রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য টান পড়ছে দেশের রিজার্ভে। ধ্বংস হচ্ছে অর্থনীতি। সমালোচিত এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনেক আগে বন্ধ করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বন্ধ করা যাচ্ছে না। অর্থনীতির ওপর বোঝা তৈরি করার পরও বারবার বাড়ানো হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ। উল্টো নতুন করে আরও চারটি তেল ও পাঁচটি এইচএফওভিত্তিক ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অথচ বেসরকারি এসব কেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার জন্য সরকারকে অনেক বেশি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ না নিলেও দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কারণে দেশের রাজস্বের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে দেশ আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ বিদ্যুৎ না নিয়েও কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের সিস্টেম বাতিল করা উচিত বলে তাঁরা মন্তব্য করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্যে, দেশে বর্তমানে মোট ১৮টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি কেন্দ্র ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ নীতিতে চলছে। বাকি আটটি আগের নিয়মেই পরিচালিত হচ্ছে। অর্থাৎ এদের ক্যাপাসিটি চার্জসহ যাবতীয় খরচ দিতে হচ্ছে।
ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ ১২ বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। সাধারণ খাতে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের খরচ হয় ৭ টাকা। আর ভাড়াভিত্তিক এসব কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ১৭ টাকা। অর্থাৎ ১০ টাকা বেশি। স্বল্প মেয়াদের কথা বলেও এক যুগ ধরে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে বাড়তি দামে। জ্বালানির দাম বাড়ায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এমন অবস্থায় রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রেখে ব্যয় বাড়ানোকে অযৌক্তিক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, স্বল্প মেয়াদে সমাধান হিসেবে রেন্টাল কেন্দ্র চালু হলেও এগুলোর মেয়াদ বাড়ানো ঠিক হয়নি। এ কারণে বিদ্যুৎ খাতে ঘাটতি বেড়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য এ খাত দায়ী। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ক্যাপাসিটি চার্জ না দিলেও সেগুলো চালু রেখে জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে জনবল প্রয়োজন, এর খরচ সরকারকে দিতে হবে। বাকি যে আটটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, সেগুলোর মেয়াদ শেষ হলে এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা ভবিষ্যতে এ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে চাই।’
২০১৯-২০ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারের ব্যয় হয় ১৮ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২২টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের পকেটে গেছে ১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। ১৯টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মালিক বিদ্যুৎ না বেচেও পান ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২) বিদ্যুৎ না বেচেও ১২টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ৬৭৮ কোটি টাকা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, ২০২০ সালে কুইক রেন্টালের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এ খাতে সরকারের খরচ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের গড়ে ৭ থেকে ৮ টাকা খরচ হয়। কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্রভিত্তিক হিসাবের সঙ্গে কুইক রেন্টাল যুক্ত করা হলে কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে সরকারকে প্রতি কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ কিনতে হয় ৬০০ টাকায়। আর এমনটি বসিয়ে রেখে ভাড়া দেওয়ার কারণেই হচ্ছে, যার চাপ নিতে হচ্ছে দেশের মানুষকে।’ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো ক্ষেত্রেই আমাদের রেন্টালের প্রয়োজন নেই। আর এখন তো সরকার ভাড়াভিত্তিক এসব কেন্দ্র দিতেও দিচ্ছে না। সে কারণে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র রেখে আর কী লাভ- এমন প্রশ্ন মনে আসতেই পারে। আগে এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ দিতে পারলেও প্রয়োজন না থাকায় আমরা নিতে পারিনি। আর এখন যা আছে এর থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ আমাদের আছে। এতে দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ বিদ্যুৎ না নিয়েও এ কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। এর ফলে দেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বহু আগেই বন্ধ করে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সে কথা কে শোনে!’
নতুন যেসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বা হচ্ছে সেগুলোর প্রস্তাবে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ শর্তে মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এতে কোনো ক্যাপাসিটি পেমেন্ট (রেন্টাল ভাড়া) দিতে হবে না বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের। তবে প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে খাতসংশ্নিষ্টরা বলছেন, রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবচেয়ে সমালোচিত ক্যাপাসিটি পেমেন্টকে এবার ভিন্ন নামে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে পরিবর্তনশীল মেরামত ও পরিচালন ব্যয় (ভেরিয়েবল ওঅ্যান্ডএম) আগের চেয়ে ৬০-৭০ গুণ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়। এ প্রক্রিয়ার জন্য ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’। শুরুতে দুই বছরের জন্য এ আইন করা হলেও পরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়।
সম্প্রতি ভাড়াভিত্তিক এ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আরও পাঁচটির মেয়াদ বেড়েছে। এজন্য সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পাঁচটি দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আরও দুই বছর বিদ্যুৎ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৬ টাকা ৪০ পয়সায় কিনতে হবে। এর আগে তা কেনা হয়েছিল ১৭ টাকা ৫৩ পয়সায়। নতুন যে রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- যশোরের নওয়াপাড়ায় খুলনা পাওয়ার কোম্পানির ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোম্পানিটিকে দুই বছরে ৪৫৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা দিতে হতে পারে। খুলনার গোয়ালপাড়ায় খুলনা পাওয়ার কোম্পানির ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোম্পানিটিকে ১ হাজার ২৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা দিতে হতে পারে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোম্পানিটিকে ১ হাজার ১৪৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা দিতে হতে পারে। নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেডের ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোম্পানিটিকে ১ হাজার ১৪৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা দিতে হতে পারে। নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জে সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ারের ১০২ মেগাওয়াট ক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোম্পানিটিকে ১ হাজার ১৫৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা দিতে হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব কেন্দ্রের কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হবে না। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের যাতে লোকসান না হয় এজন্য অন্যান্য ব্যয়ের সঙ্গে বিনিয়োগ করা অর্থ হিসাব করে একটি নির্দিষ্ট হারে ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও উদ্যোক্তারা এ অর্থ পান। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মেয়াদ কম থাকে বলে ক্যাপাসিটি চার্জও বেশি হয়।
এদিকে মেয়াদ উত্তীর্ণের পরও দেশে আরও চারটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় এ বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। মেয়াদ বাড়তে যাওয়া কেন্দ্রগুলো হলো- পাওয়ার প্যাক মুতিয়ারার কেরানীগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, অ্যাকর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের চট্টগ্রামের জুলদায় ১০০ মেগাওয়াট, সিনহা পাওয়ারের চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা ৫০ মেগাওয়াট এবং নর্দান পাওয়ারের রাজশাহীর কাটাখালী ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পাঁচ বছর মেয়াদি এ চার কেন্দ্র ২০১০ সালে উৎপাদনে আসে। এরপর তাদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উদ্যোক্তারা পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে চারটি কেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। একই সঙ্গে আগে এ বেসরকারি কেন্দ্রগুলো যে ক্যাপাসিটি চার্জ পেত, তা নতুন প্রস্তাবে বাতিল করা হয়েছে। তবে ক্যাপাসিটি পেমেন্টের পরিবর্তে মেরামত ও পরিচালন ব্যয় বাবদ খরচ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে, যা ক্যাপাসিটি পেমেন্টের হারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ চারটি কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং বর্ধিত মেয়াদের মূল্যহার অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আগামী সভায় এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। এর আগে মার্চে ফার্নেস তেলভিত্তিক (এইচএফও) আরও পাঁচটি কেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়েছিল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। চার কেন্দ্রের রেন্টাল চার্জ ছিল প্রতি মাসে কিলোওয়াটপ্রতি ১৩ ডলার। ফার্নেস অয়েলের দাম ছিল ৪২ টাকা লিটার। নতুন প্রস্তাবে রেন্টাল চার্জ থাকছে না। এর বদলে ফিল্ড অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের জন্য কিলোওয়াট ঘণ্টায় ৩ টাকা ধরা হয়েছে। এর সঙ্গে পরিবর্তনশীল অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স খরচের জন্য আরও ২৫ পয়সা ধরা হয়েছে, যা আগে ছিল দশমিক ৫ পয়সা। এর সঙ্গে প্রতি কিলোওয়াটে জ্বালানি খরচ গড়ে ১৩ টাকা ৭০ পয়সা যুক্ত হবে। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবির খরচ হবে প্রায় ১৭ টাকা।
গত বছর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নামে পরিচিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে। সংসদীয় কমিটিকে দেওয়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু হলে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মেয়াদ পূর্তিতে অবসরে যাবে। সংসদীয় কমিটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর না বাড়িয়ে দ্রুততম সময়ে সেগুলোকে অবসরে পাঠানোর সুপারিশ করে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কারণে দেশের রাজস্বের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের সিস্টেম বাতিল করা উচিত। ২০১০ সালে এ ব্যবস্থা জরুরি লজিকে পড়েছিল। কারণ সে সময় বিদ্যুৎ অনেক কম ছিল। সেটি ছিল স্বল্পমেয়াদি একটি ব্যবস্থাপনা। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এক দশক ধরে এ কেন্দ্রগুলো চলছে। আবার এগুলো চালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে এগুলো বাতিল করা উচিত। এগুলো বাদ দিলে দেশের প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হবে। এজন্য প্রচুর ক্যাপাসিটি চার্জ সরকারকে দিতে হয়। মাসে এজন্য দেড় থেকে ২ হাজার কোটি টাকা চলে যায়। আর বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এজন্য খরচ হয়।