বরিশালে দিন দিন ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। গত একমাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫ জন। বিভাগের ৬ জেলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৪ জন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড খুলতে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সচেতনতার পাশাপাশি কার্যকরী উদ্যোগের বিকল্প নেই বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বরিশালের উজিরপুরের মধ্য মশাং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নাইম হাওলাদার গত সপ্তাহে ঢাকা গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। এরপর বাড়ি এসে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হন শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
নাইমের ফুফা সান্টু সর্দার বলেন, নাইম প্রায়ই অসুস্থ থাকে। তাই এবার চিকিৎসার জন্য ঢাকা গিয়েছিল। আমাদের এক আত্মীয়ের বাসায় রাতে মশারি ছাড়া ঘুমিয়েছে। এরপর বাড়ি ফিরে দেখি জ্বর হয়েছে। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
শুধু নাঈম নয় একই অবস্থা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্য রোগীদেরও। চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ করেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বরিশালে।
আমেনা বেগম নামে এক রোগীর মা বলেন, ঢাকা চাকরি করতো আমার ছেলে। হঠাৎ জ্বর হওয়ায় ছুটি নিয়ে বাড়ি আসে। পরে বাড়িতে বেশি অসুস্থ হবার পর শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসছি।রুবিনা আক্তার নামে আরেক রোগীর খালা বলেন, আমার বোনের ছেলে ঢাকায় পড়াশোনা করে। সেখানে বসে অসুস্থ হওয়াতে ওর বন্ধুরা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এরপর দিন দিন অবস্থা খারাপ হতে থাকলে আজ শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করালাম। এখন জানতে পারলাম ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মো. সোলায়মান কবির বলেন, বরিশালে হঠাৎ করেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তবে বেশির ভাগ রোগী ঢাকায় আক্রান্ত। আমরা চেষ্টা করছি রোগীদের দ্রুত সুস্থ করে তুলতে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে নতুন করে ৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত একমাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫ জন। গত ১০ মাসে বিভাগে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫২১ জন। বর্তমানে বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৬ জন।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যেই ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড খোলা হবে বলে জানিয়েছেন শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করে চলছি ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য। তবে দিন দিন ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলছে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।