1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
চিকিৎসকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জনগণের পাশে সেবার ব্রত নিয়ে থাকুন | Bastob Chitro24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১২ পূর্বাহ্ন

চিকিৎসকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জনগণের পাশে সেবার ব্রত নিয়ে থাকুন

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চিকিৎসকদের সেবা প্রদানের ব্রত নিয়ে জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সেবার ব্রত নিয়েই আপনাদেরকে জনগণের পাশে থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘এটাকে শুধু একটা পেশা হিসাবে নয়। আপনারা মানুষের সেবা করেন এবং আমি চাই সেবার ব্রত নিয়েই আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন।’

রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস)-এর সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন এবং ১৪তম সমাবর্তন ২০২২-এর প্রধান অতিথির ভাষণে সোমবার তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমাদের চিকিৎসকদের একটা কথা বলব, একজন রোগী যখন একজন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যায়, সেখানে ওষুধের থেকেও ডাক্তারের দুটি কথা অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে বা তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারে। কাজেই এই বিষয়টার দিকেও একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি বলেন, ডাক্তারের কথাতেই রোগী অর্ধেক ভালো হয়ে যায়, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর আমাদের দেশে গবেষণার একান্ত প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এ বিষয়ে চিকিৎসকদের মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন। সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের জন্য গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন, সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু এবং প্রকৃতির সঙ্গে অনেক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেগুলো থেকে মানুষকে মুক্ত করাও আমাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি উদাহরণ দেন জাতির পিতা সেসময় এই অঞ্চলে মারাত্মক আকারে দেখা দেওয়া কলেরা নিরাময়ে আইসিডিডিআর,বি প্রতিষ্ঠা করে সেটাকে একটি উন্নতমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে যান। তার সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে এর আরও উন্নয়ন করে। ফলে এই অঞ্চল কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তি পেয়েছে। পাশাপাশি পোলিওসহ বিভিন্ন রোগের টিকা দিয়ে শিশুকাল থেকেই মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে।

আমাদের দেশের চিকিৎসকরা মেধাবী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকরা যদি বিদেশে গিয়ে এত ভালো করতে পারেন, তাহলে দেশে করবেন না কেন। আমাদের চিকিৎসকরা দেশে যেন তাদের মেধার যথাযথ বিকাশ ঘটাতে পারেন, সে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য যত রকম সহযোগিতা প্রয়োজন আপনারা পাবেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিসিপিএস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপও দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাহিদ মালেক বিসিপিএস-এর সুবর্ণজয়ন্তীর ফেলোশিপ ও স্মারকচিহ্ন গ্রহণ করেন। পরে জাহিদ মালেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের বিসিপিএস ফেলোদের মধ্যে স্বর্ণপদক এবং দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে সম্মানসূচক ফেলোশিপও তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে বিসিপিএস সভাপতি অধ্যাপক কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এএইচএম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আগত বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন বিসিপিএস সচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ বিল্লাল আলম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিসিপিএসের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিসিপিএস-এর থিম সং এবং বিসিপিএস-এর কার্যক্রমের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসক সমাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এজন্যই তার সরকার মৃত্যুর সংখ্যা একটা সীমার মধ্যে রেখে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। চিকিৎসকদের এই সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে গিয়ে যারা মারা গেছেন তিনি তাদের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিসিপিএস-এর ফেলোশিপ পাওয়াটা অত্যন্ত সম্মানের। এখানে উপস্থিত সম্মানিত ফেলো ও মেম্বারদের কাছে আমার এটাই আহ্বান-দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আপনারা কাজ করে যাবেন।

তিনি বলেন, তার সরকার রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে আরও ৩টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। পাশাপাশি সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

চিকিৎসার মানোন্নয়ন এবং রোগীর সেবার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসাটা যেন আমাদের দেশের মানুষ পেতে পারে-এই বিষয়টা আপনাদের দেখতে হবে। যদিও আমাদের দেশের লোকসংখ্যা অনেক বেশি, রোগীর চাপ অনেক বেশি, তারপরও আমি বলব বিষয়টি দেখা দরকার।

এ সময় অনলাইনভিত্তিক বিশেষায়িত চিকিৎসাব্যবস্থাটা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে আরও উন্নত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, লোকজন নিজ নিজ উপজেলায় বসেই যেন বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা পেতে পারে, সে সুযোগও আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, তার সরকার খাদ্য-পুষ্টির নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি জনগণকে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত রাখতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি সঠিক রোগ নির্ণয় এবং মানুষের মাঝে রোগব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আর জানি না কেন ইদানীং ক্যানসার এবং কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাবটা বেড়ে গেছে। এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকার বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জ্ঞান দান করা প্রয়োজন। সেটা যেমন আপনারা করতে পারেন, তেমনই এই সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারেন। প্রত্যেক বিভাগেই এই বিষয়ভিত্তিক একটি করে হাসপাতাল তৈরি করব। আর জেলা হাসপাতালগুলোয় কিডনি ডায়ালাইসিস এবং হৃদ্রোগের চিকিৎসা যাতে হতে পারে সে পদক্ষেপও আমরা ইতোমধ্যে নিয়েছি।

‘ক্ষমতা তার কাছে একটি সুযোগ’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এখানে মূল লক্ষ্য জনগণের সেবা করা। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দেওয়া নয়। কাজেই আপনারাও যে যেখানে যে পেশাতেই থাকেন, মানবতাবোধ নিয়ে মানুষের পাশে থাকবেন-এটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি