1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপ-পাকিস্তানে অস্থিরতা | Bastob Chitro24
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন

শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপ-পাকিস্তানে অস্থিরতা

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০২২

প্রতিবেশীদের নিয়ে সতর্কতা

 

গ্লোবালাইজেশনের এ যুগে বিশ্বের কোথাও কিছু ঘটলে সে প্রভাব আশপাশের দেশে পড়ে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশে পড়েছে। সার্কভুক্ত তিনটি দেশে বেহাল অবস্থা। পাকিস্তানে রাজনৈতিক সঙ্কট প্রবল হয়ে উঠেছে; একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটছে। মালদ্বীপে ‘ভারত খেদাও’ আন্দোলনে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে। ঋণ নিয়ে মেগা প্রকল্প করে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে শ্রীলঙ্কা এখন অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার পথে; দেশটিতে চলছে চরম রাজনৈতিক সঙ্কট। পাশের দেশগুলোর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ঝড়ের তান্ডব কী বাংলাদেশে পড়বে? এমন প্রশ্ন যেন বিএনপি, বামদল, জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা তুলছেন; তেমনি সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও আশঙ্কা উচ্চারিত হচ্ছে। তবে আশার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন ‘বাংলাদেশের পরিণতি এখনোই শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপি (ডিফল্টার) হয়নি, হবেও না। দেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত, সরকার অত্যন্ত সতর্ক।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাশের দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বেহাল অবস্থার নিয়ে যে অস্থিরতা চলছে; সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বাংলাদেশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বললেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বিভাগই রয়েছে এগুলো দেখভালের জন্য। সরকার সকর্ত আছে। তাছাড়া ওই সব দেশ থেকে দূতাবাসগুলো নিয়মিত পরিস্থিতি জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলায় সাফল্য দেখিয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে; পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হয়েছে। ঢাকায় মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, পাবনার রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণসহ অসংখ্য মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে। তারপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিরোধী দলের নেতারা বাংলাদেশের পরিণতি শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, পাকিস্তানের মতো হতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন। পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির তেমন মিল দেখা না গেলেও ‘যুক্তরাষ্ট্র’ শব্দটির কারণে অমিলও কম। তবে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের অনেক কিছুই মিল রয়েছে। মালদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ ভারতের অনুগত হিসেবে পরিচিত। তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ (সবার আগে ভারত) নীতি গ্রহণ করেন। এখন বিরোধীরা ‘ভারত হটাও’ সেøাগান দিচ্ছেন। বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভারতমুখিতা’ দুর্নাম রয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে দিল্লিমুখি ‘তকমা’ দিয়ে থাকে। আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মিল বিদেশি ঋণে মেগাপ্রকল্প। শ্রীলঙ্কা যেনতেনভাবে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বিদেশি ঋণের ফাঁদে আটকে গেছে। এখন ঋণের সুদ পরিশোধ করতে পারছে না। বাংলাদেশ পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে চীনের সহায়তায় তৈরি করলেও অন্যান্য প্রায় সব প্রকল্প বিদেশি ঋণে হচ্ছে। বাংলাদেশের বিগত ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে দেখা যায় দেশের শিক্ষা খাত ও চিকিৎসা খাতে বার্ষিক বরাদ্দ বাজেটের ৫ শতাংশের কম। অথচ বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে ব্যয় করতে হয় বাজেটের মোট বরাদ্দের ১৮ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ আরো বেড়েছে।

গত কয়েক দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন নেটিজনরা। একই সঙ্গে বিএনপি, বামদল, ইসলামী ধারার দলগুলো বাংলাদেশের পরিণতি পাশের দেশ শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান-মালদ্বীপের মতো হয় কিনা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কারণ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সংসদে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছেন। তার মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধীদের উস্কে দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০ বছরের সম্পর্ক উদযাপন করছে। কিন্তু তার আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‌্যাবের ৭ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সব ধরনের সম্পদ ক্রোক করেছে। আবার বিদেশি ঋণ নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে মেগা প্রকল্প নির্মাণ করায় শ্রীলঙ্কা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। শতভাগ শিক্ষিত নাগরিকের দেশটিতে এখন মানুষ খেতে পারছেন না। অর্থ না থাকায় বিদেশ থেকে কিছু আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশে অসংখ্য মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এ সব প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি-বামদল-ইসলামীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অনেকগুলো প্রকল্পে দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি করে নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নিয়েছে। অথচ দেশের সামাজিক বৈষম্য, আয়-ব্যয়ে বৈষম্য ব্যপাকভাবে বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় কয়েকদিন আগে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশকে মেলানোর চেষ্টা করবেন না। বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে পড়বে না।

