অনলাইন বা ভার্চ্যুয়াল জুয়ায় বুঁদ হচ্ছে মানুষ। উচ্চবিত্ত থেকে সাধারণ পরিবারের সদস্যরাও আসক্ত হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল জুয়ায়। সিআইডি বলছে, দেশে প্রথাগত জুয়া খেলার আইন রয়েছে। কেউ অর্থ দিয়ে জুয়া খেললে পুলিশ তাকে ধরে মামলা প্রদান করে এবং আদালতে হাজির করে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত দেশে কোনো অনলাইন জুয়ার আইন নেই।
এতে বেটিং সাইটগুলোতে টাকা প্রদান করে জুয়া খেললে পুলিশ তাকে নিয়মিত মামলা দিয়ে আদালতে হাজির করে। কিন্তু, অনলাইন জুয়ার ক্ষেত্রে কাউকে আটক করলে পুলিশ তাকে প্রতারণার মামলা দিয়ে থাকে। এছাড়াও জুয়া আইনের ভার্চ্যুয়াল জুয়ার আপডেট না থাকার কারণে অনেকেই জামিনে বের হয়ে আসছে।
দেশে অনলাইন জুয়ার আইন না থাকার কারণে গুগলকে চিঠি দিতে পারছে না সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)।
এ বিষয়ে সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহমুদুল ইসলাম তালুকদার মানবজমিনকে জানান, দেশে অনলাইন জুয়ার আইন নেই। এতে আমরা সার্চ ইঞ্জিন গুগলকে চিঠি দিতে পারছি না এই বলে যে, অনলাইন জুয়া বাংলাদেশে নিষিদ্ধ এবং তারা যাতে সাইটগুলো বাংলাদেশের গেটওয়েতে কনটেন্টগুলো আপডেট না করে। তিনি আরও জানান, সিআইডি যাদেরকে অনলাইন জুয়ার কারণে গ্রেপ্তার করেছে তাদের প্রতারণার মামলা দেয়া হয়ে থাকে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
বিষয়টির আইনগত ব্যাখার জন্য যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মঞ্জিল মোরশেদ মানবজমিনকে জানান, ‘জুয়ার আইনটি আপডেট করতে হবে। সেখানে ভার্চ্যুয়াল জুয়ার কথা উল্লেখ করতে হবে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে পরিচালিত কমপক্ষে ১০০টি সাইট সক্রিয়। আসক্ত হচ্ছে বেশি শিক্ষার্থীরা। করোনার সময় শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকার কারণে এর ব্যাপকতা বেড়েছে অনেক। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে একজন সিএনজিচালকও এই জুয়ায় এখন মত্ত। বিদেশি সাইট হওয়ার কারণে দেশের টাকা পাচার হচ্ছে বিদেশে। যে সব সাইট বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে ওই সব সাইটগুলোতে ঢুকতে হলে বাংলাদেশি দ্বিগুণ টাকা দিয়ে ওই দেশের কয়েন বা কার্ড ক্রয় করে অনলাইন জুয়ায় অংশ নিতে হয়। এতে বাংলাদেশের অর্থ দ্বিগুণ পাচার হচ্ছে বিদেশে।
সিআইডি’র সিপিসি সূত্রে জানা গেছে, অনলাইন সাইটগুলো নেট দুনিয়ায় বেটিং সাইট নামে পরিচিত। অনেক সাইটগুলোতে এমনিতেই অনেকে ঢুকতে পারেন। আবার কোনো বেটিং সাইটগুলোতে নিবন্ধন করে ঢুকতে হয়। নিবন্ধন করতে আবার দ্বিগুণ টাকা দেয়া লাগে। আবার কোনো কোনো সাইটগুলোতে ডলার দিয়ে প্রবেশ করেন। আবার যে দেশগুলোর সাইট নিজস্ব তাদের টাকা দিয়ে কয়েন ক্রয় করে সাইটগুলোতে প্রবেশ করতে হয়।
সূত্র জানায়, আবার কিছু কিছু দেশে কোনো বেটিং সাইটগুলোতে বিট কয়েনের মাধ্যমে কেউ অনলাইন জুয়ায় অংশ নিচ্ছে। জুয়ার পর ওই সব অর্থগুলো ক্রেডিট কার্ড, ই-ব্যাংকিংয়ের ও হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে।
সিআইডি জানিয়েছে, সিআইডি’র পরামর্শ অনুযায়ী কিছু কিছু বেটিং সাইট বিটিআরসি বন্ধ করে দিয়েছে। সাইটগুলো বন্ধ হলেও চক্রটি আবার নতুন করে ওই নামে শুধু সংখ্যা বদল করে আরেকটি অনলাইন জুয়ার নতুন সাইট খুলেছে। সেটিও নজরদারিতে রাখছে সিআইডি’র সিপিসি।