1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
দূষণে হানা দিচ্ছে নানা রোগ | Bastob Chitro24
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন

দূষণে হানা দিচ্ছে নানা রোগ

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২২

বায়ু এবং শব্দদূষণে বিশ্বে শীর্ষের তালিকায় উঠে এসেছে রাজধানী ঢাকার নাম। অতিরিক্ত শব্দ, ধূলিকণা প্রভাব ফেলছে রাজধানীবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে। এর মধ্যে পানিদূষণে হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি। দূষিত বায়ু, পানি, অতিরিক্ত শব্দ ডেকে আনছে নানা রোগ।

এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের পৃথিবী, আমাদের স্বাস্থ্য’। দখল-দূষণে বিপন্ন পরিবেশ। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে আবহাওয়ায়। বায়ুদূষণে গত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় বিশ্বের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দূষিত বায়ুর রাজধানী হিসেবে ঢাকা এখন বিশ্বসেরা। অথচ বছর চারেক আগে ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণজনিত নানা অসুখ-বিসুখের কারণে প্রতি বছর ২৮ শতাংশ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। আর বিশ্বে ঠিক একই করণে গড় মৃত্যু মাত্র ১৬ শতাংশ। সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর চার বছর পার হয়েছে। সেই সময়ের চেয়ে দেশের বা ঢাকার বাতাস এখন আরও বেশি দূষিত।
বায়ুদূষণের পর শব্দদূষণেও বিশ্বের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম; রাজধানী ঢাকায় এই দূষণের মাত্রা অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে বেশি। রাজশাহী রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য, যেখানে বিশ্বের ৬১ শহরের শব্দদূষণের মাত্রা তুলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২ : নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় শব্দের সর্বোচ্চ তীব্রতা ১১৯ ডেসিবল, যা এ প্রতিবেদনে আসা শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৯৯ সালের গাইডলাইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকার জন্য শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৫৫ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবল। ২০১৮ সালের সর্বশেষ হালনাগাদ গাইডলাইনে সড়কে শব্দের তীব্রতা ৫৩ ডেসিবলের মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ করা হয়। এই হিসাবে ঢাকার বাসিন্দাদের পথ চলতে গিয়ে জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সীমার দ্বিগুণ মাত্রার শব্দের অত্যাচার সহ্য করতে হয়। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু বলেন, ‘শব্দদূষণের ফলে শ্রবণক্ষমতা কমে যায়। অতিরিক্ত শব্দের মাঝে বসবাস করলে মাথা ঘোরে, কানে শব্দ হয়, ঘুম কমে যায়, অমনোযোগী হয়ে যায় মানুষ। কোনো কিছুতে গভীর মনোযোগ দিতে পারে না মানুষ। গ্যাস্ট্রিক, আলসার, হৃদরোগ, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগে মানুষ। গর্ভবতী নারী ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে শব্দদূষণের প্রভাব আরও মারাত্মক হয়।’ এ মাসেই সুইস সংস্থা আইকিউ এয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বের কোনো দেশই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে পারেনি; আর দূষণের মাত্রার বিচারে সবার ওপরে রয়েছে ঢাকার নাম। ঢাকার বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে এক সময় ইটভাটাগুলোকে সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে মনে করা হতো। এখন পরিস্থিতির বদল হয়েছে। ঢাকার দূষণের প্রধান কারণ নির্মাণকাজের সময় সৃষ্ট দূষণ। রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর নির্মাণের সময় সৃষ্ট ধুলাবালু বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়েছে। এ ছাড়া আছে যানবাহনের দূষণ। যানজট এ দূষণ আরও বাড়িয়ে তোলে। রাজধানীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার হাল করুণ। সেটা দূষণের একটি বড় কারণ। বেশির ভাগ বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে। নির্মাণকাজের সময় সৃষ্ট ধুলার মধ্যে বড় কণাগুলোর চেয়ে ক্ষুদ্র কণা অনেক বেশি ক্ষতিকর। এর সঙ্গে যানবাহনের দূষিত পদার্থগুলো মিলে রাসায়নিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিকর দ্রব্য তৈরি হচ্ছে। এটি শুধু শিশুস্বাস্থ্য নয়, যে কোনো বয়সী মানুষের জন্য ভয়াবহ শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে। মানুষের যেসব অসুখ এখন হচ্ছে, এর মধ্যে শ্বাসনালির অসুখ বেশি। ক্রনিক অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের নানা সংক্রমণ, হৃদরোগ, ¯œায়ুতন্ত্রের রোগ ঘটছে বায়ুদূষণের কারণে। মার্চ মাসের শুরু থেকেই রাজধানীজুড়ে প্রকোপ আকার ধারণ করেছে ডায়রিয়া। মহাখালী আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে প্রতিদিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে। দূষিত পানি থেকে ছড়াচ্ছে এই পানিবাহিত রোগ। মার্চ মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৬৮১ জন। পানি থেকে হওয়া সংক্রমণ ঠেকাতে দফায় দফায় চলছে পানি টেস্ট। ওয়াসা পানি পরিশোধনাগার, এলাকার সংযোগ জোন এবং বাসাবাড়ির লাইনের ঠিক আগে থেকে পানি নিয়ে টেস্ট করেছে। ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খান জানিয়েছেন, তারা পানি টেস্ট করে কোনো জীবাণু পাননি। পানি টেস্ট করেছে রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যতদিন পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ডায়রিয়া-কলেরার ঝুঁকিতে থাকব। ডায়রিয়া মোকাবিলায় আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছি। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারা ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ করে, পয়ঃনিষ্কাশনে কাজ করে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসার সঙ্গে মিটিং করে আমরা ডায়রিয়া নিয়ে সতর্কতার বিষয়ে জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর এ মৌসুমে ডায়রিয়া সংক্রমণ কিছুটা বাড়ে। গত বছরও আক্রান্ত হার প্রায় কাছাকাছিই ছিল। তারপরও হাসপাতালে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে, পর্যাপ্ত স্যালাইন রয়েছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি