1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
ঢাকায় এবার মাদকের ভয়ংকর গবেষণাগার | Bastob Chitro24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন

ঢাকায় এবার মাদকের ভয়ংকর গবেষণাগার

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২

♦ মিলল ২ কোটি ৪০ লাখ নগদ টাকা অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের ডলার ♦ প্রথমবারের মতো দেশে পাওয়া গেল কুশ মাদক ♦ কথিত বিজ্ঞানী গ্রেফতার, গ্রো-টেন্ট পদ্ধতিতে নিজেই তৈরি করেন প্লান্ট

‘মাদকবিজ্ঞানী’ হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়া থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশে এসে বাবার টেক্সটাইল ব্যবসা দেখার পাশাপাশি শুরু করেন মাদক নিয়ে গবেষণা। শুরুতে বিভিন্ন দেশ থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ‘কুশ’, ‘হেম্প’, ‘মলি’, ‘ফেনটানল’-এর মতো মাদকের চালান দেশে আনতেন। পরে এগুলো দেশে উৎপাদন ও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্টও তৈরি করেছিলেন। নিজের উদ্যেগেই অতি গোপনে শুরু করেছিলেন মাদকের চাষ। তবে শেষরক্ষা হয়নি ওনাইসি সাঈদ ওরফে রেয়ার সাঈদের (৩৮)। দেশে প্রথমবারের মতো কুশ মাদকের চালান উদ্ধার এবং এ মাদক তৈরির কারিগর সাঈদকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

জানা গেছে, সাঈদের অধিকাংশ ক্রেতা ধনাঢ্য পরিবারের সদস্য। এ ছাড়া অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন পার্টিতে চাহিদার ভিত্তিতে এসব মাদক সরবরাহ করতেন তিনি। সাঈদের মাদকের একটি বড় চালান কানাডায় আটকও হয়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যমকর্মীদের সাঈদের নানা কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, এক্সট্যাসি (মেথানিল ডাই অক্সি মেথাফিটামিন) নামক একটি নতুন মাদকের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে গোপন তথ্য পেয়ে কাজ শুরু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার গুলশান থেকে ওনাইসি সাঈদ ওরফে রেয়ার সাঈদকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ১০১ গ্রাম কুশ, ৬ গ্রাম হেম্প, ০.০৫ গ্রাম মলি, ১ গ্রাম ফেনটানল, ১৮ গ্রাম কোকেন, ১২৩ পিস এক্সট্যাসি, ২৮ পিস এডারল ট্যাবলেট এবং ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ডলার উদ্ধার করা হয়। পরে সাঈদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে চোখে পড়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্টের মাধ্যমে অভিনব পন্থায় বিদেশি প্রজাতির কুশ তৈরির প্লান্ট ও সেটআপ তৈরি করেন রেয়ার সাঈদ। সেই ফ্ল্যাটে মাদকের চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। কোন মাদকের বোতলে কোন মাত্রা দিতে হবে সব উল্লেখ করে রেখেছিলেন।

সাঈদ সম্পর্কে এই র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, দেশের একটি স্বনামধন্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) করতে তিনি চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। পরে মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) করেন মালয়েশিয়ায়। দেশে ফিরে প্রথমে বাবার টেক্সটাইল ব্যবসা দেখাশোনা করেন। বিদেশে পড়া অবস্থায় বিভিন্ন মাদকের সঙ্গে পরিচিত হন সাঈদ। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেটে। বাবার ব্যবসার পাশাপাশি দেশে নতুন ধরনের মাদকের প্রচলন ও বাজার সৃষ্টির পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নানা ধরনের মাদক নিয়ে আসতেন। এসব মাদক সরবরাহ করতেন বিভিন্ন অভিজাত পার্টিতে। কমান্ডার মঈন বলেন, প্রায় চার বছর ধরে এক্সট্যাসিসহ অন্যান্য উচ্চমূল্যের মাদকের কারবারের সঙ্গে জড়িত সাঈদ। বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। এসব মাদক তিনি পার্সেলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করতেন। পার্সেলগুলো তিনি নিকটাত্মীয়, বন্ধুবান্ধবের নামে নিয়ে আসতেন। অবশ্য তারা কেউ এ সম্পর্কে জানতেন না। ঢাকার বিভিন্ন পার্টিতে যখন এসব মাদক সরবরাহ করতেন, যাদের মাধ্যমে পাঠাতেন তারাও জানতেন না প্যাকেটের ভিতর কী আছে। এসব মাদকের মূল্য হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করতেন সাঈদ। র‌্যাব জানায়, নতুন বিভিন্ন মাদকের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ফলে এ নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা শুরু করেন তিনি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নত দেশে সরবরাহের জন্য কুশ প্লান্টের খামার তৈরি করেছিলেন সাঈদ। টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল হিসেবে মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাটের ভিতর তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্ট পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেন। এজন্য বিদেশ থেকে কুশ মাদকের গাছের বীজ নিয়ে এসে ফ্ল্যাটের খামারে বপন করেন। এরই মধ্যে খামার থেকে একবার হারভেস্ট ও পরে প্রসেস করে কুশ মাদক প্রস্তুত করেন, যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদকাসক্তের কাছে বিক্রি করেছেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় সাঈদ সাত ধরনের বিভিন্ন ফ্লেভারের কুশ প্লান্ট করেছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি