গ্রেপ্তার হওয়া এস আই আকবরসহ চার আসামির ডিসচার্জ আবেদন খারিজ করে দিয়ে সিলেটের আলোচিত রায়হান হত্যার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সিলেট মহানগর আদালতের বিচারক আব্দুর রহিম আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় আদালতে এস আই আকবরসহ আসামি হওয়া পুলিশের ৫ সদস্য উপস্থিত ছিল। মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ই মে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, গত ১২ই এপ্রিল মহানগর আদালতে সিলেটের আলোচিত এ মামলার বিচার শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধান আসামি আকবরসহ ৪ আসামি আদালতে মামলা থেকে অব্যাহতি দানের আবেদন করেন। এ আবেদনের কারণে ওইদিন চার্জগঠন করা হয়নি। গতকাল আদালতে প্রথমে অব্যাহতি দানের আবেদনের উপর শুনানি হয়।
শেষে আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলার চার্জগঠন করেন। দেড় বছর আগে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নগরীর নেহারী পাড়ার যুবক রায়হানের উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে। ওইদিন কাস্টঘর এলাকা থেকে তাকে আটক করে ফাঁড়িতে এনে মারধর করা হলে সে গুরুতর অসুস্থ হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা বেগম ৫ পুলিশ সদস্য ও কোম্পানীগঞ্জের কথিত সাংবাদিক নোমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ৫ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এমএ ফজল চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে অব্যাহতি আবেদনের শুনানি হয়। পরে আদালত আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলার চার্জগঠন করেন। ফলে আনষ্ঠানিকভাবে আলোচিত এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো। ২০২০ সালের ১০ই অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নগরীর আখালিয়া নেহারিপাড়ার যুবক রায়হান আহমদকে নির্যাতন করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ই অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে প্রধান অভিযুক্ত আকবর ১৩ই অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। ৯ই নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২১ সালের ৫ই মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, মো. হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির টুআইসি পদে থাকা মো. হাসান উদ্দিন ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগপত্র দেয়া হয়। অভিযোগপত্রে ৬ আসামির মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাবন্দি। আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমান পলাতক। এদিকে, ছেলে খুন হওয়ার দীর্ঘ দেড় বছরে বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন রায়হানের মা সালমা আক্তার। তবে একটু দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন রায়হানের মা। এদিকে, গতকাল মামলার বিচার চলাকালে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। দেড় বছর পর হলেও মামলার বিচার শুরু হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে মামলার রায় ঘোষণার দাবি জানান তিনি। সালমা বেগম জানিয়েছেন, ঘটনার পর মন্ত্রী, এমপি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে দ্রততম সময়ে বিচার শেষ হওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এবার দ্রুত বিচার শেষ করে রায় প্রদান করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সালমা বেগম। বলেন, আসামিরা চতুর। তারা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সব চেষ্টাই করে যাচ্ছে।