রাজশাহী মহানগরীতে ঝুঁকিময় ভবনের তালিকা কেন বানানো হয় যদি সেগুলো ভাঙা না হয়? এ প্রশ্ন নাগরিকদের। নগরীতে এখন বহুতল ভবনের সংখ্যা দুই শর বেশি। এর মধ্যে ১০ তলা ও এর অধিক তলাবিশিষ্ট ভবনের সংখ্যা অর্ধশতের বেশি। তবে সময়ের সঙ্গে হু হু করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবনের সংখ্যা বাড়লেও বেশির ভাগ ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি।
এমনকি ভবন নির্মাণের পর ফায়ার সার্ভিসের বসবাসের উপযোগী ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও ভবন মালিকরা এর তোয়াক্কা করেন না। রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করলেও এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) সূত্র জানায়, রাজশাহী মহানগরীতে ২০০৯ সাল থেকে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর আগে মহানগরীতে ১০ তলা ভবন বলতে ছিল কেবল সিঅ্যান্ডবি মোড়ে জীবন বীমার ভবনটি। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ১০ তলা ভবন এখন ৫০টির বেশি। নগর ভবন থেকে শুরু করে আশপাশে আরও চারটি এবং সাহেববাজার এলাকায় ১০টি, আলুপট্টির মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সাগরপাড়া, উপশহর, বর্ণালীর মোড়, আমবাগান, তেরোখাদিয়া, সিপাইপাড়া, কাজীহাটা ও পদ্মা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব ভবন। আর ১০ তলার নিচে এবং পাঁচ তলার ঊর্ধ্বে ভবনের সংখ্যা কয়েক শ। ২০১৩ সালে মহানগরীতে ৬০০ ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচ তলা পর্যন্ত ৫৬৫টি এবং ছয়ের অধিক তলা ভবনের অনুমোদন ছিল ৩৫টির। ২০১৪ সালে অনুমোদন দেওয়া হয় ৫০২টির। এর মধ্যে ৪৮৬টি পাঁচ তলা পর্যন্ত এবং ছয়ের অধিক তলার ভবন ৩৫টি। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আরও ৩৫৪টি ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ৩৩৬টি পাঁচ তলা পর্যন্ত এবং ছয়ের অধিক তলার ভবন অনুমোদন ছিল ৩৩টি। এর পরের পাঁচ বছরে আরও অন্তত দেড় হাজার ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্ধারণে পুরো মহানগরীকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে ২০১৯ সালে নানামুখী জরিপ চালায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। জরিপে উঠে আসে মহানগরীতে কয়েক শর বেশি বহুতল ভবন থাকলেও তার অধিকাংশ ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। রাজশাহীতে ১০-১২ বছর আগে যেসব বহুতল ভবন তৈরি হয়েছে, সেগুলো অগ্নিনিরাপত্তার কোনো তোয়াক্কা করেনি। ফলে এসব ভবনে যে কোনো মুহূর্তে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। গত চার-পাঁচ বছরে যেসব ভবন তৈরি হয়েছে, সেগুলোর হাতেগোনা কয়েকটি ভবনেই কেবল অগ্নিনিরাপত্তা আইন মানা হয়েছে।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, ভবন নির্মাণের পরে তিন মাসের মধ্যে ভবনে দুর্ঘটনা মোকাবিলায়? সব প্রস্তুতি আছে কি না সেই মর্মে একটি সার্টিফিকেট নিতে হয়। কিন্তু বিধিমালা না মানা ও মালিকদের অবহেলায় সেই সার্টিফিকেট নিতে অনেক সময় লেগে যায় চার-পাঁচ বছর। আবার অনেক ভবনের মালিক তোয়াক্কা করে না এই ছাড়পত্র নেওয়ার। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে তারা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব ভবনের বিষয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দফতরের উপ-সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, আমরা কয়েকটি মাপকাঠিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করি। তার মধ্যে দুর্বল ভবন, ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও আকস্মিক দুর্যোগে বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্প পথ না থাকাসহ কয়েকটি মাপকাঠিতে রাজশাহীর অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। বেশির ভাগ বহুতল ভবনেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নেই। ফলে ভবন চিহ্নিত করার পর আর আমাদের সেভাবে করণীয় কিছু থাকে না।