ঢাকা
অফিস:
লন্ডন থেকে রওনা দেয়া সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমান মাঝ আকাশে প্রচণ্ড টার্বুলেন্স বা ঝাঁকুনিতে পড়লে একজন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ওই বিমানের আরো অন্তত ৩০ জন আরোহী গুরুতর আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ মে) সিঙ্গাপুর-গামী ওই বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এয়ারক্র্যাফটটি ব্যাঙ্ককে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছে। ব্যাঙ্ককের স্থানীয় সময় বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে বিমানটি সেখানে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা থেকে দেখা যাচ্ছে, এস কিউ ৩২১ ফ্লাইটটি যে উচ্চতায় ক্রুজ করছিল ‘ক্রুজিং অল্টিটিউড’, সেখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে হু হু করে অন্তত ছয় হাজার ফিট (১৮০০ মিটার) নিচে নেমে আসে।
বিমানটি তখন সবেমাত্র বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে সিঙ্গাপুরের দিকে যাচ্ছিল।
তবে ওই বিমানটিতে সে সময় ঠিক কী ঘটেছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ওই বিমানের যাত্রী, ২৮ বছর বয়সী ছাত্র জাফরান আজমির জানান, ‘প্লেনের ভেতরে বসে থাকা যে যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা ছিল না, প্রায় সাথে সাথে প্রচণ্ড জোরে তাদের মাথা গিয়ে ধাক্কা মারে প্লেনের ছাদে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কয়েকজনের মাথা গিয়ে ধাক্কা মারে ওভারহেড ব্যাগেজ কেবিনে। তাতে কেবিন অবধি তুবড়ে যায়। মাথার ওপরে যেখানে লাইট বা মাস্কগুলো রাখা থাকে, অনেকের মাথা সোজা সেটা ফুঁড়ে দিয়ে সব কিছু ভেঙে দেয়।’
বিমান সংস্থার প্রতিক্রিয়া
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই বিমানের মোট ৩১জন যাত্রীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তারা বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বাদবাকি যাত্রী ও ক্রু মেম্বারদের ব্যাঙ্ককের সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এবং যার যেমন দরকার সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
আরো বলা হয়েছে, এয়ারলাইনটির পক্ষ থেকে থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে এবং যাত্রীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেয়ার জন্য তারা উভয়ে একযোগে কাজ করছে।
এর বাইরেও কোনো অতিরিক্ত সহায়তা প্রয়োজন হলে ব্যাঙ্ককে আরো একটি দলকেও পাঠানো হচ্ছে।
থাই কর্তৃপক্ষও ইতোমধ্যে সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সহায়তা প্রদানকারী দল মোতায়েন করেছে।
সিঙ্গাপুরের পরিবহন মন্ত্রী চি হং তাত বলেছেন, তাদের সরকার ওই বিমানের সবযাত্রী ও তাদের পরিবারগুলোকে সবধরনের সহায়তা করবে।
ফেসবুকে একটি বিবৃতি পোস্ট করে পরিবহনমন্ত্রী লেখেন, ‘লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরগামী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনের ফ্লাইট এস কিউ ৩২১-এ মাঝ আকাশে যে ঘটনা ঘটেছে তা জেনে আমি গভীরভাবে ব্যথিত।’
টার্বুলেন্স কী জিনিস?
একটি উড়ন্ত বিমান যখন আকাশে মেঘের বুক চিরে যায়, সাধারণত তখনই সব চেয়ে বেশি টার্বুলেন্সের ঘটনা ঘটে।
তবে এর বাইরে ‘ক্লিয়ার এয়ার’ টার্বুলেন্স বলেও পরিষ্কার মেঘমুক্ত আকাশে এক ধরনের টার্বুলেন্স কখনো সখনো হয়। এটা জেট বিমানের ওয়েদার রাডারে ধরা পড়ে না, আগে থেকেও এটার কোনো পূর্বাভাস করা যায় না।
এভিয়েশন খাতের বিশেষজ্ঞ জন স্ট্রিকল্যান্ড বিবিসিকে বলেন, ‘সারা বছর জুড়ে পৃথিবীতে যে লাখ লাখ ফ্লাইট চলাচল করে সেই তুলনায় টার্বুলেন্স-জনিত আঘাতের ঘটনা তুলনামূলকভাবে বেশ বিরলই বলতে হবে। তবে এটাও ঠিক, তীব্র টার্বুলেন্সের পরিণতি খুবই মারাত্মক হতে পারে। কখনো কখনো সেটা খুব গুরুতর আঘাতের কারণ হতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনাটির ক্ষেত্রে টার্বুলেন্স একজন যাত্রীর মৃত্যুও ডেকে এনেছে।’
তিনি আরো জানান, আকাশে কোনো বিমান টার্বুলেন্সে হিট করলে কীভাবে সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে, ফ্লাইট ক্রু-দের তার জন্য আলাদা করে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেয়া হয়ে থাকে।
জন স্ট্রিকল্যান্ড যোগ করেন, ‘একটা ফ্লাইট লম্বাই হোক বা খুব অল্প সময়ের, এই যে এয়ারলাইনগুলো পই পই করে বলে জার্নির পুরো সময়টা অন্তত আলগা করে হলেও সিটবেল্ট কোমরে বেঁধে রাখতে – তা কিন্তু এমনি এমনি নয়।’
সাম্প্রতিক গবেষণাতে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের (ক্লাইমেট চেঞ্জ) কারণে আগামী দিনে তীব্র টার্বুলেন্স ঘটার প্রবণতা অনেক বেড়ে যেতে পারে।
সূত্র : বিবিসি