি আমাকে বলেছেন তাদের কাছে তথ্য আছে, কোনোক্রমেই বাংলাদেশে খাদ্যসংকট বা দুর্ভিক্ষ হওয়ার সামান্যতম আশঙ্কা নেই। তবে যেহেতু এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যু, তাই তিনি (ডমেনিকো স্কালপেলি) এটা নিয়ে সরাসরি কথা বলবেন না। আমি জানতে চেয়েছিলাম তাকে রেফার করতে পারব কি না। তিনি সম্মতি দিয়েছেন।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ইউএনও, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন মাল্টিলেটারেল ডোনার আমাদের বলেছে, তারা অনুমান করছে, পৃথিবীতে অতিসত্বর খাদ্যসংকটের আশঙ্কা আছে। কাজেই এটিকে বিবেচনায় নিয়েই সরকার কাজ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে। স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সহযোগিতা করছে। ছয় বছর ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে খাদ্য প্রয়োজন, সেটিও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মাধ্যমেই দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সংকটের কথা অনেকেই বলছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে তারা কীভাবে দেখছে এবং কীভাবে ভবিষ্যতে এখানে তারা কাজ করবে। অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইউএসএইড আমাদের বছরে এক লাখ টনের মতো গম দেয়। এটি ছাড়া বিদেশ থেকে আমরা কোনো খাদ্য সহযোগিতা নিই না।’
এদিকে, শঙ্কার মধ্যেও এবার আমনের ভালো ফলন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমাদের আমন একটি মূল ফসল। শ্রাবণ মাসে মাত্র এক দিন বৃষ্টি হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম, কৃষকরা হয়তো ধান লাগাতেই পারবে না। উৎপদন কমে যাবে। কিন্তু এই প্রতিকূলতার মধ্যেও সেচ দিয়ে কৃষকরা ঠিকই ধান লাগিয়েছে। ভাদ্র মাসে ভালো বৃষ্টি হয়েছে। তারপর সাইক্লোনের সময় যে বৃষ্টি হয়েছে সেটাও যথেষ্ট ছিল। সবাই বলছে যে, স্মরণাতীতকালের সবচেয়ে ভালো ধান হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটি বিষয়, অনেক নিচু এলাকায় অন্য সময় ধান লাগানো যেত না। কারণ, বিলে পানি এসে যায় ও ডুবে যায়। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় এই বিলের জমিতেও ধান লাগিয়েছে। তারা বলেছেন যে, অতীতে যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো আমন পাবে। আমাদের এবার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়েও ভালো ধান হয়েছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশে গরিব মানুষ আছে, তাদের কষ্টও হচ্ছে। সীমিত বা নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তবে টাকা নিয়ে খাবার কিনতে পারছে না এমন পরিস্থিতি হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আগামী আলু ও বোরোর জন্য যে সার দরকার, আমাদের তা আছে। আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি আছে।’
উৎপাদনে সমস্যা না থাকলেও বণ্টনে সমস্যা হওয়ার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুব বিব্রতকর। উৎপাদন আসলেই খুব ভালো হচ্ছে। এগুলোর সামাজিক-রাজনৈতিক কিছু সমস্যা আছে। আমি এটা অস্বীকার করবো না।’
তিনি বলেন, ‘পরিবহন খরচ বাড়ার পাশাপাশি নানা ভোগান্তি তো আছেই। আমার মনে হয়, আগামী ৬ থেকে ৭ দিনে সারা দেশ শীতের সবজিতে ভরে যাবে এবং এগুলো কেনার মানুষ পাওয়া যাবে না। কয়েক দিনেই দাম অর্ধেক হয়ে গেছে।’
ডলার সংকটের প্রভাব খাদ্য আমদানিতে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি সার আমদানিতে কোনো সমস্যা তৈরি করা যাবে না। এটির পেমেন্ট মসৃণ করতে হবে। খাদ্য আমদানিতে কিছু প্রভাব পড়ছে। গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম খাদ্য আমদানি হয়েছে। এই যে এত সংকটের কথা বলা হচ্ছে, এত কম আমদানির পরও কি দেশে খাদ্য নিয়ে কোনো কথা আছে? হয়নি তো। এটা কিন্তু কেউ জানে না।’
খাদ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আরেকটা কারণ হলো বিদেশ থেকে যে দামে আনতে হচ্ছে, তা এখানে বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। প্রায় ৮০০ প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল কিন্তু ২ থেকে ৩ লাখ টনও আসেনি। এ মুহূর্তে খাদ্যের দাম বাড়ার ট্রেন্ড নেই। খাদ্যের দাম কমেছে বলেই মূল্যস্ফীতি গতমাসে কমে এসেছে। তবে আমি মনে করি, এখন আমনের মৌসুম, ধান কাটার মাস, দাম আরও কমা উচিত ছিল। ডলারের সংকট একটি সমস্যা। তা ঠিক। তবে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য; এগুলোর ক্ষেত্রে ডলার সংকট হবে না। এখনও ২৭ বিলিয়ন রিজার্ভ তো আছেই। এগুলো সরবরাহ রাখার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ডলার দিতে পারবে।’