মাছ চাষের নামে কৃষিভূমিতে নদীর লবণপানি প্রবেশ করানোর ফলে অতিরিক্ত লবণাক্ততায় পরিত্যক্ত পড়ে আছে মোংলা উপজেলার কয়েক হাজার বিঘা কৃষি উপযোগী জমি। লবণপানির আগ্রাসন থেকে পরিবেশ ও জীবন বাঁচাতে মানববন্ধনসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জমির মালিক ও কৃষকরা।
স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকদের অভিযোগ, প্রভাবশালী মৎস্য চাষিরা তাদের কৃষিভূমিতে লবণপানি তোলার কারণে আজ তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। তাই ওইসব প্রভাবশালীর দৌরাত্ম্য বন্ধ করে লবণাক্ততা থেকে মুক্তি এবং আবারও কৃষিতে ফিরতে সরকারি সহায়তা চান স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী জমির মালিকরা জানান, মোংলা উপজেলার ফসলি জমির পরিমাণ ১৮ হাজার ২৪২ হেক্টর। একসময় এসব জমিতে সব ধরনের শস্য ফলাতেন তারা। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে এসব জমির অধিকাংশ ভূমিতে পর্যায়ক্রমে বাগদা চিংড়ি চাষ শুরু হয় দুই দশক আগে। আর এ মাছ চাষের জন্য দখলদার প্রভাবশালীরা প্রতিনিয়ত কৃষিজমিতে নদীর লবণপানি প্রবেশ করাতেন। কয়েক বছর মাছের ভালো ফলন হলেও এখন মাছ বা কৃষি কোনোটিরই ভালো ফলন হচ্ছে না। তাই কয়েক বছর ধরে ধান চাষ না করায় অধিকাংশ কৃষিভূমি এখন পরিত্যক্ত পড়ে আছে। ফলে ফলন না হওয়ায় তারা এখন ভূমিহীনদের কাতারে পৌঁছেছেন।
কৃষকরা জানান, লবণাক্ততার ফলে অনাবাদি পড়ে রয়েছে তাদের হাজার হাজার বিঘা জমি, কিন্তু ধান চাষ করতে পারছেন না কিছু প্রভাবশালীর কারণে। বর্তমানে প্রায় ৫০ একর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হবে বলে আশা তাদের।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কৃষি কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, ‘কৃষির উৎপাদন বাড়াতে নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন চিলা গ্রামের জমির মালিক ও কৃষকরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আবারও কৃষিতে ফিরতে চান।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপংকর দাশ বলেন, ‘কৃষিজমির ধান রক্ষায় চিলা গ্রামের বেশ কিছু জমির মালিক ও কৃষক অভিযোগ করেছেন। উপজেলা প্রশাসন ওই এলাকায় সরেজমিন যাবে এবং যাতে লবণপানি না ওঠে, সে জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে উপজেলা প্রশাসন।’
প্রভাবশালীদের মাছ চাষের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পারলে লবণপানি থেকে মিলবে মুক্তি। ফলবে সব ধরনের ফসল। দূর হবে বেকারত্ব, মিটবে দেশের খাদ্য চাহিদা–এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় কৃষকদের।