ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতিতে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মেয়রদের দাবি ভিন্ন। নগরপিতাদের সবাই বলছেন, নগর কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালাচ্ছে সাধ্যমতো। কিন্তু দায় নিতে হবে নাগরিকদেরও। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসম্পৃক্ততা ও কীটতাত্ত্বিক সক্ষমতাকে গুরুত্ব না দেয়ায় অবনতি হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতির।
দিন যত যাচ্ছে ততই অবনতি হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতির। আক্রান্ত কিংবা মৃত্যু–দুই সূচকেই বছরের সবচেয়ে নাজুক সময় পার হচ্ছে চলতি মাসে। এ মাসের প্রথম ১৮ দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ১১ হাজার ছুঁইছুঁই, আর প্রাণহানি ৪১ জনের।
আর এ অবস্থায় যেমন রয়েছে জনসচেতনতার অভাব, তেমনি প্রশ্ন উঠছে সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যকর ভূমিকা নিয়েও।
ডেঙ্গুতে সবচেয়ে নাকাল রাজধানী ঢাকা। চলতি মৌসুমে সাড়ে ১৯ হাজার রোগী ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে, যা সারা দেশে মোট ভর্তির ৭২ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরের দুই এলাকা মিরপুর, উত্তরা এবং ঢাকা দক্ষিণের তিন এলাকা যাত্রাবাড়ী, মুগদা, ধানমন্ডিকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চলছে দাবি করেও ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলছেন, সামাজিক আন্দোলন ছাড়া একা কিছু করতে পারবে না সিটি করপোরেশন।
রাজধানীর বাইরে সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ চট্টগ্রাম ও বরিশালে। চলতি বছর চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৫৫৪ জন ও বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি রোগী প্রায় চারশ। মেয়রদের কেউ দাবি করেন, রোগীদের বড় অংশ বাইরে থেকে আসা, আবার কেউ দায়িত্ব চাপাচ্ছেন নাগরিকদের ওপরও।
সিটি করপোরেশনের বাইরে এবার কক্সবাজার, পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়ার অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বড় ঘাটতি জনসম্পৃক্ততা আর কীটতত্ত্ব সক্ষমতা। আর এখানে ব্যর্থতা স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু কমাতে হলে মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই।
চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ২৭ হাজার রোগী, প্রাণহানি ৯৯ জনের।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে এবার অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী দেখা যাচ্ছে।