বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম, অসংগতি নিয়ে কঠোর হচ্ছে সরকার। পাঠদানের অনুমতি পেলেও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু না করা, মামলায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকা, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নিয়ম মেনে না চলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করতে হবে দেশের ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে। এটি করতে না পারলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি। কমিশনের এক সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়ে ইউজিসি এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
এর আগে সাময়িক সনদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়েছিল ইউজিসি। চিঠিতে স্থানান্তর না হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে জবাব পাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরি যেতে না পারলে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে এমন আলটিমেটামের আওতায় থাকা ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস ও আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে হবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাসের বাইরে সরকার বা কমিশন অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যান্য ভবন বা ক্যাম্পাসগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরি না গেলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী জানুয়ারি থেকে সব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে। এ নির্দেশনাগুলো পালনে ব্যর্থ হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৩৫(৭) ধারা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ইউজিসি জানিয়েছে। এ ছাড়া ইউজিসি সূত্রে আরও জানা গেছে, ইবাইস ইউনিভার্সিটির অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে মামলাও রয়েছে। একইভাবে মামলা চলমান রয়েছে কুইন্স ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা ও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার কিছুই নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করেছে ইউজিসি। এ ছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার পর দীর্ঘ তিন থেকে চার বছরেও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেনি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অবগত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় রয়েছে, রাজশাহীর শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা অনিয়ম নিয়ে সরকারের অবস্থান প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে চাই না। তবে আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের নিয়ম মেনে চলুক। কারণ, নিয়ম মেনে না চললে সেখানে দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ থাকে। সামগ্রিকভাবে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।