1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
কমছে পানি বাড়ছে ভাঙন | Bastob Chitro24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ অপরাহ্ন

কমছে পানি বাড়ছে ভাঙন

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২

সপ্তাহের শেষে বাড়তে পারে বৃষ্টি হ বিপৎসীমার ওপরে টাঙ্গাইলের সব নদ-নদীর পানি হ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আদাবাড়ি গ্রামের একটি ব্রিজ ধসে পড়েছে হ হবিগঞ্জে গত আট দিন ধরে ২০০ গ্রামে বিদ্যুৎ

পানি কমলেও বানভাসিদের দুর্ভোগ কমছে না। দুর্গতরা এখনো নিজের বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। এদিকে পানি কমার সাথে সাথে বিভিন্ন জেলায় তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। মাদারীপুর, ফরিদপুরে ভাঙছে পদ্মা, অড়িয়াল খাঁ। এ ছাড়া মানিকগঞ্জের শিবালয়ে ভাঙছে যমুনা। ভাঙছে এসব এলাকার অনেক মানুষ ঘরবাড়ি, জমিজমা সব হারিয়ে নিস্ব হচ্ছে।

সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেকোণায় বন্যার পানি কমছে। তিস্তার পানি কমতে শুরু করায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্দা ও রংপুরের বন্যা পরিস্থিতিরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে টাঙ্গাইলে যমুনাসহ অন্য সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যার অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার কমলেও তা বিপদসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার আর ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যার পানিতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের আদাবাড়ি গ্রামের একটি ব্রিজ ধসে পড়েছে। ফলে গত তিনদিন ধরে কড়াইল ও হিলড়া গ্রামসহ ১০ গ্রামের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। হবিগঞ্জে বন্যার কারণে গত আট দিন ধরে ৬টি উপজেলার প্রায় ২০০ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। এতে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ২১ হাজার গ্রাহক চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এ অবস্থায় গ্রামগুলোতে চুরি-ডাকাতিসহ নানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিভিন্ন জেলায় বন্যার পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। দুর্গতরা এখনো নিজের বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। সিলেট সুনামগঞ্জের অনেক এলাকায় ভারতের ঢলের প্রবল স্রোতে বাড়ি ঘর ভেসে গেছে। সেখানে এখন শুধু খালি ভিটে মাটির চিহ্ন টুকু দেখা যাচ্ছে। নতুন করে বাড়ি ঘর নির্মাণ করা ছাড়া তারা কোথায় যাবে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার্তরা কিছু ত্রাণ পেলেও গাইবান্দা, কুড়িগ্রাম, রংপুর এসব জেলার বন্যাকবলিত মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে না। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণায় আশ্রয় শিবিরে হাজার হাজার মানুষ ত্রাণের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কিছু কিছুু এলাকায় ত্রাণ দেওয়া হলেও এখনো অনেক এলাকার মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে না। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে ডায়রিয়াসহ নানান রোগ দেখা দিচ্ছে। কিন্তু মানুষ কোন চিকিৎসা পাচ্ছে না।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সারাদেশে বৃষ্টির প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। তবে চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। গত ২৪ ঘন্টা ঢাকা বিভাগ ছিল প্রায় বৃষ্টিহীন। রংপুর বিভাগে পঞ্চগড় ছাড়া আর কোথাও বৃষ্টি হয়নি। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গাসহ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।
স্টাফ রিপোটার মাদারীপুর থেকে জানান, মাদারীপুরের আঁড়িয়াল খা নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে মাদারীপুর শহররক্ষা বাঁধ সংলগ্ন মহিষেরচর এবং, পাচখোলা কালিকাপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তীব্র স্রোতের ফলে আশেপাশের নিচু জায়গা প্লাবিত হয়ে ভাঙনের শুরু হয়েছে। ভাঙনের ফলে বসতবাড়ি, মহিষেরচরের দোকানপাটসহ ফসলি জমি ও গাছপালা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের ভয়ে অনেকেই বাড়িঘর ও দোকানপাট অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। গত ২ দিনেই ২টি বসতবাড়ি সহ ৩টি দোকান পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, গত বছর মহিষেরচর (পুরাতন ফেরিঘাট) এলাকায় নদীভাঙন তীব্র হওয়ার পর মহিষের চরের বেশ কিছু জায়গায় প্রায় ৬০০০ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছি। বর্তমানে ভাঙনের সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুর ৯ উপজেলা সদরের পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতি, গড়াই