এমন অবস্থায় ৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদের সমাপনী অধিবেশনে জাতীয় সংসদের আশঙ্কা প্রকাশ করে বিরোধী দলীয় উপনেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ৩ লাখ কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণ আমাদের (বাংলাদেশ) ঘাড়ে আছে। এগুলো শোধ করতে হবে। রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না সেটা জোর দিয়ে বলা যায় না। ক্রমাগত উন্নতিতে এক যুগ আগে যে শ্রীলঙ্কা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উঠার পথে ছিল, সেই শ্রীলঙ্কা এখন দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হওয়ার পথে। জ্বালানি তেল কিনতে না পারায় দেশটিতে এখন বিদ্যুৎ মিলছে না, গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে, কাগজের অভাবে পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। এ পরিস্থিতিতে জনবিক্ষোভে সরকারও পতনের দ্বারপ্রান্তে। সঙ্কটে পড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি বাংলাদেশ থেকেও ঋণ চেয়েছে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি দেখে তাদের ঋণ না দেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি আরো বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। মন্ত্রীরা বলেন, ‘কোনো অসুবিধা নেই। সবার আয় বেড়েছে’। গড় আয় বাড়লেও আয়ে বৈষম্য বাড়ছে। বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষ ভালো নেই।

বিরোধী দলীয় উপনেতার এই আশঙ্কার জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধী দলীয় উপনেতা শ্রীলঙ্কার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এটা বাস্তব। তবে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত উন্নয়নে যত ঋণ নিয়েছে, সব ঋণ সময়মতো পরিশোধ করা হয়। বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপি (ডিফল্টার) হয়নি, হবেও না।

বিপর্যয়ে শ্রীলঙ্কা : উন্নয়নের নামে ঋণের টাকায় কয়েকটি মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করে দেউলিয়া হাওয়ার পথে শ্রীলঙ্কা। একশ ভাগ শিক্ষিতের দেশ শ্রীলঙ্কা এখন ঋণের দায়ে জর্জরিত। ঋণের সুদ পরিশোত করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এর মধ্যে চরম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ২০১৯ সালের নভেম্বরে ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশটিতে ডলারের মজুত ছিল সাড়ে ৭ বিলিয়ন। গত বছরের জুলাইয়ে সেটা ৩ বিলিয়নের নিচে নেমেছে। এখন রিজার্ভ প্রায় নেই। সরকার অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ করেছে। এতে আমদানি পণ্যের দাম যাচ্ছে বেড়ে। বেড়েছে মজুতদারি।
দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধে আটকে ছিল শ্রীলঙ্কা। ২০০৮ সালে ভারতের সহায়তায় যুদ্ধের মাধ্যমে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই)’র নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে হত্যা করা হয়। এরপর তামিল টাইগাররা চলে যায়। কিন্তু ভারতের সহায়তায় এলটিটিইকে পরাজিত করে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধা করতে পারেনি।

যুদ্ধে বিজয় তথা সমরবাদী চরিত্রের জন্য এই রাজাপক্ষে পরিবারকে সিংহলিরা পছন্দ করেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজাপক্ষে পরিবার সরকারকে পরিবারিকীকরণ করেছেন। বিগত সংসদ নির্বাচনে সিংহলি জাতিবাদীদের ব্যাপক বিজয়ে বিরোধী দল অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। এ সুযোগ নিয়ে সরকারকে পারিবারিকীকরণ করেছে রাজাপাকসে পরিবার। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসে, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও অর্থমন্ত্রী বাছিল রাজাপাসসে একই পরিবারের। তাঁদের আরেক ভাই চামাল রাজাপাকসেও মন্ত্রিসভার সদস্য। এই ভাইদের দুই ছেলে নামাল রাজাপাক্ষে ও শশীন্দ্র রাজাপক্ষে মন্ত্রিসভায় আছেন। বর্তমানে বিশ্বের বহুদেশে একদলীয় শাসন চলছে। কিন্তু বর্তমান শ্রীলঙ্কার মতো এক পরিবারের শাসনের নজির এ অঞ্চলের ইতিহাসে নেই। বর্তমানে ঋণগ্রস্ত হয়ে এমন পর্যায়ে পড়েছে যে সুদ পরিশোধ করতে না পারাই শুধু নয় ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সামর্থ্য দেশটির নেই। বিক্ষুব্ধ ও ক্ষুদার্থ মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে জরুরি আইন জারি করা হয়েছিল। সেটা তুলে নেয়া হয়েছে। চরম অর্থনেতিক সঙ্কটে পড়ে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্টের সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহŸান জানান। সে আহবান প্রত্যাখ্যান করে উল্টো ক্ষমতাসীন জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন কমপক্ষে ৪১ জন সংসদ সদস্য। এর ফলে দেশটির সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন জোট। এর আগে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলেসহ ২৬ সদস্য।

শ্রীলঙ্কা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়ে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। শুধু চীনের কাছে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয়ায় দেশটির দেনা প্রায় প্রায় ৮৬ বিলিয়ন ডলার। সুদে-আসলে এ বছরের দেনা শোধে এখনো প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার বাকি। শ্রীলঙ্কা এসব দেনা শোধ করবে, সেটা গভীর প্রশ্ন হয়ে আছে। বিপর্যয়ের মুখে পড়া শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশে মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে সমস্যায় পড়তে হয় কিনা সে শঙ্কা করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিক।

মালদ্বীপে অস্থিরতা : দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে এখন টালমাটাল অবস্থা। সে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ‘ভারত হটাও’ কর্মসূচিতে নেমেছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ ভারতের অনুগত হওয়ায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা চলছে। মাত্র ৫ লাখ জনসংখ্যার ছোট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। ৩০ বছর স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৫ সালে দেশটিতে গণতন্ত্র এসেছে। ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। সেই কারণে গত ১০ বছর ধরে ভারত ও চীন এখানে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুরা মালদ্বীপ ভ্রমণে দ্বীপগুলোতে সময় কাটাতে পছন্দ করলেও রাজনৈতিকভাবে অস্থিরতা চলছে দেশটিতে। ভ‚রাজনৈতিক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠায় ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বৈরথ চলছে ভারত ও চীনের মধ্যে। শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের মতো মালদ্বীপও নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিযোগিতায় নেমেছে ভারত-চীন। দ্বীপদেশটিতে বিনিয়োগে চীন ও সউদী আরব বিনিয়োগ করলেও ভারত বিনিয়োগ ছাড়াই দাদাগিরি ফলাচ্ছে।

ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ বতর্মানে ক্ষমতায়। তিনি ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ (সবার আগে ভারত) পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী। ফলে তার বিরুদ্ধে গত ২৩ মার্চ মালদ্বীপের পার্লামেন্ট এক জরুরি প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে দু’দিন বাদেই মালদ্বীপের রাজধানী মেল-এ বিরোধীদের পূর্বঘোষিত সভার অনুমতি বাতিল করা হয়। সভাটি ডেকেছিলেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রোগ্রেসিভ পার্টির নেতা আবদুল্লা ইয়ামিন। পার্লামেন্টে এই সভার বিরুদ্ধে জরুরি প্রস্তাব এনেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদের মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য আবদুল্লা জাবির। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, এই সভা হলে মালদ্বীপের নিরাপত্তাক্ষুণœ হবে। কারণ, সভার বিষয়বস্তু ছিল ‘ইন্ডিয়া হটাও’। গত দু’বছর ধরেই ‘ইন্ডিয়া হটাও’ আন্দোলন করছেন সরকারবিরোধীরা। তাদের অভিযোগ বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলিহ ভারতের কাছে মালদ্বীপকে বেচে দিয়েছে।
ভারতবিরোধী আন্দোলনের মুখে গত মার্চ মাসের শেষ দিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মালদ্বীপ সফর করেন। তিনি মালদ্বীপকে ভারতের অনুসারি হিসেবে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে তাতে আগুন আরো বেড়েছে। বিরোধীদের দাবি মালদ্বীপ থেকে ‘ভারতীয় সৈনিকদের’ বের করে দিতে হবে।

পাকিস্তানে রাজনীতিতে অচলাবস্থা : পাকিস্তানের রাজনীতিতে চলছে এখন টালমাটাল অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপিত হলে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিতে পাকিস্তানের বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ ২৭ মার্চ দেশটির সংসদে অনাস্থা ভোট আয়োজনের প্রস্তাব দেন ডেপুটি স্পিকার কাশিম খানকে। প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার ঘোষণা দেন স্পিকার ৩১ মার্চ এ বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনার দিন ধার্য করেন। কিন্তু নির্ধারিত দিন আলোচনা না করে দুদিন পিছিয়ে দেয়া হয়। অতপর গত ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাশিম খান সুরি। এতে ক্রিকেট খেলার মতোই অনিশ্চয়তায় পড়ে ইমরান খানের রাজনীতি। তিনি সংসদে ‘অনাস্থার মতো লজ্জাকনক’ পরিস্থিতিতে পড়তে চাননি। তাই ক্রিকেটের মহানায়ক ক্রিকেট খেলার মতোই সংসদে বিরোধী দলকে বোলআউট করতে প্রেসিডেন্টকে সংসদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভির। আর পুরো প্রক্রিয়াটিকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছেন বিরোধীরা। অতপর বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি