1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
আমদানি চাপে রিজার্ভ | Bastob Chitro24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন

আমদানি চাপে রিজার্ভ

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২

নিয়ন্ত্রণহীন ডলারের বাজার, টাকার মানে রেকর্ড এক টাকা ৩০ পয়সা পতন রিজার্ভ ঘাটতি আছে ২১ বিলিয়ন : আইএমএফ বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৯০ কোটি ডলার আমদানির লাগাম টেনে ধরার তাগিদ

করোনার সংক্রমণ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল, জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম আরো বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জাহাজের ভাড়াও। এর প্রভাবে আমদানি ব্যয়ও লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে। আমদানি ব্যয় পরিশোধের চাপে মার্কিন ডলারের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সেই হারে বাজারে সরবরাহ না বাড়ায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে ডলারের দাম। বিক্রি করেও ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক দিনেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে গেছে ৮০ পয়সা। আর গত ২০ দিনের ব্যবধানে তিন দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হলো এক টাকা ৩০ পয়সা। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। অপরদিকে আমদানি যে হারে বেড়েছে, রফতানি সে হারে বাড়েনি। রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ভালো থাকলেও যুদ্ধের কারণে এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে জোগান দিতে হচ্ছে আমদানির খরচ। এ অবস্থায় চলতি হিসাবের লেনদেন ভারসাম্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। যদিও ইতোমধ্যে বিলাসপণ্য আমদানি ঠেকাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের সঙ্কট মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এ ছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়ার কথাও ভাবছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। অপরদিকে এই সময়ে রফতানি বাণিজ্যে বেশ উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। তারপরও প্রথম নয় মাসের রফতানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৯০ কোটি ডলার। আর রেমিট্যান্সের ১০ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ১৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।

বর্তমানে দেশের মাসিক গড় আমদানি ব্যয় ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কিন্তু রিজার্ভ ৪০ দশমিক ৮ বিলিয়ন। আইএমএফ’র হিসাবে, এর থেকে অন্তত ৭ বিলিয়ন ডলার রাখতে হবে হিসাবের বাইরে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে থাকায়। তার মানে ব্যয় মেটাতে হাতে আছে ৩৪ বিলিয়নের কম, যা দিয়ে করা যাবে না ৫ মাসেরও আমদানি। অথচ আইএমএফের মূল্যায়ন হলো উঠতি অর্থনীতির দেশের জন্য অস্বাভাবিক সময়ে রিজার্ভ থাকা উচিত ৮ থেকে ১২ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ। সেক্ষেত্রে ঘাটতি আছে অন্তত ২১ বিলিয়নের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে একদিকে ব্যাপক হারে আমদানির চাপ বেড়েছে। ফলে আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি ডলার লাগছে। কিন্তু সেই তুলনায় রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়েনি। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার কারণে টাকার বিপরীতে বাড়ছে ডলারের দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করেই চলছে। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবারও ৩ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১২ মে পর্যন্ত) ৫১০ কোটি (৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৪৪ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত ডলার বাজারে ছাড়া হয়নি। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না।

ডলার নিয়ে একই সমস্যায় পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সমাধানে হাত দেয়নি সময়মতো। তাই আগেভাগে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে পরিকল্পনা করে জনশক্তি রফতানি করা গেলে ও অবৈধ পথে আসা প্রবাসী আয় ঠেকানো গেলে বৈধ পথে প্রবাসী আয়ও ভালো আসবে। এতে আমদানি বাড়লেও রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হবে না। এছাড়াও পণ্য আমদানির ঋণপত্রে (এলসি) ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচার করছে একটি চক্র। দামি পণ্য আমদানির কথা বলে নিয়ে আসছেন অনেক কম দামি পণ্য। এভাবে চক্রটি বিদেশে টাকা পাচার করছেন। ভুয়া এলসির নামে অর্থপাচার রোধে পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্ববাজারে দরবৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় ব্যাপক বাড়ছে। একই সময়ে রেমিট্যান্স কমছে। রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির পরও বাজার ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। বিক্রি না করে ডলারকে আরো শক্তিশালী হতে দিলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি হবে। আবার রিজার্ভ যে পর্যায়ে নেমেছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আমদানি দায় মেটানোর ন্যূনতম মাত্রায়। ফলে বর্তমানের এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য উভয় সঙ্কট। এই পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি একটু বাড়লেও রিজার্ভ যেন না কমে সেদিকে জোর দিতে হবে। ডলারের দর সমন্বয় করতে হবে। তাতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তবে যে হারে বাড়বে তা বড়লোকের জন্য সমস্যার কোনো কারণ হবে না। এটা দরিদ্রদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি হবে। এই চাপ সামলাতে তাদের খাদ্য সহায়তার পরিবর্তে নগদ সহায়তা দেয়া যেতে পারে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে চলে এসেছে। এর নিচে নামাটা ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলার হাতে থাকতে আপনার মার্কেট ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ানো দরকার। যাতে যদি কোনোরকম অস্থিরতা দেখা যায় তাহলে সেই অস্থিরতাটা মোকাবেলা করার মতো অস্ত্র আপনার হাতে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি বেশি, এ কারণে ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। বাজার বিবেচনা করে ডলারের রেট ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জানান, রফতানি বাড়ছে, ঈদের সময় রেমিট্যান্স ২০০ মিলিয়ন এসেছে। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। যখনই প্রয়োজন হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। তবে আশার কথা আমাদের রফতানি বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের আমদানিতে গড় মার্জিনসহ আমরা বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।

অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষক মঞ্জুর হোসেন বলেন, আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়েছে দর। কিন্তু এখন আমদানির লাগাম টেনে ধরতে হবে; যে করেই হোক আমদানি কমাতে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আমি মনে করি, এসব পদক্ষেপের ফলে আমদানির লাগাম কিছুটা কমবে। তবে আরেকটি বিষয় খুব তীক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। পণ্য আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।

ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে দামে ডলার কেনে বা বিক্রি করে, তাকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বলে। এ হিসাবে আন্তঃব্যাংক রেটের চেয়ে ৫ থেকে সাড়ে ৭ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে ব্যাংকগুলো। অথচ এই ব্যবধান বা পার্থক্য এক-দেড় টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র মতে, গতকাল আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। একদিন আগেও এক ডলারে লেগেছিল ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। আর গত ১০ মে ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ২৭ এপ্রিল ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে পাঁচ থেকে ৭ টাকা বেশি দরে। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৭ টাকায়।
খোলাবাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তঃব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো। এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তঃব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত; সেটা এক থেকে দুই টাকার মধ্যে থাকত। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে কারণেই দিন যত যাচ্ছে, ইচ্ছামতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো; কমছে টাকার মান। এ পরিস্থিতিতে আমদানি খরচ বেড়েই যাচ্ছে; বাড়ছে পণ্যের দাম। তবে রফতানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হচ্ছেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সঙ্কট শুরু হয়, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।

২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে দু-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়ায়। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি এটি বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছে। এরপর ২২ মার্চ পর্যন্ত এ দরেই স্থির ছিল। পরে গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে আরো ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এপ্রিল আরো ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ১০ মে বাড়ে আরো ২৫ পয়সা। গতকাল ১৬ মে বাড়ল ৮০ পয়সা। ফলে এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম গিয়ে ঠেকেছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। অর্থাৎ গত ৯ মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারে দর বেড়েছে দুই টাকা ৭০ পয়সা।

অর্থনীতির আরেক বিশ্লেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ডলারের বাজারে চরম অস্থিরতা চলছে। এটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেও বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। আমার মনে হয়, এভাবে হস্তক্ষেপ করে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না। কেননা সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ব্যাপক তফাত। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো কমেছে। রফতানি বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু তা আমদানির চেয়ে অনেক কম। এখন কথা হচ্ছে, কতদিন এই অস্থিরতা চলবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে, অনেক হয়েছে, আর নয়। যে করেই হোক আমদানি কমাতেই হবে। এ ছাড়া এখন আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই। আর যদি এটা করা না যায়, তাহলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বাড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি