চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। পাকিস্তানভিত্তিক ফ্রন্টিয়ার পোস্ট পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফপিসিসিআই) ব্যবসায়ী প্যানেল (বিএমপি) সতর্ক করেছে যে, পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
এফপিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে যাওয়া, রুপি দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে পাকিস্তান অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে পড়েছে।
দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের দুটি আনুষ্ঠানিক বাজারে কীভাবে গ্রিনব্যাকের মূল্যায়ন করা হচ্ছে তার পার্থক্য তুলে ধরে আন্তঃব্যাংক এবং খোলা-বাজারে মার্কিন ডলারের হারের মধ্যে ব্যবধান ২৪ রুপির বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি লেনদেনের জন্য গ্রাহকদের মার্কিন ডলারে ৫০-৬০ রুপি নেওয়া হচ্ছে।
মিয়া আঞ্জুম নিসারের মতে, পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এলসি খোলার ক্ষেত্রে খাত বেছে নিতে বাধ্য করছে, এমনকি স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতও। কারণ এটি তার স্বাভাবিক ব্যাংকিং চক্র অনুসারে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে অক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদরা পাকিস্তানে একটি আসন্ন মানবিক ও স্বাস্থ্যসেবা সংকটের পূর্বাভাস দিচ্ছেন, যদি না স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং অন্য সংস্থাগুলো দুর্যোগ এড়াতে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়।
সম্প্রতি দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের নাগরিকদের শাসকদের ব্যর্থ নীতির খেসারত বহন করতে বাকি আছে। যার ফলশ্রুতিতে ঐতিহাসিক মুদ্রাস্ফীতি, পেট্রোলিয়ামের দাম বৃদ্ধি এবং রুপির মূল্যহ্রাস হয়েছে। সেই সঙ্গে অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে আছে আসন্ন দেউলিয়া হওয়ার সতর্কতা।
পাকিস্তানে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে শপিংমল এবং অন্যান্য পাবলিক প্লেস বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে আটকে আছে, যেখান থেকে উত্তরণের পথ দেখা যাচ্ছে না। পাকিস্তানে আটা, চিনি ও ঘি-এর মতো দৈনন্দিন জিনিসের দাম বেড়েছে। প্রতিদিনই দাম লাফিয়ে বাড়ছে।
পাকিস্তানের সামষ্টিক অর্থনীতির সংকটের প্রভাবে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, লাহোরে ১৫ কেজি আটার ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০ রুপিতে। গত দুই সপ্তাহে ১৫ কেজি আটার বস্তার দাম বেড়েছে ৩০০ রুপি। ইতিহাসে এই প্রথম পাকিস্তানে ২০ কেজি আটার বস্তার দাম হয়েছে ৩ হাজার রুপি। করাচি শহরে ১ কেজি আটার দাম ১৫০ রুপি। গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে ২০ কেজি আটার বস্তার দাম বেড়েছে ৪০০ রুপি। হায়দরাবাদে ২০ কেজি আটার বস্তার দাম ২ হাজার ৮৮০ রুপি আর পেশোয়ারে ২ হাজার ৬৫০ রুপি।