সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বিশ্ব ফুটবল। কিংবদন্তিকে শেষ বিদায় জানাতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যোগ দেন ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে সাবেক-বর্তমান ফুটবলাররাও। যদিও ব্রাজিলের ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ী দলের শুধু মাউরো সিলভা ছাড়া কাউকেই দেখা যায়নি পেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক জানিয়েই দায় এড়িয়েছেন পেলের উত্তরসূরী নেইমার, রোনালদো, কাফু, কাকাসহ বাকিরা। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্ব ফুটবলে।
ও’রেই কিংবা ফুটবলসম্রাট। কত নামেই না ডাকা হয় তাকে। তারপরও বিশেষণে বাধা যায় না ফুটবলের এই কিংবদন্তিকে। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলকে যিনি নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের তিনবারই বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ফুটবলের এ মহানায়ক। সেই কিংবদন্তিই পৃথিবীর সব মায়া পেছনে ফেলে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। যার প্রয়াণে শোকাস্তব্ধ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গণ।
ফুটবলসম্রাটকে শেষবারের মতো দেখতে সান্তোসের ভিলা বেলমিরোতে দেখা গেছে জনতার ঢল। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) তাকে সম্মান জানতে তার কফিনের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। উপস্থিত ছিলেন খোদ ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, ছিলেন পেলের সতীর্থরাও। পেলের ক্লাব সান্তোসের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব করিন্থিয়ান্সে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কাটানো অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার নেতোকেও কাঁদিয়েছে তার প্রয়াণ। উপস্থিত ছিলেন পেলের শেষকৃত্যের সব আনুষ্ঠানিকতায়।
মাঠের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল আর্জেন্টিনার সমর্থকদেরও উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে পেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। তবে, পুরো বিশ্বকে আঙ্গুল তোলার উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে একটি ঘটনা। পেলের পর ব্রাজিলের হয়ে বাকি দু’বার বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াডের খেলোয়াড়দের মধ্যে ১৯৯৪ এর বিশ্বকাপজয়ী মাউরো সিলভা ছাড়া শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন না কেউই।
১৯৯৪ কিংবা ২০০২, কোনো দলের একজন ফুটবলারকেও দেখেনি ফুটবলবিশ্ব। এতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্বব্যাপী। এবার কাতারে ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী রোনালদো নাজারিও, কাকা, কাফুসহ আরও অনেকেরই সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে, যেই পেলে ব্রাজিলকে এনে দিয়েছেন সর্বকালের সেরা অর্জন তার শবযাত্রায়ই ছিলেন না তার উত্তরসূরীরা। শেষযাত্রায় আসেননি বর্তমানে ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার নেইমার জুনিয়রও।
শুধু নেইমারই নন, উপস্থিত ছিলেন না ব্রাজিলের ২০২২ বিশ্বকাপে স্কোয়াডে থাকা কোনো খেলোয়াড়ই। নেইমার ছাড়াও সান্তোস থেকে বেড়ে ওঠা আরেক খেলোয়াড় রদ্রিগোর অনুপস্থিতিও মেনে নিতে পারছেন না ব্রাজিলিয়ান ফুটবল সমর্থকরা।
পেলেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দেওয়া নেইমারের পোস্টে একজন ভক্ত লিখেছেন, ‘বলাটা সহজ, কিন্তু তুমি তোমার বাবাকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেই আসোনি।’ এরপরই ব্রাজিলের এই তারকা নিজের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মন্তব্যঘর শুধু পরিচিতদের জন্য সীমিত করে দেন।
তবে সমালোচনা বেশি হচ্ছে কাকার অনুপস্থিতিতে। গতমাসেই কাকা বলেছিলেন, ব্রাজিলিয়ানরা তাদের ফুটবল কিংবদন্তিদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। পেলের শেষকৃত্যে সাবেক এই মিডফিল্ডার না থাকায়, এবার সেই একই কথা তার দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছেন সাবেক ফুটবলার থেকে শুরু করে সমর্থকরা। অনেকেই ধারণা করছেন, খেলোয়াড়ি জীবনে এই ফুটবলারদের পেলে সমালোচনা করেছিলেন বলেই তার শেষকৃত্যে যাননি তারকা ফুটবলাররা।
কাকার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জোয়াও ভিতর কাস্তুদিও নামের একজন কমেন্ট করেছেন, ‘তুমি এমনকী লোক দেখানোর জন্য হলেও এমন একজনের শেষকৃত্যে উপস্থিত হওনি, তার কারণে এই সুন্দর জীবনটা উপভোগ করতে পারছো।’
উপস্থিত ছিলেন না পেলের সতীর্থ বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলাররাও। অবশ্য তাদের ক্ষেত্রে যৌক্তিক কারণ তাদের বয়স। পেলের সঙ্গে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে খেলা মারিও জাগালো কিংবা ১৯৭০ এ পেলের সতীর্থ রিভেলিনোদের শারীরিক অবস্থা তাদের অনুকূলে নেই। তবে ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যম জানিয়েছে, কিংবদন্তি সতীর্থের মৃত্যুতে দারুণ ব্যথা পেয়েছেন তারা।
সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের মৃত্যুর পর শুধুমাত্র সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেই দায় এড়িয়েছেন রোনালদো নাজারিও, রবার্তো কার্লোস, কাকা ও নেইমাররা। কেউ আবার সে দায়িত্বটুকুও পালন করেননি। ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলের প্রয়াণে তার উত্তরসূরীদের এমন দায়িত্বহীন আচরণ সমালোচনার ঝড় তুলেছে। জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের।
সমালোচনার প্রেক্ষিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী কাফু ও রিভালদো। কাফু বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমি পেলের শেষকৃত্যে উপস্থিত হতে পারিনি। আমি আমার পেশার খাতিরে পৃথিবীর আরেক মাথায় ছিলাম। আমার ব্রাজিলে ফেরার ফ্লাইট ছিল বুধবার। এটা কি পেলের প্রতি আমার অনুভূতি বদলে দেবে, কিংবা তিনি আমার কাছে ফুটবলার ও মানুষ হিসেবে যা, তা কি বদলে যাবে? ‘কখনই না!’
রিভালদোও একই পথে হেঁটেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এই বিশ্বকাপজয়ী বলেন, ‘এমনকি আমি যদি ব্রাজিলেও থাকতাম, তার শেষকৃত্যে উপস্থিত হতাম কি না আমি জানি না। আমি এমন সময়ে শ্রদ্ধা জানাতে পছন্দ করি না। আমি তাদের বিরুদ্ধে না যারা এমনটা করে। আমি পেলের সঙ্গে দেখা করেছি, আমি তার সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি এবং আমার সুযোগ হয়েছে তিনি যখন জীবিত ছিলেন তখন সম্মান জানানোর।