নদীর বন্যার পানি কমতে শুরু করছে। তবে বাড়ছে নদী ভাঙন। এই ভাঙন ফরিদপুর সদর থানার গোলডাঙী এলাকার উস্তাডাঙী এলাকায় তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ভাঙনের ফলে এলাকাবাসীর বাড়িঘর ফসলি জমি, ফসল, স্কুল মাদরাসা, সরকারি রাস্তা সবই বিলীন হচ্ছে নদী গর্ভে। ঝুঁকিতে আছে এলাকার সরকারি ও বেরসরকারি দুটি স্কুল, একটি মসজিদ, সরকারি রাস্তা এবং নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজ বাড়ি। ভাঙনের বিষয় ইনকিলাবের সাথে কথা হয়, সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারের সাথে। তিনি বলেন আমি পরিদর্শনে গিয়ে জরুরিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আরিচা সংবাদদাতা জানান, এবার বর্ষা শুরু থেকেই মানিকগঞ্জের শিবালয়ে যমুনার পাড় এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আরিচা ঘাট সংলগ্ন দক্ষিণ শিবালয়ের ২শ’ পরিবার। ইতিমধ্যে ওই গ্রামের নদীর পাড় এলাকার বেশ কিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পানি বাড়া এবং কমার সময় ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এসব পরিবাবরের বাড়িঘরের সম্পূর্ণ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। ইতিমধ্যে নদী ভাঙন রোধে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী এবং ৩ নং শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ,এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের নিকট লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। আরিচা ঘাট সংলগ্ন নিহালপুর এলাকা হতে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নদী শাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সিলেট ব্যুরো জানায়, বন্যার পুরো জেলা তছনছ করে দিয়ে নামছে পানি ধীরগতিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি নামার গতি ছিল নামমাত্র। জেলার বেশিরভাগ এলাকা এখনও পানির নিচে। ৯ দিন ধরে পানিবন্দি থাকা মানুষের জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। গত ১৫ জুন থেকে চলতি বছরে তৃতীয় দফায় বন্যা দেখেছে সিলেট। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় তলিয়েছে সিলেটের প্রায় ৮০ ভাগ। এখনও বেশির ভাগ এলাকা পানিবন্দি। সিলেট জেলা প্রশাসন তথ্য মতে, গত শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের আংশিক, জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভায় ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩২০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২২ হাজার ১৫০টি ঘরবাড়ি। ফসল নষ্ট হয়েছে ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর। এদিকে গত ২০ তারিখ পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩ উপজেলা ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন আশ্রয় নেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ৯১ হাজার ৬২৩ জন। সে হিসেবে, প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করেন।

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে চর ও নদ-নদীর অববাহিকার নিচু এলাকাগুলোতে এখনও পানি জমে আছে। পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। অনেকের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো বসবাসের উপযোগী হয়নি। এদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতের চিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে। চরের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতের ভোগান্তি কমেনি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ইনকিলাবকে জানান, চলতি বন্যায় প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৫৩৮ মেট্রিকটন চাল, ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম চলমান আছে।

নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ ও বারহাট্টা উপজেলার প্রায় দুই হাজার বানবাসী মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। নেত্রকোনা জেলা বিএনপির উদ্যোগে গতকাল দিনব্যাপী ট্রলার নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বন্যাদুূর্গত প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে ঘুরে বানবাসী ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মাঝে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহবায়ক বিশিষ্ট অর্থপেডিক চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল হক ও সদস্য সচিব ড. মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী’র নেতৃত্বে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা (উত্তর) বিএনপির আহবায়ক সাবেক মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সসহ প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি