ভাসানচরের রোহিঙ্গা আশ্রয়ণ কেন্দ্রকে ঘিরে দেশি-বিদেশি পাচারকারীরা সক্রিয় রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় দুই শতাধিক রোহিঙ্গা পালালেও পরবর্তীতে আবার বেশ কিছু পরিবার ভাসানচর আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ফিরে আসে। সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান সত্বেও রোহিঙ্গাদের পলায়নে খোদ প্রশাসনও বিব্রত। অপরদিকে রোহিঙ্গাদের পলায়ন রোধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জেলার সচেতনমহল।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি রয়ে গেছে এমন কয়েকজন রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে পালিয়ে গেছে। আবার দেশি-বিদেশি সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের যোগসাজসে রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে। এ কাজে পাচারকারীদের একাধিক নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের জড়ো করে ট্রলার যোগে মালয়েশিয়া পাচারের খবরও শোনা যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গা পাচারে ভাসানচরে একটি চক্র জড়িত রয়েছে। এছাড়া হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জে পাচারকারীদের এজেন্ট রয়েছে। এরা ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গাদের পলায়নে সহযোগীতা করছে।
জানা যায়, গত দুই বছরে ভাসানচর আশ্রয়ণ কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই শতাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে যায়। এর মধ্যে নোয়াখালীর সূবর্ণচর, হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় জনগণ পলায়নরত ৫৫ জন নারী-পুরুষ-শিশুকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে ভুল বুঝতে পেরে আবার স্বেচ্ছায় ভাসানচরে ফিরে আসে বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার। এছাড়া ২০২১ সালের ১৪ আগস্ট রাতে ভাসানচর থেকে ৪১ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষ পালানোর সময় সাগরে প্রবল স্রোতে ট্রলারটি ডুবে যায়। এসময় সমুদ্রে মাছ ধরার অন্য ট্রলারের জেলেরা ১৪ জনকে উদ্ধার করলেও অবশিষ্ট ২৭ জন জোয়ারে ভেসে যায়।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হাতিয়ার উপজেলা মূল ভূখণ্ডের ২০ কিলোমিটার পূর্বে বিশাল আয়তনের ভাসানচরে ১৩ হাজার একর জমির উপর রোহিঙ্গা আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মিত হয়। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ রোহিঙ্গার নিরাপদ বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয় ১২০টি গুচ্ছগ্রামসহ যাবতীয় অবকাঠামো। দেশি-বিদেশি দাতাগোষ্ঠী, পর্যবেক্ষক ও প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার প্রথম দলটি ভাসানচর আগমন করে। বর্তমানে ভাসানচরে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
উল্লেখ্য, ভাসানচরে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে রয়েছে আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ বাহিনী। হাতিয়া চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ভাসানচর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সী-ট্রাক। নৌপথ ও দায়িত্বে থাকা সরকারের বিভিন্ন বিভাগের নজরদারির কারণে বাইরে থেকে যে কেউ ভাসানচরে সহজে প্রবেশ করতে পারেনা। কিন্তু গভীর সমূদ্রে মাছধরা ট্রলারের জেলেরা ভাসানচরের বিভিন্ন ঘাটে যাত্রা বিরতি করে। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ভাসানচর থেকে মাছ ধরার ট্রলারে রোহিঙ্গারা পালিয়ে থাকে। বিশেষ করে ভাসানচর থেকে সমুদ্র পথে চট্টগ্রামের দূরত্ব বেশি থাকার কারণে হাতিয়া চেয়ারম্যান ঘাট, হরণী-চানন্দি ইউনিয়ন এবং সন্ধীপ চ্যানেল দিয়ে চর এলাহীর ভাবনী নদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ রুট ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ইনকিলাবকে জানায়, যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্বেও ভাসানচর থেকে কিছু রোহিঙ্গা পালিয়েছে। অনেকে পরে ভুল বুঝতে পেরে আবার আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরেও এসেছে। পালানো রোধে প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভাসানচরের আশপাশের নৌরুটে চলাচলকারী মাছধরার ট্রলারগুলোর গতিবিধি ওপর নজরদারি করা হবে। ভবিষ্যতে ভাসানচর থেকে পালানো রোধকল্পে প্রশাসনের উদ্যোগে সর্বাত্নক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।