1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
সারাদেশে ক্ষোভ-অসন্তোষ | Bastob Chitro24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

সারাদেশে ক্ষোভ-অসন্তোষ

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০২২

জ্বালানির দাম বৃদ্ধি : ব্যয় বাড়বে জীবনযাত্রায়

করোনা মহামারির চাপ সামলাতে না সামলাতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে দেখা দিচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা। দেশে দেশে দেখা দিচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি, কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। পরিস্থিতি সামলা দিতে সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে জ্বালানি তেল খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার কৌশল নিয়েছে। যার জেরে হঠাৎ করে ৫ আগস্ট মধ্যরাতে রেকর্ড পরিমাণে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। ৪২ শতাংশ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করায় ভোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ করে এতো দাম বৃদ্ধি করায় পেট্রলপাম্পগুলোতে যেমন যানবাহনের দীর্ঘলাইন দেখা যায়; অন্যদিকে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ হচ্ছে। এমনকি রাজধানীর শ্যামলীতে পুলিশের গাড়ির ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করায় পরিবহন মালিকরা যানবাহন রাস্তায় নামায় মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। আবার গতকালই বাস, লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। গার্মেন্টস মালিকরা এতোমধ্যেই জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শিল্পমালিকরাও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অবশ্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় গতকাল জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে দেশবাসীকে জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা এবং বিদেশে পাচার ঠেকাতেই ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল, অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম বলেন, জ্বালানির দাম এতো বেশি বৃদ্ধি করার প্রয়োজন ছিল না। রাতের অন্ধকারে ঘোষণা দিয়ে বাড়ানো হলো তেলের দাম। কোনো প্রস্তুতি নেই, জনগণের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা নেই। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন কমতির দিকে, তখন বাংলাদেশে দাম বৃদ্ধি করা হলো। এটা অযৌক্তিক, জনগণকে বিপদে ফেলবে।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি গতকাল ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। সর্বোত্রই এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্ক হয়েছে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে মানুষ যেমন ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেছে। তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। কেউ কেউ এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটে সবধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। রাজধানী ঢাকায় অধিকাংশ গণপরিবহন বন্ধ রাখায় কর্মজীবী মানুষকে চরম দুর্দশায় পড়তে হয়। অনেকেই মাইলের পর মাইল হেঁটে কর্মস্থলে যেতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিল করেছে বিক্ষুব্ধ মানুষ। গণপরিবহনের ভাড়ার বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়ার আগেই অনেক গণপরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের হাতাহাতি এবং ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ময়মনসিংহ জেলাসহ বিভিন্ন জেলার দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়ে যান মানুষ। অসংখ্য যাত্রীকে টার্মিনালে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। যেসব রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল করে, সেসব বাসের যাত্রীদের অভিযোগ ৫শ’ টাকার ভাড়া ৭শ’ টাকা এবং একশ’ টাকার ভাড়া দেড়শ’ টাকা আদায় করা হয়। নিরুপায় হয়ে যাত্রীরা বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যান। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সাম্প্রতিক বছরগুলোর হিসাবে সর্বোচ্চ। সেটা সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে। মূলত ডিজেলের ব্যবহারে যে খাতগুলোতে বেশি ব্যয় হয়, যেমন পরিবহন, কৃষি খাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে, সেক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে ভোক্তার ওপর পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রতিক্রিয়া হিসাবে আসবে। পরিবহন মালিকরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া সরাসরি ভোক্তার ওপর পড়বে। কৃষি খাতে শুষ্ক মৌসুমে ডিজেলের মাধ্যমে সেচের ব্যবহারের ওপরও প্রতিক্রিয়া পড়বে। ফলে শাকসবজিসহ কৃষিপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া পড়বে।

জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ করে। একই দাবিতে ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে শাহবাগে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়। রাজধানীর শ্যামলীতে শিশুমেলার সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় রাস্তা দিয়ে একটি পুলিশের গাড়ি যাচ্ছিল। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়িটি ঘিরে ধরে ভাঙচুর করেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, যতদিন সম্ভব ছিল, ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির চিন্তা করেনি। অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা এডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনঃবিবেচনা করা হবে।

