1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
লালমনিরহাটে বাড়ছে তামাক চাষ | Bastob Chitro24
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ অপরাহ্ন

লালমনিরহাটে বাড়ছে তামাক চাষ

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২

দিন দিন বাড়ছে বিষবৃক্ষ তামাকের চাষ। বিনামূল্যে বীজ, ঋণের সার ও পানি সেচের জন্য নগদ অর্থ দেয়ার পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলো ভালো দামে তামাক কেনার নিশ্চয়তা দেয়ায় নিজের ও পরিবারে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর জেনেও লাভের আশায় বিষবৃক্ষ তামাকের চারা বুনছেন লালমনিরহাটের চাষিরা।

এক সময়ে লালমনিরহাটের কৃষকদের ধান, গম, সরিষা, ভুট্টা, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি চাষের জন্য সুনাম ছিল। কিন্তু এখন মাঠের পর মাঠ শুধু তামাকের ক্ষেত চোখ পড়ে। যত দিন যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে তামাকের চাষ। কৃষকরা অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করলেও সেসব সবজি বাজারজাতে নানা সমস্যা, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং কৃষি বিভাগের উদাসীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো এ অঞ্চলের কৃষকদের লোভনীয় আশ্বাস দিয়ে তাদের তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য করছেন। আবার কৃষকরাও অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র মতে, লালমনিরহাটে গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯ হাজার ১০০ হেক্টর, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯ হাজার ২২০ হেক্টর এবং ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে।

তবে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালিয়েন্সের (আত্মা) দাবি, কৃষি বিভাগ তামাক চাষে যে পরিমাণ জমি রেকর্ড দেখান বাস্তবে এর দ্বিগুণ জমিতে তামাক চাষ হয়ে থাকে। কৃষি বিভাগ থেকে তেমন কোনো সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকায় কৃষকরা তামাক চাষ থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না। বরং প্রতিবছর নতুন নতুন চাষি তামাক চাষে যুক্ত হচ্ছেন। এছাড়া জাপান, আকিজ, নাসির, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোসহ বেশ কিছু তামাক কোম্পানি লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় নিজস্ব বড় বড় ক্রয় কেন্দ্র ও গুদাম করেছে। সব থেকে বেশি তামাক চাষ হয় আদিতমারী উপজেলায়। যা প্রতিনিয়তই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

তামাক চাষের বিষয়ে সদর উপজেলার কৃষক হান্নান বলেন, বর্তমানে জমিতে যে ফসল ফলানো হয় তার সঠিক দাম পাওয়া যায় না। সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে ফসল ফলাতে যে খরচ হয়, সেটাও অধিক সময় উঠে না। কিন্তু তামাক চাষ করলে সঠিক দাম পাওয়া যায়। এতে সংসারের উন্নতি হয়। আর অন্যান্য ফসল আবাদ করলে পুঁজি হারিয়ে যায়।

একই উপজেলার আতাউর রহমান বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা চাই না। তামাক চাষ করলে কোম্পানির লোকজন বীজ, সার, কীটনাশকসহ নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে। তাই আমাদের জন্য তামাক চাষ করাই ভালো।

আদিতমারী উপজেলার তামাক চাষি আনোয়ার জানান, তামাক চাষ করলে আমাদের ফসল নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। তামাক কোম্পানির লোকজন নিয়মিত মাঠে এসে ফলন ভালো হওয়ার পরামর্শ দেন। ফলনে কোনো রোগবালাই দেখা দিলে সার ও কীটনাশক দিয়ে সহযোগিতা করেন।

একই এলাকার কৃষক সামিউল বলেন, আগে জমিতে ধান, আলু, গম চাষ করতাম। কিন্তু বাজারজাতের অভাবে দাম ভালো পেতাম না। তামাক চাষ করলে ফসল মাঠে থাকতেই তামাক কোম্পানির লোকজন তার কিনে নেয়ার নিশ্চয়তা দেন। তাই অন্যান্য ফসল চাষ না করে এখন তামাক চাষ করি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তামাক কোম্পানির এক প্রতিনিধি বলেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তামাক চাষিদের সব সময় খোঁজ রাখি আমরা। মাঠের সমস্যা থেকে শুধু করে বাড়ির কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা হলেও ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এছাড়া তামাক বিক্রিয়ের নিশ্চয়তা ও নানা রকম পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করি।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু কৃষকরা অধিক ফলন ও মুনাফার আশায় তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তবুও তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তামাক শুধু ক্ষতিকরই নয়; মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিও। এজন্য আমরা কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করছি। তামাকের পরিবর্তে জেলার ব্রান্ডিং ফসল ভুট্টা আবাদে পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি কৃষকদের কৃষি পুনর্বাসনের আওতায় নানা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি