1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
বৈদেশিক ঋণ শোধে ব্যয় ২০৬৪০ কোটি টাকা | Bastob Chitro24
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন

বৈদেশিক ঋণ শোধে ব্যয় ২০৬৪০ কোটি টাকা

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন

চলতি অর্থবছরে সরকারকে সুদসহ বৈদেশিক ঋণ বাবদ ২০ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এরমধ্যে শুধু সুদ খাতেই ব্যয় হবে ৬ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। বাকি ১৪ হাজার ৫১ কোটি টাকা যাবে ঋণ খাতে। তবে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের এই চিত্র অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলংকা ও রাজনৈতিক বিপর্যস্ত পাকিস্তানের তুলনায় এখন পর্যন্ত অনেকটা কম।

একই বছরে বৈদেশিক ঋণ বাবদ শ্রীলংকাকে গুনতে হবে ৭৩ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের চেয়ে ৫৩ হাজার ৩২০ কোটি টাকা বেশি। পাশাপাশি পাকিস্তানকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। এটিও বাংলাদেশের চেয়ে ৮৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের অতীত রের্কড ভালো। কখনো খেলাপি হয়নি। তবে মনে রাখতে হবে, কয়েক বছর আগেও শ্রীলংকা ভালো অবস্থানে ছিল। খুব দ্রুত এর অবনতি হয়েছে। ঋণ পরিশোধে দেশটি এখন খেলাপি হয়ে গেছে। এর থেকে ভবিষ্যতের শিক্ষা হচ্ছে ঋণ ও অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে পরিস্থিতি দ্রুত পালটে যেতে পারে। এ জন্য ঋণ ও অন্যান্য ব্যয় ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দ্রুত পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।’

শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর বৈদেশিক ঋণ নিয়ে সর্তক অবস্থানে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে সরকার এ পর্যন্ত কত বিদেশি ঋণ নিয়েছে, ঋণের বিপরীতে সুদের হার কত, বছরে কত টাকা শোধ করতে হবে এবং ঋণ জিডিপির অনুপাতসহ ঋণের সবকিছু বিশ্লেষণ করে অর্থ মন্ত্রণালয় সবিস্তারে তুলনামূলক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে শুধু বাংলাদেশ নয়, এর সঙ্গে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ঋণ ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের তুলনায় শক্ত অবস্থানে আছে।

এছাড়া বাংলাদেশের জনগণের ওপর মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণও তুলনামূলক কম। বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে এ পর্যন্ত যে ঋণ নেওয়া হয়েছে তার গড় সুদ হার শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের বেশি। এক্ষেত্রে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। অপরদিকে রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ উল্লিখিত দুটি দেশের চেয়েও বাংলাদেশের দ্বিগুণ অবস্থানে আছে। তবে ঋণ যদি জিডিপির তুলনায় বেশি হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি বিপদ আসতে পারে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ঋণ জিডিপির অনুপাত বাংলাদেশের কম।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক ঋণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে এ বছর বেশি ব্যয় হচ্ছে। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র খাতে সুদ বেশি যাচ্ছে। এ বছর সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর পরও সরকার এ খাত থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে। যে কারণে সুদও বেড়েছে। সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ চলতি অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৬২ হাজার কোটি টাকা। এরফলে এটি এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি বেড়েছে ভর্তুকি খাতে ব্যয়ও। ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধে ব্যয় এক ধরনের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। তবে বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কম সুদে নিতে হবে। বড় মেগা প্রকল্পে নেওয়ার আগে এর অর্থায়ন কোথা থেকে কিভাবে হবে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি ঋণ নির্ভরতাও কমানোর চেষ্টা থাকতে হবে।’

বিদেশি ঋণ নিয়ে শ্রীলংকার অর্থনীতি বিপর্যয়ের কারণে সম্প্রতি বিভিন্ন মহলে বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থান কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মেগা প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রকল্পের অর্থায়ন কোথা থেকে হবে এসব বুঝে ঋণ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। একইভাবে বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নিজেই গণভবনে অর্থমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বৈদেশিক ঋণে বাংলাদেশ ঝুঁকি সীমার নিচে আছে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের তুলনায় ২৯ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণ নেওয়া হয় ৬৮ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা।

এছাড়া এ পর্যন্ত বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে জিডিপির ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ আমাদের জিডিপির আকার (২০২০-২১) ৩৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থাৎ ৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এই ঋণের বিপরীতে চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একই বছরে শ্রীলংকাকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশের তুলনায় আরও বেশি। শ্রীলংকার অর্থনীতির অবস্থা ভালো থাকার সময় যে বিদেশি ঋণ নিয়েছে সেটি তাদের দেশের মোট জিডিপির ৪১ শতাংশ। বর্তমান শ্রীলংকার জিডিপির আকার ৭ লাখ ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর ৪১ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ ৯২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা শুধু তাদের বিদেশি ঋণের অঙ্ক।

যদিও দেশটি মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়েছে তারা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম। এরমধ্য দিয়ে শ্রীলংকা বৈদেশিক ঋণে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। দেশটি মোট বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে ৫ হাজার ১ কোটি মার্কিন ডলার।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি