কোভিড-১৯ এবং ভবিষ্যৎ সঙ্কটের সময় শহরাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশকে ৩০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। গতকাল রোববার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এ সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সংস্থাটির পক্ষে কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন এবং বাংলাদেশের পক্ষে ইআরডির সচিব শরিফা খান ঋণ চুক্তিতে সই করেন।
বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৪ দশমিক ৭০ টাকা ধরে)। বিশ্বব্যাংকের এ অর্থের মাধ্যমে শহরের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোভিড-১৯ মহামারি এবং ভবিষ্যৎ ধাক্কা মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
সংস্থাটি আরও জানায়, স্থানীয় সরকারের কোভিড-১৯ রেসপন্স এবং রিকভারি প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় হবে। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে শহরাঞ্চলসহ আটটি বিভাগের মোট ৩৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী উপকৃত হবেন। এটি মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ এবং রোগের প্রাদুর্ভাবসহ ভবিষ্যতের সঙ্কটগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে।
এছাড়া ৩২৯টি পৌরসভা এবং ১০টি সিটি করপোরেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, দুর্যোগ এবং ভবিষ্যতের রোগের প্রাদুর্ভাবের প্রশমন ও সতর্কতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নগর পরিষেবা এবং পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য এ প্রকল্প থেকে দ্বি-বার্ষিক তহবিল পাবে বাংলাদেশ।
বিশ্বব্যাংকের স্পেশাল ড্রয়িং রাইটসের (এসডিআর) মুদ্রায় এ ঋণ গ্রহণ করা হবে এবং পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তবে উত্তোলিত ঋণের ওপর বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ এবং ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে। অনুত্তোলিত অর্থের ওপর বার্ষিক সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি দেওয়ার বিধান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাংক কমিটমেন্ট ফি দেওয়ার বিষয়টি মওকুফ করে আসছে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। জনসংখ্যার প্রায় ৩৬ শতাংশ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলো মহামারি থেকে শহুরে দরিদ্রদের পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলাতে প্রস্তুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে প্রকল্পটি। এছাড়া প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে জলবায়ু-স্মার্ট নগরায়নের দিকে অগ্রসর হতে এবং ভবিষ্যতের ধাক্কায় স্থিতিস্থাপকতার জন্য প্রস্তুত করতে সঠিক ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান বলেন, দ্রুত এবং সক্রিয় পদক্ষেপের মাধ্যমে, বাংলাদেশ সরকার কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের এ কার্যক্রম প্রকল্পটির মাধ্যমে আরও সহায়তা করবে। এছাড়া শহুরে অঞ্চলগুলো ভবিষ্যতের যেকোনো ধাক্কা সামলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উন্নত পরিষেবা এবং অবকাঠামোর মাধ্যমে শহুরে দরিদ্রদের উপকৃত করবে।
অলৌকিক শিশুর পরিবারকে এক মাসের মধ্যে ৫ লাখ টাকা প্রদানের নির্দেশ
স্টাফ রিপোর্টার
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রসূতির পেট ফেটে জন্ম নেয়া ‘অলৌকিক শিশু’কে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানে সময় চেয়েছে ট্রাস্টি বোর্ড।এ প্রেক্ষিতে এক মাসের মধ্যে এই অর্থ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গতকাল রোববার বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন। এ সময় সরকারপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমাও শুনানিতে অংশ নেন।
এর আগে গত ১৯ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যুর সময় অলৌকিকভাবে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। এই শিশুকে দেখাশোনার জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এ কমিটি গঠন করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে নবজাতকের পরিবারকে আপাতত ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন আদালত। ১৫ দিনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য ট্রাস্টিবোর্ডকে এ অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়। পাশাপাশি শিশু ও তার পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না-এই মর্মে রুল জারি করেন। এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী এবং বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলা হয়।
সড়ক দুর্ঘটনায় একইসঙ্গে মা রত্না বেগম (৩২),পিতা-জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং বোন সানজিদার (৬) মৃত্যু হয়। তবে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর ১৮ বছর পর্যন্ত যাবতীয় খরচ রাষ্ট্রকে বহনের নির্দেশনা চেয়ে গত রিট করেন অ্যাডভোকেট কানিজ ফাতেমা তুনাজ্জিনা। তার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন।