টানা দুই জয়ে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। প্রথম দিনে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারানোর পর এবার বরিশালের বড় রানকে পাত্তাই দিল না মুশফিক বাহিনী। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে তুলে নিল ৬ উইকেটের জয়।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের চতুর্থ ম্যাচে মাঠে নামে ফরচুন বরিশাল ও সিলেট স্ট্রাইকার্স। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বরিশাল। সাকিবের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান করে বরিশাল।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় সিলেট। মেহেদী হাসান মিরাজের দ্বিতীয় বলে রানআউট হন কলিন অ্যাকারম্যান। তবে সে ধাক্কা ভালোভাবে সামাল দেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। দুজনে মিলে গড়েন ৬৭ বলে ১০১ রানের জুটি।
এদিন অবশ্য একাধিকবার প্রাণ পেয়েছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। বরিশালের ফিল্ডারদের কখনো ক্যাচ মিস, আবার কখনো বাজে ফিল্ডিংয়ের কল্যাণে আগ্রাসি সিলেটের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। উল্টো বোনাস হিসেবে সিলেটের স্কোরবোর্ডে যোগ হয়েছে রান।
দশম ওভারে শান্তর ক্যাচ ফেলে দেন ইফতেখার আহমেদ। সে সময় ৪৬ রানে ব্যাট করছিলেন শান্ত। দুই বল পরই জানাত মিস করেন ফিল্ডিং, সেটি হয় চার। বরিশালের এ রকমই হতশ্রী ফিল্ডিং দেখতে হয়েছে প্রায় পুরো ইনিংসে।
যদিও প্রাণ ফিরে পেয়ে বেশিদূর এগোতে পারেননি শান্ত। পরের ওভারেই সতীর্থ তৌহিদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। ৪০ বলে পাঁচটি চার ও একটি ছক্কা দিয়ে শান্ত করেন ৪৮ রান।
শান্তর পর ব্যাটে করতে আসেন জাকির হাসান। জাকির এসে রানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন সমানতালে। তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ১৭ বলে ৩৪ রানের জুটি গড়েন জাকির। তাতে জয়ের লক্ষ্য ধীরে ধীরে সহজ করে তোলে সিলেট।
বাজে ফিল্ডিংয়ের কল্যাণে ১৪তম ওভারের প্রথম বলে প্রাণ পান জাকির। সাকিবের করা বলটিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন জাকির। তবে সেটি ধরতে পারেননি ফিল্ডার খালেদ আহমেদ। আর প্রাণ পেয়ে চার ও ছক্কা মেরে বরিশালকে সমুচিত জবাব দেন জাকির।
এদিকে অপর প্রান্তে দলের জন্য লড়ে যাচ্ছিলেন তৌহিদ হৃদয়। এদিন তিনি ৩৪ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দলীয় ১৩৬ রানে করিম জানাতের বলে আউট হন তিনি।
তৌহিদের পর উইকেটে এসে আগ্রাসি ব্যাটিং করেন মুশফিকুর রহিম। জাকিরের সঙ্গে ১৭ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়ে সিলেটকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান এই উইকেটরক্ষক। দলীয় ১৭৪ রানে ১৮ বল থেকে ৪৩ করা জাকির আউট হলেও মুশফিক ছিলেন অপরাজিত। পরে থিসারা পেরেরার ৯ বলে ২০ রানে ভর করে ৬ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় সিলেট স্ট্রাইকার্স। মুশফিক করেন ১১ বলে ২৩ রান।
এর আগে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা সিলেটের এবং সাকিব আল হাসান বরিশালের অধিনায়ক হলেও মুখোমুখি লড়াইয়ে দুদলই ভিন্ন দলনেতা নিয়ে মাঠে নামে। সিলেটকে মুশফিক ও বরিশালকে নেতৃত্ব দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অধিনায়ক বদলের ম্যাচে টস জিতে এনামুল হক ও চতুরঙ্গ সিলভার ব্যাটে পাওয়ার প্লে-তে দারুণ সূচনা পায় বরিশাল।
ছয় ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৫৪ রান তোলে তারা। বরিশালের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ৬৭ রানের মাথায়। এ সময় মাশরাফীর বলে অ্যাকারম্যানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এনামুল। ২১ বলে ২৯ রান করেন তিনি। এনামুল ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফেরেন আরেক ওপেনার সিলভা। ২৫ বলে ৩৬ রান করেন লঙ্কান এ ক্রিকেটার। ওয়ানডাউনে নামা ইফতিখার আহমেদ খুব বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ১০ বলে ১৩ রান করে মাশরাফীর শিকার হন তিনি।
সাকিবকে যোগ্য সঙ্গ দেয়ার আগেই ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যদিও ১২ বলে ১৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস আসে তার ব্যাট থেকে। এক প্রান্তে সাকিব অবিচল থাকলেও বিদায় নেন হায়দার আলি। রেজাউর রহমানের বলে আউট হওয়া পাকিস্তানি ক্রিকেটার ৬ বলে করেন মাত্র ৩ রান।
সাকিব অর্ধশতক পূর্ণ করেন মাত্র ২৬ বলে। বরিশালের ইনিংসের মূল কারিগর সাকিব ১৯ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে থেকে করেন ৬৭ রান। তার ৩২ বলের ইনিংসটিতে আছে ৭টি চার ও ৪টি ছয়ের মার। বাকিদের মধ্যে করিম জানাত ১৭ ও মিরাজ ১ রান করেন। সিলেটের হয়ে তিন উইকেট নেন মাশরাফী। একটি করে উইকেট পান ইমাদ ওয়াসিম, রেজাউর ও থিসারা পেরেরা।
তবে সিলেটের সামনে সাকিবের এমন ঝোড়ো ইনিংস কাজে দেয়নি। তাতে অবশ্য হতাশই হতে হয়েছে এই অলরাউন্ডারকে।