এর আগে প্রায় ১০ মাস আগে ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন ৬৫ টাকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৮০ টাকা করা হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট ডিজেল ও কেরোসিনে প্রতি লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। ৮০ টাকা লিটারের ডিজেল ও কেরোসিন এখন ১১৪ টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এক ব্যারেল ক্রুড অয়েলের দাম ১৪০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যা এখন কম বেশি ৯০ ডলারে নেমে এসেছে। ৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজার এক ব্যারেল ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ৮৯ থেকে ৯৫ ডলারের মধ্যে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৪, অকটেন ৪৬ এবং পেট্রল ৪৪ টাকা। এতে করে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা। পেট্রলের দাম ৫১.১৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটারের দাম হয়েছে ১৩০ টাকা। আর অকটেনের দাম বেড়েছে ৫১.৬৮ শতাংশ, প্রতি লিটার কিনতে গুনতে হবে ১৩৫ টাকা। যদিও গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অকটেন এবং পেট্রল কিন্তু আমাদের কিনতে হয় না। এটা আমরা যে গ্যাস উত্তোলন করি, সেখান থেকে বাই প্রডাক্ট হিসেবে পেট্রল ও অকটেন পাই। বরং অকটেন আমাদের যতটুকু চাহিদা তার চেয়ে অনেক বেশি পেট্রল ও অকটেন আমাদের আছে। আমরা অনেক সময় বাইরে বিক্রিও করি।’ কিন্তু জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই লুকোচুরিটা কেন? হঠাৎ করে গভীর রাতে ভোক্তা পর্যায়ে কারো সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে হুট করে ইচ্ছে মতো একটা দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলো কেন?

গত শুক্রবার রাত ১০টার জ্বালানির তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে পর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পেট্রলপাম্পগুলোতে আগের দামে তেল কিনতে হিঁড়িক পড়ে বাস, ট্রাক ও বাইক চালকদের। পাম্প মালিকদের অনেকে অতিরিক্ত লাভের আশায় পাম্প বন্ধ করে আবার রাত ১২টা পর থেকে বিক্রি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন পেট্রলপাম্পে দেখা যায়, শত শত বাইক আগের দামে জ্বালানি নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো পাম্পের মালিক ‘জ্বালানি নেই’ অজুহাতে বিক্রি বন্ধ করে দেন। আবার কোনো কোনো পাম্প সামান্য কিছু করে জ্বালানি বিক্রি করেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। অনেক বাইক মালিক পাম্পেই প্রতিবাদ করেন।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানির দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা আছে। তবে সেটির একটা নির্দিষ্ট লিমিট আছে। যাতে এটি গ্রাহক পর্যায়ে প্রভাব ফেলতে না পারে। কিন্তু হঠাৎ করে এতো বেশি বেড়ে যাওয়ার সাথে জ্বালানি রিলেটেড অন্যান্য বিষয়েও প্রভাব ফেলবে। সেটি পাবলিক পর্যায়ে বেশি হবে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত ছিল অন্যান্য সব বিষয়ও বিবেচনায় নিয়ে দাম বাড়ানো। এখন এটি সাধারণ পাবলিকের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ বলেন, জ্বালানির সাথে সবকিছু সম্পর্কিত। বেশির ভাগ জিনিসের সাথেই জ্বালানির সম্পর্ক রয়েছে। আর সেগুলো উৎপাদনের ক্ষেত্রে যখন উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এবং গ্রাহক পর্যায়ে প্রভাব ফেলবে। সরকার চাইলে ক্রমান্বয়ে বাড়াতে পারতো। কিন্তু হুট করে এত বেশি বাড়ানোটা সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি করবে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, বন্যার ভয়াল গ্রাসে এমনিতেই সিলেটের মানুষ পার করছে দুর্বিষহ এক জীবন। নানামুখী সংকটে অস্থির। এর মধ্যে ঘটেছে দেশ ব্যাপী মূল্যবৃদ্ধি। এই ঘটনায় জনজীবনে নেতিবাচক এক প্রভাব পড়েছে। গতকাল সকাল থেকে পরিবহন সঙ্কট। ভোগান্তিতে পড়েন কাজে বের হওয়া মানুষ। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা। এদিকে, দাম বাড়ায় সুনামগঞ্জের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সবকটি রুটে বাসাভাড়া বেড়েছে। এছাড়া অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে চলাচলরত বাসের সংখ্যা। গত শুক্রবার রাতে তুলকালাম ঘটে সিলেটজুড়ে।

ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহ থেকে দুরপাল্লার বাস প্রায় ৮০ শতাংশ বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে দ্বিগুন ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। এই নিয়ে চালক ও সহকারীদের সাথে যাত্রীদের কথা কাটাকাটি এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। তবে ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন বাস চালকরা। গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর পাটগোদাম ব্রিজ মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ডে শত শত গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এদিকে, এতে পড়েছেন বিপাকে যাত্রীরা। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠেছেন। আবার কেউ কেউ ভাড়া দ্বিগুন হওয়ায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় অস্থিরতা ও নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। খুলনার শতকরা ৯০ ভাগ পেট্রলপাম্প বন্ধ রাখা হয়। শত শত বাইক ও যানবাহন এ পাম্প সে পাম্প ঘুরেও তেল পায়নি। নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। গতকাল ক্রেতারা অভিযোগ করেন, সব পেট্রলপাম্পেই আগের দামে কেনা জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে। অথচ নতুন দামে তা বিক্রি করা হচ্ছে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই পাম্প মালিকদের মুনাফা করার সুযোগ করে দিয়েছে।

নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, নোয়াখালীতে যাত্রীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে একইভাবে অভ্যন্তরীণ রুটের বাসগুলোতেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গতকাল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড, জামে মসজিদ মোড়, হাসপাতাল সড়কের বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে নোয়াখালীর সোনাপুর-ঢাকা রুটে চলাচলকারী কিছু পরিবহন ছাড়া সব পরিবহনের ভাড়ার চেয়ে ৫০ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে।

বগুড়া ব্যুরো জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে বগুড়া জেলা বাসদ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গতকাল দুপুরে রোদ্র খরতাপ উপেক্ষা করে প্রতিবাদে মিছিল বের করেন দলের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে নেতারা বলেন এমনিতেই দেশে করোনার ধকল কাটিয়ে ওঠেনি। তারপর হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি হবে মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের শামিল। দেশের স্বার্থে অবিলম্বে জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর জোর দাবি জানানো হয় সমাবেশের পক্ষ থেকে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রুয়েটের সামনে ঢাকা রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ বাইক চালকরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পেট্রলপাম্পটি পুনরায় খুলে দিয়ে তেল দেওয়া শুরু করলে রাস্তা অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা। বৃদ্ধির খবরে রাজশাহীর পাম্পগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, আশুলিয়ায় মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় আরও বেশ কয়েকজন পালিয়ে যায়। গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার শিমুলতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে তাদের গ্রেফতার করেন পুলিশ।

স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে জানান, মাগুরার পরিবহন খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাস ও যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কমেছে। নতুন ভাড়া নির্ধারিত না হওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি সীমিত পরিমাণে বাস চালাচ্ছে। আর কিছু পরিবহন ইতিমধ্যে যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাস চালাচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। কয়েকটি কোম্পানি যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে পরিবহন চালু রাখছে।

স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর থেকে জানান, মাদারীপুরে ফিলিং স্টেশনগুলোতে গত শুক্রবার রাতে ছিল মোটরবাইকের দখলে। বৃদ্ধির কথা শুনে পেট্রোল পাম্পগুলোতে ভিড় করতে শুরু করেন মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ তেল চালিত ছোট যানবাহনের চালকেরা। এদিকে এতো মোটরসাইকেলের চাপ নিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পাম্পের কর্মচারীদের।

ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, ভোলায় মধ্যরাতে কলস নিয়ে পেট্রোল কিনতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন ভোলা সদর উপজেলায় এক যুবক। গত শুক্রবার দিনগত রাত ১২টার দিকে ভোলার পরাণগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মধ্যরাত থেকে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়ার খবর জেলায় ছড়িয়ে পরে।

পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ের পেট্রলপাম্পগুলোতে মোটরসাইকেল চালকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। গত শুক্রবার রাত ১১টার পর থেকেই এই চিত্র। বাইকাররা অভিযোগ করে বলেন, খবরটি জানার পর থেকে ঠিকমত তেল দিচ্ছে না পাম্প মালিকরা।

হিলি সংবাদদাতা জানান, বৃদ্ধিও খবর ছড়িয়ে পড়লে তার কার্যক্রর হবার আগেই এই বিভিন্ন উপজেলায় রাস্তার পাশে বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধি করে দেন। রাত ১০টার পর থেকেই পেট্রল প্রতি লিটার ১৩০ টাকা দরে বিক্রি শুরু করে। এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মোটরসাইকেল চালকদের সাথে বাকবিতণ্ডারও সৃষ্টি হয়। সরে জমিনে দেখা যায়, রাত ১০টার পর থেকেই ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার ফিলিং স্টেশনগুলোতে ৫০ থেকে ৬০টি মোটরসাইকেল সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এ সব সারিতে আরো নতুন নতুন মোটরসাইকেল এসে যুক্ত হয়।

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দেশের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল কমে গেছে। গতকাল ভোর থেকে দূরপাল্লা ও আঞ্চলিক রুটে গণপরিবহন কম চলার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কর্মস্থলমুখী মানুষদের। স্বল্প সংখ্যক বাস চলতে দেখা গেলেও যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা পেট্রলপাম্পগুলোতে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়। পূর্বের দামে তেল সংগ্রহ করার আশায় শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে ভিড় করেন ক্রেতারা। এ সময় ফিলিং স্টেশনে ক্রেতাদের হট্টগোল ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

বিরামপুর (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার বিরামপুরে কৃষকরা মৌসুমে ধান বিক্রি করে সারা বছর সংসার চালানোর পাশাপাশি মৌসুমীর আবাদ করতে হয় হঠাৎ করে দ্বিগুণ বাড়ায় আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়কৃষকরা। এছাড়া হাজার হাজার ভুক্তভোগী মানুষ মোটরসাইকেল বাস ট্রাকের যাত্রীরা পড়েছে বিপাকে। ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুন। কর্মক্ষম কর্মহীন সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি