এ বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে দুটি সিনেমা। একটি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ এবং আরেকটি ‘পরাণ’। নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউমের ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেলেও ছবিটি মুক্তির সময় নির্মাতাকে নানা প্রতিকূলতা ও বাঁধা পার করতে হয়েছে। গত বছরের ৪ নভেম্বর, মাত্র একটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি।
সিনেমা মুক্তির তারিখ নিশ্চিত থাকলেও সিনেমাটি মুক্তির জন্য প্রেক্ষাগৃহ পাননি এই নির্মাতা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে নির্মাতা আনন্দের সাথে জানান সেই আক্ষেপ ও ছবিটিকে নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের অবহেলার কথা।
নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার ছবিটি সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছে তাতে আমি আনন্দিত, গর্বিত। এই পুরস্কার শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির না, আমার চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রাপ্তি এটি৷ এতো বছরের ধৈর্য্য ও পরিশ্রমের ফল পেয়েছি।
এখনো মনে পড়ে ছবিটা নিয়ে কতো চড়াই উৎরাই, নানা ধরনের প্রতিকূলতা পার করতে হয়েছে। ছবির শুটিং থেকে শুরু করে মুক্তির সময় কতো বাঁধা, বিপত্তি পার করতে হয়েছে।
ছবির নাম ও পোস্টার দেখে প্রেক্ষাগৃহের মালিক ফিরিয়ে দিয়েছিল ছবিটি। মুক্তির তারিখ পেলেও প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে পড়েছিলেন অনিশ্চয়তার মুখে।
তা জানিয়ে নির্মাতা বলেন, ছবিটা নিয়ে লড়াইয়ের মধ্যে ছিলাম। মুক্তির তারিখ পেলেও হল পাইনি, চলচ্চিত্র মুক্তির জন্য পরিবেশক সমিতি থেকে অনুমতি নিতে হয়। মুক্তির আবেদন করার পরে, পরিবেশক সমিতি থেকে মুক্তির তারিখ দিয়ে দেয়। কিন্তু কিন্তু ছবিটা কোথায় মুক্তি পাবে, এ দায় দায়িত্ব কেউ নিতে চায়নি। সিনেমা হল মালিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি।
সিনেমার নাম দেখে, পোস্টার দেখে, কোনো চলচ্চিত্র তারকা নেই, হিট গান ছিল না বলে তারা ছবিটা ফিরিয়ে দিয়েছে। মুখের ওপর তারা জানিয়ে দিয়েছে এটা তারা চালাতে পারবে না। সিনেপ্লেক্স থেকেও ছবিটা মুক্তি দিতে চায়নি। অবশেষে অনেক অনুরোধ করে মাত্র ৬ দিনের জন্য সিনেপ্লেক্সে চালাতে পেরেছি।
‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটি ছিল নির্মাতার ২৫ বছরের স্বপ্ন এবং পাঁচ বছরের সাধনার ফসল। সব পরিশ্রমের এতো সুন্দর উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত নির্মাতা। তিনি বলেন, সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শক, সমালোচক থেকে শুরু করে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি এবং আজকের এই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সব মিলিয়ে আমার এতো বছরের পরিশ্রমের অনেক সুন্দর উপহার পেয়েছি।
তবে এ ধরনের সিনেমা মুক্তি দিতে যে প্রতিকূলতা থাকে তা কাটিয়ে উঠা উচিত বলে মনে করেন এই নির্মাতা। নির্মাতার মতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা, সংস্কৃতিতে সুস্থ ধারার যে সাংস্কৃতিক আয়োজন তার অধিকাংশে ব্যাহত হচ্ছে। বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমা না হলে সেসব সিনেমা মুক্তি দিতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শুধু মুক্তি নয়, সিনেমা নির্মাণ ও শুটিং থেকে শুরু করে ভারী যন্ত্রের অভাব। এই প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে উঠা উচিত।
হাওরের সংগ্রামের গল্পে নির্মিত সিনেমা ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে ওড়া’। ভাটি অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষের জীবনের সংগ্রাম, হাওরের জল ও কাদায় মিশে থাকা মানুষের দুর্দশার গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। এতে অভিনয় করেছেন জয়িতা মহলানবিশ, উজ্জ্বল কবির হিমু, সুমি ইসলাম, সামিয়া আকতার বৃষ্টি, বাদল শহীদ, মাহমুদ আলম ও আবুল কালাম আজাদ। নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম নিজেই প্রযোজনা করেছেন ছবিটি।
ঢাকা অফিস