1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
‘কি খেয়ে বাঁচমু!’ | Bastob Chitro24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন

‘কি খেয়ে বাঁচমু!’

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২

বেড়েছে বেকারির কেক রুটি-বিস্কুটের দাম

মুখ থেকে ঘাম ঝরছে। ক্লান্ত মোশারফ। সকাল থেকে রিকশা চালিয়েছেন। ক্লান্তি দূর করতে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। তখন দুপুর দেড়টা। খুব ক্ষুধাও লেগেছে। দুপুরে হোটেল থেকে ভাত খেতে ৭০-৮০ টাকা খরচ হয়। টাকা সাশ্রয় করতে কেক, চা আর কলা-রুটি খেয়েই ক্ষুধা নিবারণ করেন মোশারফ। তাই একটি চায়ের দোকান থেকে এক কাপ চা, একটা রুটি আর কলা খেলেন তিনি। এতেই তার ৩০ টাকা খরচ হলো।

মোশারফ বলেন, হোটেলে খেতে অনেক টাকা লাগে। কম দামে খাইতে কেক, রুটি খাই। এই রুটির দামও বাড়লো। কি খেয়ে বাঁচমু আমরা!

বর্তমানে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনে টানাপড়েন বেড়েই চলছে। নিম্নআয়ের দিনমজুর মানুষের জীবন বিপন্ন। গতর খেটে খাওয়াদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। চাল, ডাল, তেল, মুরগি-মাংস থেকে শুরু করে সবজির কিংবা ডিমের দামেও স্বস্তি দিচ্ছে না মানুষকে। এই অবস্থায় অনেকেই খাবার তালিকা কাটছাঁট করছেন। অনেক দিনমজুর দুপুরে ভাত খাওয়াও বন্ধ করেছেন। এখন চায়ের দোকানের কলা, রুটি, কেক, চা দিয়েই তাদের দুপুরের খাবার চাহিদা পূরণ করেন। এই অবস্থায় এসব পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাওয়ায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা অবস্থা তাদের।

পহেলা জুন হস্তচালিত (নন ব্র্যান্ড) বেকারিপণ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রুটি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি। কিন্তু দোকানে কিছু বেকারির পণ্যে এই দাম ৫০ শতাংশ বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে বেকারির ইতিহাসে এমন দাম আগে কখনই বাড়েনি।

দোকানদাররা জানান, দাম বাড়ানোর কিছুদিন আগে থেকে বেকারির সব ধরনের রুটি-কেক আসা বন্ধ ছিল। হঠাৎ করে ১০ টাকার সব ধরনের রুটির দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। এখন বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে সর্বত্র। এছাড়া পেটিস, অলটাইম বান, অলটাইম কেক, হানিকম্ব ও ক্রিম রোলের দামও ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর ১৫ টাকার বড় কেকের দামও হয়েছে ২০ টাকা। এখন বেকারির (নন ব্র্যান্ড) ২০০-২১০ গ্রাম ওজনের প্যাকেট কেক খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। দাম বৃদ্ধির আগে তা বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকায়। ১২০ গ্রাম ওজনের প্যাকেট কেক ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট আকারের প্যাকেট কেক ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। বেকারির প্যাকেট বিস্কুটের দামও ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৫০০ গ্রাম ওজনের ১১০ টাকার বিস্কুট বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। ড্রাইকেক বিস্কুট বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। দাম বৃদ্ধির আগে তা ছিল ১২০ টাকা।

কাওরান বাজারের চায়ের দোকানদার দুলাল বলেন, ১০ টাকা দামের বেকারির সব পণ্যেই ৫ টাকা করে দাম বাড়ছে। যেগুলোর দাম বাড়েনি সেগুলোর মান কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতদিন তো আমাদের কোনো পণ্যই দেয়া হয়নি। বাসাবোর মক্কা জেনারেল স্টোরের সজল আহমেদ বলেন, বেকারির পণ্যের দাম বাড়ার পর থেকে আমাদের বিক্রি অনেক কমে গেছে। আমরাই অল্প অল্প করে রুটি-কেক রাখি।
দিনমজুর মো. রুবেল কাওরান বাজারে সবজি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, কোনো কিছুর দাম বাড়া বাকি রইলো না। দুপুরে ভাত না খেয়ে কলা-রুটি খাই এখন এটার দামও বাইড়া গেল। আগে ২০ টাকার মধ্যে কোনোরকম খেতাম। এখন ৩০-৪০ টাকা লাগে। বাইরে একবার খেতেই যদি এত টাকা খরচ হয়ে যায় তাহলে অন্য বেলায় কী খাব। ফুটপাথে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন গৌতম কুমার। ঢাকায় মেসে থাকার কারণে তিনি সকালে বাইরে নাস্তা করেন। ডিম পরোটা খেতে বেশি টাকা লাগার কারণে তিনি

এতদিন চা, কেক কিংবা রুটি কলা খেতেন। এতে তার ২০ টাকার মতো খরচ হতো। কিন্তু এখন ৪০ টাকার মতো খরচ হয়। গৌতম বলেন, কম দামের জন্য সকালে কলা-রুটি দিয়ে নাস্তা করতাম। এখন তো মনে হয় তাও করা যাবে না। এগুলোর দাম বাড়নোতে খুব সমস্যা হচ্ছে।
রবিন হাসান নামের এক বেসরকারি কর্মী বলেন, আগের বার এক প্যাকেট ড্রাইকেক কিনেছি ১২০ টাকা দিয়ে। এখন ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কোনো কিছুর দামই তো কম নেই। এক এক করে সবকিছুই বাড়ছে।

মোস্তফা নামের বেকারির এক কর্মী জানান, এখন তেল, ডালডা, আটা-ময়দা, চিনি, দুধ ও ডিমসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। এজন্য তাদের পণ্য তৈরিতে বেশি টাকা খরচ হয়। দোকানের কর্মচারীদেরও বেশি টাকা বেতন দিতে হয়। এজন্য বাধ্য হয়ে তাদের বেকারি পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে। মহিন হোসেন বলেন, এখন জিনিসপত্রের সব কিছুর দাম বাড়ছে। এজন্য আমাদের বেকারির পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। নইলে আমাদের লাভ করতে কষ্ট হয়ে যাবে। আমরা এক প্রকার বাধ্য হয়েই দাম বাড়িয়ে দিয়েছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি