1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
ফাঁসির মামলা নিষ্পত্তিতে গতি | Bastob Chitro24
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

ফাঁসির মামলা নিষ্পত্তিতে গতি

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০২২

প্রথম ছয় মাসে দায়ের ৯১, নিষ্পত্তি ৮৮ মামলা, এখনো বিচারাধীন প্রায় সাড়ে ৮০০ ডেথ রেফারেন্স

দেশের ইতিহাসে প্রথমবার গত ৩০ মার্চ এক দিনেই ১২টি ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে হাই কোর্টে। অবকাশকালীন ছুটিতে গঠন করা ১১টি বিশেষ বেঞ্চ এসব রায় দেন। শুধু ওই এক দিনই নয়, চলতি বছরের শুরু থেকেই হাই কোর্টে গতি বেড়েছে ফাঁসির মামলা নিষ্পত্তিতে। মার্চ মাসের শেষ ১০ কার্যদিবসে ১১টি বিশেষ বেঞ্চে ৩৫টি ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আর এ বছরের প্রথম ছয় মাসে নিয়মিত তিনটি বেঞ্চে আরও ৫৩টি মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের মামলা নিষ্পত্তি হয়। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন পর্যন্ত হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলা নিবন্ধন হয় ৯১টি। এর বিপরীতে একই সময়ে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৮টি। এই নিষ্পত্তির হার অন্য বছরগুলোর প্রায় সমান। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখনো বিচারাধীন ডেথ রেফারেন্স মামলা প্রায় সাড়ে ৮০০।

আইনজীবীরা বলছেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দায়িত্ব নেওয়ার পরই পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে জোর দিয়েছেন। ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ বেঞ্চও তার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তার নানা ধরনের পদক্ষেপের কারণে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তিতে গতি বেড়েছে। তবে ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তিতে হাই কোর্টে আরও বেঞ্চ গঠন করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।
আইন অনুযায়ী কোনো মামলায় নিম্ন আদালত থেকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড হাই কোর্টের অনুমোদন ছাড়া কার্যকর করার সুযোগ নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী হাই কোর্টের অনুমোদন নিয়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কার্যকর করতে হয়। এ কারণে আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এমন মামলার নথিপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয় হাই কোর্টে। এসব মামলাই হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নিবন্ধন হয়। সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলা নিবন্ধন হয় ১১৪টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় মাত্র ৫৮টি। ২০১৬ সালে নিবন্ধনকৃত মামলা ১৬১, নিষ্পত্তি ৪৫। ২০১৭ সালে ১৭১টি মামলা নিবন্ধনের বিপরীতে নিষ্পত্তি হয় ৬৬টি মামলা। ২০১৮ সালে ৮৩টি মামলা নিষ্পত্তি হলেও ওই বছর নিবন্ধন হয় ১৫৪টি মামলা। ১০০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ২০১৯ সালে, ওই বছর নিবন্ধন হয় ১৬৪টি মামলা। ২০২০ সালে ১২৩টি মামলা নিবন্ধনের বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫টি। ২০২১ সালে হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তি হয় ৯০টি, নিবন্ধন হয় ১৪৮টি মামলা। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে (৩০ জুন পর্যন্ত) হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলা নিবন্ধন হয়েছে ৯১টি, এর বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৮টি মামলা। সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখার তথ্য অনুযায়ী, এখন বিচারাধীন ডেথ রেফারেন্স মামলার সংখ্যা ৮৪৪টি। এসব মামলায় ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার মিলে সারা দেশে সর্বমোট ৬৮টি কারাগারের কনডেম সেলে ফাঁসির আসামি ২ হাজারের বেশি। বর্তমানে হাই কোর্টে ২০১৭ সালে নিবন্ধনকৃত ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্র জানায়, ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করতে হয়, যেখানে মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের বক্তব্য ও বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলার তথ্যাদি সন্নিবেশিত থাকে। সবকিছু পাঠানো হয় সরকারি ছাপাখানায় (বিজি প্রেস)। সেখান থেকে বই আকারে প্রস্তুত হয়ে পেপারবুক হিসেবে আসার পর বিচারের জন্য পাঠানো হয় হাই কোর্ট বেঞ্চে। এই পেপারবুক তৈরিতে বিলম্ব হওয়াও ডেথ রেফারেন্স মামলা ঝুলে থাকার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া মামলা অনুপাতে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের অভাব তো রয়েছেই।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি গত ৩১ ডিসেম্বর দায়িত্ব নিয়েছেন। শুরুর দিন থেকেই তিনি পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে জোর দিচ্ছেন। এ বছর প্রথম ছয় মাসেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তিও তার পদক্ষেপের অংশ।এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, চলতি বছর শুরুর দিনই নতুন প্রধান বিচারপতি মামলা মনিটরিং করছেন। বর্তমানে তিনটি বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তি হয়। গত মার্চের অবকাশে ১১টি বিশেষ বেঞ্চ দিয়ে ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করেছেন প্রধান বিচারপতি। এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুতই মামলার জট কাটিয়ে উঠতে পারব আমরা। আগামী অবকাশেও ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতি বিশেষ বেঞ্চ দেবেন বলে আশা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হাই কোর্টের সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, কনডেম সেলে যেসব মানুষ বন্দি থাকেন তারা কেমন অবস্থায় থাকেন তা সবারই জানা। সেটা কোনোভাবেই সুখকর নয়। এ অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের মামলা নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার এমন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে দ্রুতই ডেথ রেফারেন্স মামলার জট কেটে যাবে। তিনি আরও বলেন, বেঞ্চ আরও বাড়ানো গেলে এ ধরনের মামলার চাপ কমবে। অবকাশকালীন ছুটিতে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগও প্রশংসনীয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি