পুরান ঢাকার ভয়াবহ নিমতলী ট্র্যাজেডির এক যুগ আজ। ২০১০ সালের এ দিনে রাসায়নিক গুদাম থেকে সূত্রপাত হওয়া আগুনে পুড়ে মারা যান ১২৪ জন, আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ। ওই দিনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় ২৩টি বসতবাড়ি, দোকানপাট ও কারখানা। দুঃসহ সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেন নি নিমতলীর বাসিন্দারা।
গতকাল শুক্রবার নিমতলীতে গিয়ে দেখা যায়, নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সকালে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এছাড়া শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। নিহতদের শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন স্থানীয়রাও।
অন্যদিকে স্বজনহারা মানুষদের এখনো সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায়। দুঃসহ সেই স্মৃতির কথা জানিয়ে মো. রিপন নামের একজন ব্যবসায়ী ইনকিলাবকে বলেন, আমার পরিবার ও আত্মীয় মিলে মোট ছয়জন সেদিন পুড়ে মারা যায়। আমার মায়ের লাশ প্রথমে পাওয়া যায়নি। অনেক পরে পেয়েছি। সেদিন মায়ের সঙ্গে কথা বলে বাইরে গিয়েছিলাম মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতে। পরে বাসায় এসে দেখি আগুন দাউদাউ করছে। সেই আগুনে আমার মা, বোন, ভাগিনা ও খালাসহ ছয়জন পুড়ে মারা যায়।
পরিবারের নিহত লোকজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের স্মৃতি আজও ভুলতে পারি নি। কত কিছু হারিয়েছি। আমাদের যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা সেটা এখনো পাইনি। শুনেছি, প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতা করেছেন কিন্তু সেটা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছায় নি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর এ দিনটিতে সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বজন হারানো মানুষগুলো ছুটে আসেন এখানে। স্মরণ করেন তাদের প্রিয়জনদের। নীমতলী ট্রাজেডির পর টাস্কফোর্স গঠন, অঙ্গিকার ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। রাজধানী থেকে রাসায়নিকের গুদাম-কারখানা সরিয়ে নিতে হয় গঠন করা হয় দুটি কমিটি। সেই কমিটি কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে জায়গা ঠিক করার সুপারিশসহ উচ্চ মাত্রার বিপজ্জনক পাঁচ শতাধিক রাসায়নিকের তালিকা করে প্রতিবেদন জমা দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে। তবে এসবের কোনো কিছুরই বাস্তবায়ন হয়নি। এর পর কেটে গেছে বছরের পর বছর। কিন্তু বদলায়নি পুরান ঢাকা। রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরান ঢাকার চকবাজার, লালবাগ, আরমানিটোলা, ইমামগঞ্জ, ইসলামবাগ, মিটফোর্ড, হাজারীবাগ ও কোতোয়ালিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে রাসায়নিকের অসংখ্য গুদাম।
বংশাল থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) আবুল হাসান বলেন, নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছিল। জিডির সূত্র ধরে ১২৪ জনের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়। ওই জিডির আর তদন্ত হয়নি।