বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হার্টে চিহ্নিত ব্লকে অপসারণ করে একটি রিং বসানো হয়েছে। এনজিওগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরে গতকাল শনিবার বিকালে গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, এনজিওগ্রাম করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, তার (বেগম খালেদা জিয়া) মেইন আর্টারিটায় ৯৯% ব্লক এবং সেটা চিকিৎসকরা সফলভাবে স্টেইট করেছেন, বেলুনিং করে ব্লক দূর করে সেখানে তারা স্টেইন বসিয়েছেন। ডাক্তাররা অত্যন্ত আশাবাদী যে, তার এই টিট্রমেন্টের ফলে তিনি আপাতত হার্টের যে সমস্যা যেটা থেকে সাময়িকভাবে রিলিফড হবেন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বহুবার দেশনেত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে কথা বলেছি। দলের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য আমরা আন্দোলন করেছি, তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বাইরে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা একসময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখাও করেছেন। কিন্তু এই সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী আজ পর্যন্ত তার চিকিৎসার জন্য তাকে যে বিদেশে পাঠানো দরকার সেটা বিষয়টাকে সম্পূর্ণ বাতিল করে দিয়ে যে ব্যবস্থাটা বলেন সেটা সঠিক নয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে তার এই অসুস্থতা প্রমাণিত হলো তাকে অবিলম্বে অবিলম্বে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারলে তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে এবং পড়েছে বার বার। আপনাদের (গণমাধ্যম) সামনে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সামনে আবার আহবান জানাতে চাই, এই সরকারের কাছে অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি এদেশের জনগণের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধী দলের নেতা, এদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যার অপরিসীম অবদান রয়েছে তার জীবন রক্ষার জন্য, তার স্বাস্থ্যের জন্য তাকে বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। আমি আশা করি আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা তাদের (সরকার) কর্ণ কহুরে প্রবেশ করবে এবং তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মহাসচিব জানান, খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড বলেছেন যে, ম্যাডামের একটা মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তারপরে উনার হাসপাতালে থাকতে থাকতে আরেকটা উপসর্গ এসে যায় সেটা হচ্ছে সাবোকেশন শুরু, শ্বাস-কষ্ট শুরু হয়। তখন বোর্ড অতিদ্রুত এনজিওগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড। এরপর দুপুর ১টায় খালেদা জিয়াকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। দেড় ঘন্টা পর তাকে সিসিইউ‘র কেবিনে নেয়া হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোমিন-উজ জামান ও অধ্যাপক সামস মনোয়ারও রয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালে মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ অবস্থা এবং তার হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন বিশেষ চিকিৎসকরা। ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাডামের হার্টের অসুখ। এটা লাইফ থ্রেটেনিং। এটা আজকে সাময়িকভাবে চিকিৎসকরা সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তার যেসব অন্যান্য রোগ রয়েছে সেটার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সেটা দেশের বাইরে উন্নত কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দরকার। ডাক্তাররা আগেও বলেছেন আজকেও (গতকাল) যে মেডিকেল বোর্ড বসেছিল তারা ম্যাডামকে বিদেশে উন্নত টিট্রমেন্টের জন্য পাঠানোর সাজেস্ট করেছেন।
বিএনপি দলের চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন সরকারের কাছে আপনাদের মাধ্যমে আহবান জানিয়েছি। দল থেকে সিদ্ধান্ত এখনো নেইনি। অবশ্যই আমরা নেবো। তবে এটা জনগণের দাবি, গোটা বাংলাদেশের মানুষের দাবি যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার জীবন রক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক এবং মুক্তি দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার রাতে বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়লে এনজিওগ্রাম করার সিদ্ধান্ত হয়।