ঈদ ঘনিয়ে আসায় দর কষাকষিতে জমে উঠেছে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট। হাটগুলো গরু, ছাগল আর খাশি’তে পরিপূর্ণ। গত কয়েক বছরের মত এবারও দেশি গরুতে হাট ভরপুর। হাটে ক্রেতা ভীড় করলে বাড়তি দামের কারণে অনেক ক্রেতার নাগালের বাইরে পছন্দের পশু। ক্রেতাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অতিরিক্ত দাম চাচ্ছেন গরুর বেপারিরা। এদিকে গো-খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে দামে ছাড় দিতে চান না বিক্রেতারাও। তাই গতকাল পর্যন্ত গরু, ছাগল কম বিক্রি হয়েছে। তবে রাতের দিকে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। আগামী রোববার ঈদ হওয়ায় আজ শুক্রবার আশানুরুপ গরু, ছাগল বিক্রি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের। ক্রেতারাও মনে করছেন হয়তো বেপারিরা দাম কিছুটা কমাবেন। এছাড়া ট্রাকে করে ঢাকার বাইরে থেকে প্রতিনিয়ত গরু হাটে ঢুকছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোরবানির পশু এসেছে রাজধানীর হাটগুলোতে। দুই সিটিতে মোট ২১টি হাট বসেছে এবার। হাটে রাজা, বাদশা, সাকিব খান, শাহরুখ খান, কালা মানিক, লাল মানিক, বিগ বস, জায়েদ খানসহ নানা নামের গরু বেশ আলোচনায়। নাম ছাড়াও হাটের বড় গরু গুলো নিয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। না কিনলেও গরুগুলো দেখতে ক্রেতারা, জিজ্ঞেস করছেন দাম।
গতকাল পর্যন্ত হাট ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল আকারের বড় গরুগুলো তেমন বিক্রি হয়নি। অনেক ক্রেতা দাম বললেও বেপারিদের যেমন বিক্রির আগ্রহ কম। তারা আজ শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার দিনের বেলায় ভ্যাপসা গরম থাকায় হাটে ক্রেতা কম গিয়েছেন। বিকাল থেকে ক্রেতাদের ভীড় বেড়েছে হাটে। সাথে বিক্রিও বেড়েছে।
হাট ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন মাঝারি গরুর চাহিদা থাকলেও ধীরে ধীরে বড় গরুর দিকে নজর পড়ছে ক্রেতার। ২ লাখ বা এর কম দামের পশুর প্রতি ঝোঁক বেশি ক্রেতাদের। তবে বড় গরুর দাম জানায় আগ্রহ ক্রেতাদের।
গরুর দাম বেশি অভিযোগ করে একজন ক্রেতা বলেন, পছন্দের গরুর রয়েছে। অনেক গরু পছন্দ হয়েছে কিন্তু দরদামে হচ্ছে না। গরুর দাম অনেক বেশি। গত বারের চেয়ে অনেক বেশি চায়। গরুর দাম কম হলেও আগের তুলনায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। তবে গরু পর্যাপ্ত রয়েছে।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় পশু লালন পালনে খরচ বেড়েছে। তাই লোকসানে পশু বিক্রি করবেন না তারা।
উত্তরার বৃন্দাবন হাটে তালহা জুবায়ের নামে একজন ক্রেতা বলেন, গরুর অতিরিক্ত দাম চাচ্ছেন বেপারিরা। দাম বললেও তাদের যেন বিক্রি করার আগ্রহ কম। তিনি বলেন, ওজনের তুলনায় অনেক বেশি দাম চান যেমন লাইভস্টকে গরু বিক্রি হয় ৫০০ টাকা কেজি। সে হিসিবে এক হাজার কেজি ওজনের গরু ৫ লাখ হবার কথা, কিন্তু বেপারিরা দামই চায় ১২ লাখ টাকা। হিসেব ছাড়া দাম চায় তারা। একজন বিক্রেতা বলেন, গরু দুইটির দাম চাচ্ছি, ১৬ লাখ ও ১৭ লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা বলছেন, ৯ লাখ ও সাড়ে ৯ লাখ টাকা। আরেকজন বিক্রেতা বলেন, আমার গরুটি ৮ মণ ওজনের কিন্তু ক্রেতারা বলছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এদিকে বিক্রাতের গরুর দাম চাওয়ায় ধরণ পাল্টেছে। তারা লাখ বা হাজারে দাম না চেয়ে অন্য ভাবে দাম চায়। যেমন তিন লাখ বিশ হাজার দাম বলার স্টাইল হল তিন’শ বিশ টাকা। এক লাখ আশি হাজার না বলে বলেন এক’শ আশি টাকা গরুর দাম। বিক্রেতাদের কথার এই ধরণে বেশ বিরক্ত প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
এদিন গাবতলী হাটে দেখা যায়, হাটে পর্যাপ্ত গরু এসেছে। আরও গরু আসছে। হাটে ছোট গরুর তুলনায় মাঝারি ও বড় গরুর সংখ্যা বেশি। মিরপুর ১২ নম্বর থেকে গাবতলী হাটে এসেছেন গাজী ইউসুফ। তিনি বলেন, হাটে গরু ভালোই এসেছে। ছোট গরুর দাম মনে হচ্ছে বেশি। আমি মাঝারি ধরনের গরু কিনবো এবার। দাম এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে।
শ্যামলী থেকে গাবতলী হাটে এসেছেন হামিদুর রহমান। তিনি বলেন, হাটে এসেছি দুই ঘণ্টা আগে। ছোট গরু দেখছি। এখনও কিনতে পারিনি। গতবারের তুলনায় এবার একটু দাম বেশি। গতবছর যে গরুর দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা সে গরুর দাম বেপারিরা চাইছেন ১ লাখ ৩০ থেকে দেড় লাখ টাকা দাম চাইছেন।
রাজবাড়ী থেকে তিনটি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন মাসুম শেখ। তিনি বলেন, ক্রেতারা আসছেন। দাম কম করে বলছেন। গত দুই দিনের তুলনায় আজকে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। আমি আজকে দুটি গরু বিক্রি করেছি। একটা বিক্রি করেছি এক লাখ ৭৫ হাজার ও আরেকটা এক লাখ ৩২ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, আমার আরেকটি গরু আছে এটার দাম চাচ্ছি সাড়ে তিন লাখ টাকা। ক্রেতারা দুই লাখ টাকাও দাম বলছেন না।
এদিকে ধোলাইখালের কোরবানির পশুর হাটে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম ছিল। ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতাদের কেউ কেউ বসে গল্প করছেন। আবার কেউ ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শেষ মুহূর্তে গরু ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন।
ফরিদপুরের সদরপুর থানা থেকে ১৪টি গরু নিয়ে ধোলাইখালে এসেছেন ব্যবসায়ী কুদ্দুস মাতব্বর। এর মধ্যে আগ্রহের কেন্দ্রে রাজা ও বাদশা। গরু দুটির দাম হাঁকানো হচ্ছে ১২ লাখ ও ১০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ১০ লাখ ও ৭ লাখ হলে বিক্রি করে দেব। বাজারদর কমও না আবার বেশিও না, স্বাভাবিক আছে। বাজারে ক্রেতা খুব বেশি একটা নেই। ঢাকার দোহার থেকে লাল বাহাদুর নামে একটি গরু নিয়ে এসেছেন ইসহাক আলী। তিনি বলেন, সাড়ে তিন বছর ধরে লাল বাহাদুরকে লালন-পালন করেছি। ১৫ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবো। ক্রেতারা ৮-৯ লাখ টাকা করে দাম বলছেন।
এদিকে গতকাল রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কোরবানির পশুর শরীরে মোটাতাজাকরণ কোনো ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে কি না, তা যাচাই-বাছাইয়ে হাটগুলোতে অভিযানে চালাচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেটসহ অভিযানে অংশ নিয়েছেন পশু চিকিৎসকরা। সংস্থাটি বলছে, কোনো পশু ব্যবসায়ী এ ধরনের অসদুপায় অবলম্বন করে থাকলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদকেন্দ্রিক সার্বিক নিরাপত্তায় এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে র্যাব। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধসহ ফাঁকা ঢাকার জননিরাপত্তা নিশ্চিতে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের এ এলিট বাহিনীর সব ইউনিটের রয়েছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি।