1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
ঢামেকে বছরে আড়াইহাজার ময়নাতদন্ত | Bastob Chitro24
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন

ঢামেকে বছরে আড়াইহাজার ময়নাতদন্ত

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২

আবদ্ধ ঘর। স্বজনদের আর্তনাদ। চারিদিকে লাশের গন্ধ। মরদেহ নিয়ে প্রবেশ করছে এম্বুলেন্স। সাদা কাপড়ে ঢাকা কারও বীভৎস দেহ, আবার কারও স্বাভাবিক। এম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে ট্রলিতে করে লাশকাটা ঘরে নিয়ে যায় মরদেহটি। নমুনা সংগ্রহে লাশ কাটতে প্রস্তুত ডোমরা। ঘণ্টা কয়েক পরেই কাটাছেঁড়া রক্তমাখা নিথর দেহ বেরিয়ে আসে।

মৃত্যুর পরেও লাশের গায়ে কাটার যন্ত্রণায় ব্যথিত হয় স্বজনরা। মর্গের বাইরে নাকে গন্ধ মাখিয়ে লাশ নিয়ে স্বজনদের ঘরে ফেরার অপেক্ষা যেন শেষ হয় না। ঢামেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে ঢামেকের মর্গে ২ হাজার ৬০০ এবং চলতি বছরে ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় চারশত লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে।
সরজমিন দেখা যায়, খুন, ধর্ষণ, আত্মহত্যা, সড়কে মৃত্যুসহ বিভিন্ন ঘটনায় মারা যান এসব মানুষ। আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ, পরিচয় শনাক্ত ও মৃত্যুর কারণ জানতে লাশগুলোর ময়নাতদন্ত করতে মর্গে পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে লাশ নিতে আসা স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে মর্গের চারিপাশ। প্রতিদিন থাকে এমনই হৃদয়বিদারক চিত্র। কেউ বুক চাপড়িয়ে, কেউ মাথায় হাত দিয়ে, কেউবা কাঁদতে কাঁদতে প্রিয়জন হারানোর বেদনায় সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। কেউ মর্গের সামনে মাটিতে লুটিয়ে অঝরে কাঁদেন। শেষবারের মতো দেখতে ছুটে আসে অনেকে। মরদেহটি বুঝে নেয়ার সময় আবার শুরু হয় কান্না। ধীরে ধীরে কান্নার শব্দ নিয়ে এগিয়ে চলে এম্বুলেন্স।
দুপুর ২টা। মর্গের সামনে স্বামীর লাশের অপেক্ষায় কিশোরগঞ্জের হাসনা বানু। একে একে ১০ থেকে ১৫ জন স্বজনের আগমন। সবার চোখ ছলছল করছে। আত্মচিৎকারে ভারী বাতাস। বিলকিস নামে একজন বলেন, ফুপা মারা গিয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল। তার কিছুক্ষণ পরেই মারা যান। জায়গাজমি নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ফুপার মাথায় তার ভাই বাঁশ দিয়ে বাড়ি দেয়। এতে ৬০ বছরের আফতাব উদ্দিন গুরুতর আহত হন। মাথার একটি অংশ ফেটে যায়।
বুধবার টঙ্গী থানা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক যুবক। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় লাশের ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসে সেখানকার দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনিও লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গের সামনে অপেক্ষা করছেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই যুবকের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে হয়তো তার পরিচয় মিলবে।
২৪শে মার্চ রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এবং সবুজবাগে পৃথক ঘটনায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে প্রেমিকের সঙ্গে অভিমান করে জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক মাদ্রাসাছাত্রী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। জান্নাতুল উত্তর বাড্ডা কামিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এ ছাড়া সবুজবাগের কাঠেরপুল এলাকার একটি বাড়ি থেকে কাওসার হোসেন নামে এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুটো ঘটনাই মঙ্গলবার রাতে ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, খবর পেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ও কাওসার নামে ওই যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে বন্দর থানা এলাকায় পুলিশের গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পড়ে মো. রাকিব (২২) নামে এক তরুণ মারা গেছেন। ২৩শে মার্চ সকালের দিকে তিনি গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়েন। পরে রাকিবকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। বেলা ১১টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।
২২শে মার্চ রাতে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর পেট্রোল পাম্প এলাকায় রুমমেটের ছুরিকাঘাতে ডালিম (৩৫) নামে গার্মেন্টকর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঘাতক মনছু বিল্লাহকে আটক করেছে পুলিশ। গুরুতর আহত অবস্থায় ডালিমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ মানবজমিনকে বলেন, ২০২১ সালে ঢামেকের মর্গে ২ হাজার ৬০০ জনের মতো লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছি। এ বছর ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় চারশতর কাছাকাছি হয়েছে। এরমধ্যে গত বছরে অজ্ঞাত নবজাতকের ময়নাতদন্তের সংখ্যা প্রায় ৮০-১০০। চলতি বছরে এর সংখ্যা প্রায় ১৫টির বেশি। ময়নাতদন্ত করায় স্বজনদের অবশ্যই খারাপ লাগবে। মৃত্যুর পরেও আবার তাকে যন্ত্রণা দেয়া হচ্ছে। ময়নাতদন্তের সঙ্গে অনেক কিছুর সংশ্লিষ্টতা আছে। ইন্সুরেন্সের ভাতা, ব্যাংকের টাকা, অথবা মামলার প্রয়োজন, পরিচয় শনাক্ত ও মৃত্যুর কারণ জানা। ময়নাতদন্তের এই রিপোর্টগুলো তাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট যখন পায় এবং সব কাজগুলো সুন্দরভাবে শেষ হয় তখন তারা মনে করে ময়নাতদন্ত করা অনেক জরুরি। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মনে হয় মৃত ব্যক্তিকে আবার কষ্ট দেয়া হচ্ছে। আমাদের কাছেও বিষয়টি খারাপ লাগে। কিন্তু যখন মনে হয় এটি আমাদের পেশা তখন আর খারাপ লাগা কাজ করে না। তবে এটা খুবই বেদনাদায়ক মৃত ব্যক্তিকে মৃত্যুর পরেও কাটাকাটি করে আরেক যন্ত্রণা দিতে হয়। তিনি আরও বলেন, মর্গে ডোমের সংখ্যা বর্তমানে দুইজন। আরও বাড়ানোর চিন্তা করছি। সকাল থেকে সারাদিন তাদের অপেক্ষা করতে হয় লাশের জন্য। রাত্রে কোনো লাশ আসলে তাকে বুঝে নিতে হয়। অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় ঢামেকের মর্গে ময়নাতদন্তের চাপ খুব বেশি। সেই পরিমাণে আমাদের লোকবল নেই। লোক কম হওয়ায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দিতে দেরি হয়। এই মুহূর্তে আমাদের লোকবল বাড়ানো খুবই প্রয়োজন। প্রতিদিন যে মরদেহগুলো আসে সেগুলো সম্পন্ন করার চেষ্টা করি। কখনো কখনো একদিনে ১৫টা মরদেহ মর্গে আসে। আবার কখনো ৫ থেকে ৬টা। একটি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পূর্ণ করতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগে। আবার কোনো কোনো লাশের ময়নাতদন্ত করতে দুই-আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে গুলিতে নিহত লাশগুলোর ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় ও বেগ পেতে হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি