অধিকাংশ যাত্রী ছাউনি দখল ও অকার্যকর, এক রুটে নগর পরিবহন ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি চলে
যানজটমুক্ত নগর উপহার দিতে ঢাকায় গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। পরিবহন সেবাটি ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত চালু হলেও এখন দেখা দিয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। একই রুটে নগর পরিবহনের সঙ্গে ব্যক্তি মালিকানাধীন অন্য পরিবহনও চলছে। একই সঙ্গে যাত্রী ছাউনির কোনোটা দখল, আবার কোনোটা থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করছে না। এ রুটে প্রাথমিকভাবে ১০০ পরিবহন দিয়ে যাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ৫০ বাস দিয়ে চলছে সেবা। তবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করলেও দোষারোপ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পরিবহন মালিক পক্ষকে। তারা বলছেন, চিঠি দিলেও রুট পারমিটবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে না পুলিশ। আর মালিক পক্ষ দিচ্ছে না বাস। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিটিসিএর ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বলেন, ঘাটারচর-কাঁচপুর সড়কে গত ছয় মাসে আমরা কিছু অভিযোগ পেয়েছি। সেটা সমাধানে কাজ করছি। এ রুটে চলা অন্য পরিবহনগুলোর মালিকদের বাস চালাতে নিষেধ করলেও তারা মানছেন না। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দিয়েছি। তারা মাঝে-মধ্যে অভিযান চালায়। যেদিন অভিযানে যায়, সেদিন তারা খবর পেয়ে রাস্তায় গাড়ি নামায় না। এ পর্যন্ত অনেক গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই রুটে আরও ৫০টি বাস নামানোর কথা থাকলেও ২০টি প্রস্তুত হয়েছে। যাত্রী ছাউনিগুলো নিয়ে কাজ চলছে। যেসব ছাউনি থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করে না সেগুলো বাদ দেওয়া হবে। জানা যায়, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান-মতিঝিল হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও কাঁচপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমটার পথে পরীক্ষামূলক বাস সার্ভিস চালু করে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। ১০০টি বাস দিয়ে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও বাস মালিকদের সাড়া না পেয়ে বিআরটিসির ডাবল ডেকারের ৩০ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ২০টি পরিবহন নিয়ে নগর পরিহনের যাত্রা শুরু হয়। এই ৫০টি বাস দিয়ে টেনেটুনে চলছে এই সেবাটি। এর মধ্যেও প্রতিদিন সব বাস চলে না। গড়ে প্রতিদিন এই রুটে বাস চলে ৩৫-৩৮টি। এ ছাড়া খুব অল্প সময়ে আশার আলো দেখা সেবাটির জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একই রুটে ব্যক্তি মালিকানাধীন অন্য কোম্পানির গণপরিবহন। এ রুটটির বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে বিদ্যমান ১৩টি রুটের ৩৮২টি বাস এখনো চলাচল করছে। ওই পরিবহনগুলো নগর পরিবহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হিমশিম খেতে হচ্ছে নতুন উদ্যোগটির। নগর পরিবহনের যাত্রী শামছুদ্দিন বলেন, আমি শনির আখড়ায় থাকি। প্রতিদিন নগর পরিবহনের বাসেই অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করি। নগর পরিবহনের সবকিছু ভালো হলেও একটু দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছায়। এর কারণ, অন্য বাস প্রতিযোগিতা করে চালায়, যত্রতত্র যাত্রী তোলে। কোনো নিয়ম মনে না। আর এই বাস সব নিয়ম মানে, যত্রতত্র যাত্রীও তোলে না। এতে সময় একটু বেশি লাগে। এখন যদি একই রুটে অন্য কোম্পানির বাসগুলো বন্ধ করে দেওয়া হতো তাহলে সবাই একই নিয়ম মানতে বাধ্য হতো।
যাত্রী ছাউনি : ঢাকা নগর পরিবহনের যাত্রী ওঠা-নামা করার জন্য ৪০টি যাত্রী ছাউনি করা হয়েছে। এগুলোর কোনোটি দখল হয়ে গেছে, আবার কোনোটির সামনের অংশ দখল, যাত্রী ওঠা-নামা করে না। সরেজমিন দেখা যায়, মোহাম্মদপুর বাস স্টপেজের জায়গা দখল করে বসানো হয়েছে অন্তত ১৫টি সবজির দোকান। বাস এসে দাগ দেওয়া নির্ধারিত স্টপেজের পরিবর্তে দাঁড়াতে হয় সড়কের মাঝখানে। ঝুঁঁকি নিয়ে বাসে উঠতে হয় যাত্রীদের। বসিলা রোডে যাত্রী ছাউনির সামনে নগর পরিবহনের স্টপেজের জায়গায় স্বাধীন পরিবহনের একটি বাস দাঁড়িয়ে আছে। নগর পরিবহনের বাসগুলো ওই বাসের পেছনে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। একটু সামনে গেলে বসিলা সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। সেখানে দুই পাশের কাউন্টারেই কোনো টিকিট বিক্রেতা নেই। স্টপেজ পুরোটাই দোহার অভিমুখী সিএনজিচালিত অটোরিকশার দখলে। ওই স্টপেজে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় সেখান থেকে কোনো যাত্রীও বাসে ওঠার সুযোগ নেই। শুধু নামানো হয়। ঘাটারচর থেকে প্রেস ক্লাব অভিমুখী স্টপেজ নেই। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, এক রুটে এত পরিবহন চললে সেটা কখনো ফলপ্রসূ হবে না। আমরা পরীক্ষামূলক চালু করে দেখিছি, সেখানে প্রশিক্ষিত জনবলেরও অভাব রয়েছে। একই সঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতির সমন্বয়েরও অভাব রয়েছে। বিআরটিসি বাস দিয়ে সেবা চালু করলেও এ পরিবহনের কার্যক্রম মানসম্মত নয়। তিনি আরও বলেন, পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বাদ দিয়ে আমরা সরাসরি কার্যক্রম শুরু করব। তা না হলে এই বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম সফল হবে না। পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে এর কোনো বিকল্প নেই।