1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
নগরেও লাখো মানুষ পানিবন্দি | Bastob Chitro24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন

নগরেও লাখো মানুষ পানিবন্দি

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৮ মে, ২০২২

সিলেটের অর্ধেক এলাকা পানির নিচে

১৯৮৮ ও ২০০৪ সাল। ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল সিলেট। এবারো তেমন বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উজানের ঢলে ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে সিলেট জেলার প্রায় অর্ধেক এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। সিলেট নগরেও ঢুকে গেছে পানি। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। উপ-শহরসহ কয়েকটি এলাকার মানুষ ঘরবন্দি। প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্টান তলিয়ে গেছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পানি। উজানের ঢল না থামলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- কুশিয়ারা নদীর শেরপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ বাদে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সবক’টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢল ও সিলেটে ভারী বর্ষণ হওয়ার কারণে পানি বাড়ছে। এতে করে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে- সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রবল স্রোতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ডাইক বহু স্থানে উপচে পানি প্রবেশ করেছে। সুরমার সিলেট, কানাইঘাটসহ কয়েকটি এলাকা, কুশিয়ারা অমলসীদ, সারিসহ কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার ১ থেকে ২ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট নগরে বন্যার আঘাত হেনেছিলো রোববার। শহরবাসী ঘুমে থাকতে থাকতেই তলিয়ে যায় নগরীর সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকা। গত তিনদিনে পানি বেড়েছে প্রায় দুই ফুট। সিলেট নগরীর উপ-শহর এলাকার পুরোটাই এখন পানি নিচে। প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সুবহানীঘাট, মীরাবাজার পর্যন্ত বন্যার পানিতে টইটম্বুর। পানির নিচে তলিয়ে গেছে হাজারো বাড়িঘর। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। নগরের ঘাষিটুলা, বেতেরবাজার, কানাইশাইল এলাকাও পানির নিচে। এসব এলাকায়ও কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে নগরের দক্ষিণ সুরমার। তিনটি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকা সুরমা উপচে পানি ঢুকেছে। কুছাই পশ্চিম ভাগ এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- কুছাই এলাকায় সুরমার ডাইক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় ডাইক ভেঙে যেতে পারে। এতে কমপক্ষে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। গতকাল দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কুছাই এলাকার সুরমার ডাইক পরিদর্শন করেছেন। ডাইক রক্ষা করতে এরই মধ্যে ৪ হাজার বালির বস্তা দেয়া হচ্ছে। নগরে পানি উঠে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে করে মানুষের মধ্যে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। কদমতলী এলাকার নদী তীরবর্তী এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে শতাধিক বাড়িঘর। এখন বিভাগীয় অফিস সংলগ্ন সুরমার ডাইক পাহারা দিচ্ছে স্থানীয় লোকজন। তারা জানিয়েছেন- সুরমা ডাইক ভেঙে গেলে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে করে মানুষের মধ্যে হাহাকার দেখা দেবে বলে জানান তারা। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন- সিলেট নগরীতে ইতিমধ্যে ১৫টি ফ্লাড সেন্টার খোলা হয়েছে। এসব ফ্লাড সেন্টারে ইতিমধ্যে ১২০০ বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের ফুড অফিসার রুহুল আলমকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল বিকালে তিনি এসব ফ্লাড সেন্টারে ১২৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ১৩টি উপজেলার প্রায় অর্ধেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জের পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রকৃতি লেখক আব্দুল হাই আল হাদী জানিয়েছেন- জৈন্তাপুরকে অবিলম্বে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা দেয়া প্রয়োজন। কারণ- উজানের ঢলে জৈন্তাপুরের দুই তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে উপজেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় মানুষ অনাহার অর্ধাহারে বসবাস করছেন। জৈন্তিয়া কেন্দ্রীয় সাংবাদিক পরিষদের সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান ডালিম জানিয়েছেন- উজানের ঢলের কারণে পানি বাড়ছে। অনেক মানুষ পানিবন্দি। তাদের উদ্ধার করে দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। তাদের খাবার ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকেই তিনদিনে না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাদের চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। পশুপ্রাণীকেও আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানসহ প্রবাসী ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কানাইঘাট সদরে এখন কোমরপানি। ডাইক উপচে পানি ঢুকছে নতুন নতুন এলাকায়। এ উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জকিগঞ্জ এলাকার নদীর তীরবর্তী এলাকার শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এসব এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। জেলায় স্থানীয়ভাবে শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণের কাজ চলছে। যেসব এলাকায় মানুষ পানিবন্দি আছে তাদের উদ্ধারে সবাই কাজ করছেন বলে জানিয়ে কর্মকর্তারা। এদিকে- সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বন্যা দুর্গত এলাকায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা দলীয় নেতাকর্মীদের বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। গতকাল শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি দলীয় নেতাকর্মীদের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন- বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় সবসময় যুবলীগ পাশে থাকবে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি