1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ কাজে আসছে না | Bastob Chitro24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ কাজে আসছে না

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

দেশে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিদফতরের অভিযান, আমদানির অনুমতি, শুল্ক হ্রাসসহ সরকার নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন চালের বাজার। সরকারি উদ্যোগ কাজে আসছে না বলে জানা গেছে। গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট ও নাজিরশাল চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে, আমদানির অনুমতি থাকলেও ডলার সংকট ও দাম বেশির কারণে আমদানিতে গতি নেই। ব্যবসায়ীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বাড়তি দামে বড় চালানে চাল আমদানিতে। যে কারণে দেশের বাজারে চালের দামও বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের আমদানিতে আগ্রহ কম। দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরই মধ্যে ভারত থেকে ১২ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে চালের দাম না কমে উল্টো বাড়তে শুরু করেছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর কৃষি মার্কেট, বাবুবাজার, বাদামতলী, রায়সাহেব বাজার, সূত্রাপুর বাজারসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সচিব মো. ইসমাইল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, চালের দাম বাড়ার কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। আমাদের প্রতিদিন বাজার দর মনিটরিং হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। হয়তো স্থানভেদে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা দামের হের-ফের হতে পারে। তিনি বলেন, কোন বন্দর দিয়ে কত টন চাল আমদানি হয়েছে। তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমদানির পুরো তথ্য পাওয়া সময়সাপেক্ষ। সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। একই সঙ্গে শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ লাখ টন চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। আমরা আগস্টের ১২ তারিখ পর্যন্ত এলসি খোলার সময়সীমা বাড়িয়েছি। আশা করছি আরও ৫ লাখ টন এলসি খোলা হবে। সর্বোপরি আমাদের সরবরাহ চেইন ভালো আছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। বর্তমানে খাদ্যশস্য মজুত আছে ১৭ লাখ টন।

চলতি বছর ভরা মৌসুমেও চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। দাম স্থিতিশীল রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিদফতর চালের বাজারে মাসব্যাপী যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে। এর পর চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৬২ শতাংশ থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৩০ জুন থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফায় ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেও চালের বাজারদরের প্রায় একই চিত্র পাওয়া গেছে। টিসিবির গত বৃৃহস্পতিবারের বাজারদরের তালিকা বলছে, রাজধানীর বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। মাঝারি ধরনের চাল ৫২ থেকে ৫৮ টাকায় আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি।

চালের ভরা মৌসুমেও দেশের বাজারে এ খাদ্য পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের কম শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। চার দফায় এ পর্যন্ত ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। তারপরও রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমেনি। খুচরা বাজারে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে প্রায় সব ধরনের চালের দাম। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭২ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি বস্তা চাল ৩৩০০ থেকে ৩৬০০ টাকা। তিন-চার দিন আগে এর দাম ছিল ৬৬ থেকে ৭০ টাকা। কেজিতে দুই টাকা বেড়ে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৮২ টাকায়। আর এক বস্তা চাল ৩৭০০ থেকে ৪১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

বিআর-২৮ জাতীয় চাল কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ২৯০০ টাকায়। তবে মোটা চালের ক্ষেত্রে দাম অপরিবর্তিত দেখা গেছে। এ মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহ ব্যবধানে পাইকারিতে মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তায় ২৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। মিনিকেটের দাম বেড়েছে বস্তা প্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারিতে এখন মোটা চাল বি-২৮ ও পাইজাম ৫০ কেজির বস্তা ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকা, চিকন চাল মিনিকেট বস্তা ৩ হাজার থেকে ৩২৫০ টাকা এবং নাজিরশাইল ৫০ কেজির ৩৫০০ থেকে ৩৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বাজারে চালের সংকটের কারণে সরকার শুল্ক কমিয়ে আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। এখন ডলারের দাম বাড়ার কারণে সাহস পাচ্ছেন না আমদানিকারকরা। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে আমদানি করে চাল নিয়ে এসেছে, সবাই ধরা খেয়েছে। ফলে আমদানি করা চালের দাম বেশি বলে দেশের বাজারে মূল্য কমছে না। বরং বাজারে দাম বাড়ছে। যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয় আশা করেছিল, চাল আমদানি শুরু হলেই দেশের প্রধান এই খাদ্য পণ্যের দাম কমতে শুরু করবে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী আফরাফ আলী বলেন, পাইকারি পর্যায়ে এখনও দাম কমেনি। আমদানি করা চালও বাজারে আসেনি। এ কারণে দাম কমছে না। ক্রেতাসহ বাজার তদারককারী কিছু সংস্থার বক্তব্য, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান, আমদানির অনুমতি, শুল্ক হ্রাসসহ সরকার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। ভোক্তা পর্যায়ে এখনও তেমন ভোগান্তি দেখা না গেলেও আগামীতে এর রেশ পড়তে শুরু করবে।

রাজধানীর বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ীর সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন বলেন, সরকারি অভিযান দেখে মনে করেছিলাম, বাজারে আমদানি চাল এলে দাম কিছু কমবে। কিন্তু এখন চিত্র উল্টো। আমদানিকারকরা বেশি দামে চাল বাজারে ছাড়ছেন, এ কারণেই আবার দাম বাড়ছে। কারণ ডলারের উচ্চমূল্য এবং ভারতে দাম বাড়তি থাকার কারণে চাল আমদানিতে খরচ বেড়ে গেছে। আমদানিকৃত চালের সব খরচ হিসাব করে দেখা গেছে, দেশীয় বাজারের চালের তুলনায় এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ পড়ে গেছে। এ কারণে অনেক আমদানিকারকই চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

বাবুবাজারের পাইকারি আড়তের রশিদ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আব্দুল রশিদ বলেন, বাজারে মোটা চালের চেয়ে সরু চালের দাম বেশি বেড়েছে। খুচরায় প্রতি কেজি মিনিকেট চাল দুই টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭২ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮২ টাকা পর্যন্ত। মোটা চাল বি-২৮ ও পাইজাম কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। মোটা চাল স্বর্ণা ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। তবে আমদানি চালের দাম বেশি হওয়ায় বাজারে ভারতের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা, একই মানের মিনিকেট দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। একই চালের দাম দুই ধরনের হওয়ায় দেশি চালের দাম বাড়ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি