কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচের একটি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডসের ম্যাচটি। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পর এবার কোয়ার্টার ফাইনালেই দেখা হয়ে যাচ্ছে এই দুই দলের। এ বিশ্বকাপে দুই দলের জন্যই এই ম্যাচটি হতে চলেছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ। ইতিহাস-পরিসংখ্যান এ ক্ষেত্রে ডাচদের পক্ষে হলেও আর্জেন্টিনার পক্ষে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন লিওনেল মেসি।
বিশ্বকাপের মঞ্চে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডসের লড়াই সবসময় ছড়িয়েছে রোমাঞ্চ। এখন পর্যন্ত বিশ্বমঞ্চে পাঁচবার একে অন্যের মুখোমুখি হয়ে অরেঞ্জরা জয় পেয়েছে দুবার, দুবার হয়েছে ড্র। বাকি এক ম্যাচে জিতেছে আলবিসেলেস্তেরা। আর্জেন্টিনার জন্য সে একমাত্র জয়টি অবশ্য সুখস্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে অমলিন। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসকে ৩-১ গোলে হারিয়েই প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা।
নেদারল্যান্ড প্রথম জয়টা পেয়েছিল ১৯৭৪ বিশ্বকাপে। ৪-০ গোলে আলবিসেলেস্তেদের হারিয়েছিল ইয়োহান ক্রুইফের দল। দ্বিতীয় জয়টা ১৯৯৮ সালের কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ঘটনাবহুল ম্যাচে পাওয়া। বিশ্বকাপের অন্যতম ঘটনাবহুল সে ম্যাচে দুদলের দুই তারকা দেখেছিলেন লাল কার্ড। মাঠের লড়াইয়েও হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি। তাতে অন্তিম মুহূর্তে ডেনিশ বার্গক্যাম্পের জাদুকরি গোলে জয় পায় নেদারল্যান্ডস।
বিশ্বকাপে দুদলের শেষ দেখাটা আট বছর আগের। ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুদল। সে ম্যাচে নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সময়েও কেউ হারাতে পারেনি কাউকে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ফাইনালে তোলে আর্জেন্টিনাকে। টাইব্রেকারে জেতায় সে ম্যাচের ফল আদতে পরিসংখ্যানের খাতায় লেখা ড্র হিসেবেই।
গত বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হওয়া নেদারল্যান্ডস এবার বিশ্বকাপে ফিরেই উঠে গেছে কয়ার্টার ফাইনালে। এ গ্রুপে কাতার, ইকুয়েডর ও সেনেগালের সঙ্গে লড়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোয় জায়গা করে নিয়েছিল অরেঞ্জরা। শেষ ষোলোয় যুক্তরাষ্ট্রকেও হারিয়েছে ৩-১ গোলে। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার ম্যাচটা হবে এসব ম্যাচের চেয়ে আরও অনেকগুণ বেশি কঠিন।
নেদারল্যান্ডসের ডাগআউটে আছেন লুই ফন গালের মতো কিংবদন্তী কোচ। ২০১৪ বিশ্বকাপেও নেদারল্যান্ডসের কোচ তিনিই ছিলেন। সেই সেমিফাইনালে মেসির বিপক্ষে তার পরিকল্পনা দারুণ কাজে দিয়েছিল। গোটা ম্যাচে মেসি ছিলেন তার ছায়া হয়ে। ১২০ মিনিটের খেলায় নেদারল্যান্ডসের গোলে মেসি মাত্র একটি শট নিতে পেরেছিলেন।
সে ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও অরেঞ্জদের পরিকল্পনা থাকছে মেসিকে যতটা নিচে পারা যায় আটকে রাখা। আক্রমণে মেসি ওপরে ওঠার সুযোগ পেলেই হজম করতে হতে পারে গোল। তাই কড়া মার্কিংয়ে মেসিকে আটকে রাখার চেষ্টা করা হবে নিচের দিকে।
২০১৪ বিশ্বকাপে মেসিকে মার্ক করার দায়িত্বে ছিলেন নাইজেল ডি জং। কাজটা সেদিন তিনি খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছিলেন তা বলাই যায়। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) এ দায়িত্বটা পেতে পারেন আটালান্টার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মার্টেন ডি রুন।
শুধু আটকে রাখলেই তো হবে না, মেসির একটা ডিফেন্সচেরা পাসেই ম্যাচ ছিটকে যেতে পারে ম্যাচ। তাই বন্ধ করে দেওয়া হবে পাসিং লাইনগুলো। নিচের দিকেই মেসির পাসগুলো সব নষ্ট করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে মেসি যেন বল নিয়ে হুট করে টান দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে সে জন্য সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে রক্ষণভাগ। এই দায়িত্বটা পাচ্ছেন নেদারল্যান্ডসের সেরা ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইক। ২০১৪ সালে যে দায়িত্বটা পালন করেছিলেন রন ভ্লার। তিনি ট্যাকলে ট্যাকলে মেসির জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছিলেন। দায়িত্বটা এবার ভ্যান ডাইকের কাঁধে।
তবে এতকিছুর পরও মেসিকে যে নিশ্চিত আটকে ফেলা যাবে, তাও নিশ্চিত নয়। জাদুকরি মেসির একটি খারাপ দিন না এলে আদতে তাকে আটকে রাখা অসম্ভব। ডাচরা তেমনউই একটা খারাপ দিনের প্রার্থনায়।