কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দুটি ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। ছাত্রাবাসের বারান্দার গ্রিলসহ অন্তত ছয়টি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে বৃষ্টির মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই তিনটি আবাসিক ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাসের শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পলিটেকনিকে অধ্যায়রত শিক্ষার্থী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত তিনদিন ধরে ইনস্টিটিউটে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সোমবার এক ছাত্রকে ব্যাপক মারধর করে কয়েকজন শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার বেলা বারটার দিকে বৃষ্টির মধ্যে ক্যাম্পাসের ফুটবল মাঠে লালন শাহ ছাত্রাবাসের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী ফুটবল খেলছিল। এসময় পাশ দিয়ে কয়েকজন ছাত্রী হেটে যাচ্ছিল। তাদের শরীরে পানি ছিটিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ ও লালন শাহ ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উভয় পক্ষ হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে মীর মশাররফ ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থীরা লাঠিশোটা নিয়ে লালন শাহ ছাত্রাবাসের গিয়ে হামলা চালায়। নিচতলার বারান্দার গ্রিল ভেঙে ফেলে। সেখানে তিনটি ও দোতলার তিনটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এতে অন্তত তিনজন আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি সাব্বিরুল আলম ও গোয়েন্দা পুলিশের ওসি নাসির উদ্দীনসহ ব্যাপক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বৃষ্টির পানিতে পুরো ক্যাম্পাসহ ছাত্রাবাসের নিচতলা তলিয়ে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় হামলাকারীরা বাইরে চলে যায়। বিকেল তিনটার দিকে লালন শাহ ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায়, ছয়টি কক্ষ ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপসহ আসবাবপত্র ভেঙে তছনছ করা হয়েছে। গ্রিল ভেঙে ফেলে রাখা হয়েছে। দরজা জানালাতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। লালন শাহ ছাত্রাবাসের নিচতলার একটি কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী বিপ্লব হোসেন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমাকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে।
ল্যাপটপ, গিটার ভেঙে তছরুপ করা হয়েছে।’ আমরা দোতলায় ছিলাম। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনাস পারভেজের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। তার সাথে অন্তত ৫০ থেকে ৬০জন ছিল। প্রত্যেকের হাতে লাঠিশোটা ছিল। সামনে যাকে যেমন পেয়েছে মেরেছে। ভাঙচুর করে চলে গেছে। তারা সবাই মীর মশাররফ ছাত্রাবাসে থাকে।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা আনাস পারভেজ বলেন, ‘লালন শাহ ছাত্রাবাসের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী ছাত্রীদের উক্তক্ত্য করেছে। এমন অভিযোগ পাবার পর জানতে চাওয়া হয়েছিল। এরপর তারা উত্তেজিত হয়ে মীর মশাররফ ছাত্রাবাসের ছেলেদের মারধর করে। আমাকেও ইট মেরে রক্তাক্ত করেছে। আমাকে মারা দেখে অনেকেই সেটা সহ্য করতে পারেনি। পরে সংর্ঘষ বাধে। লালন শাহ ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সত্য নয়।’ কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুনির হোসেন বলেন, দুটি হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। উভয় হলে উত্তেজনা বিরাজ করায় ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তায় দুটি ছাত্রাবাস ও একটি ছাত্রীনিবাস অর্নিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনটি হোস্টেলে অন্তত তিন’শ শিক্ষার্থী থাকে। তিনি আরও বলেন, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কমিটির প্রতিবেদন পাবার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। থানায় কোন মামলা হয়নি। মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন আটকও নেই। পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।