বৈধপথে আন্তর্জাতিক কল বাড়াতে কমানো হয়েছে ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট। অবৈধ কল টার্মিনেশনে অনিবন্ধিত সিম ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ দিয়ে) সিম নিবন্ধন চালু করেছে সরকার। অবৈধপথে কল আদানপ্রদানের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযানও চালাচ্ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) ও র্যাবের যৌথ টিম। এসব অভিযানে ধরা পড়ছে সকল অপারেটরের সিমই, প্রমাণিত হচ্ছে নিষ্ক্রিয়তা। এর ফলে অবৈধ ভিওআইপির (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) মাধ্যমে প্রতিবছর বিদেশে পাচার হচ্ছে হাজার কোটি টাকা। আর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
সম্প্রতি দেশে সেবা প্রদানকারী চার মোবাইল ফোন অপারেটরের (গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও টেলিটক) ৫২ হাজার ৩৪৪টি সিম অবৈধ ভিওআইপিতে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে। কমিশনের নির্দেশনা ও লাইসেন্সিং শর্ত ভঙ্গ করার অপরাধে টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী এবং কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জব্দ এসব সিমের বিপরীতে অপারেটরগুলোকে ২৬ কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার ৮৭৪ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু অপারেটরগুলো জরিমানা পরিশোধ না করে ব্যক্তিগত শুনানীর জন্য আবেদন করলে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে প্রায় ১৯ কোটি টাকা মাফ করে দেয়া হয়। নতুন জরিমানা ধার্য্য করা হয় ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল এবং একই বছরের ১৪ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ ভিওআইপি যন্ত্রপাতিসহ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীনফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক এবং টেলিটকের ৫২ হাজার ৩৪৪টি সিম জব্দ করা হয়।
এর মধ্যে- সর্বোচ্চ সংখ্যক টেলিটকের ৩২ হাজার ৮৪৫টি, গ্রামীণফোনের ২ হাজার ৩৫৬টি, রবির ১৬ হাজার ৩৯০টি এবং বাংলালিংকের ৭৫৩টি সিম জব্দ করা হয়। এর বিপরীতে টেলিটককে দুই ধাপে ১৭ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, গ্রামীণফোনকে দুই ধাপে ৯৯ লাখ ৬২৫টাকা, রবিকে দুই ধাপে ৭ কোটি ৫৫ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৭ টাকা এবং বাংলালিংকে দুই ধাপে ৩৩ লাখ ৬২ হাজার ৩১২টাকা জরিমানা করা হয়।
অপারেটরগুলো জরিমানার টাকা পরিশোধ না করে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের জরিমানা মওকুফের আবেদন করে। কমিশন তা নাকচ করে দিয়ে জরিমানা বহাল রাখে। পরবর্তীতে টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয় তিনি বিটিআরসির আরোপিত প্রশাসনিক জরিমানা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। তারপরও অপারেটরগুলো জরিমানা পরিশোধ না করে ব্যক্তিগত শুনানীর জন্য আবেদন করলে গত ১০ এপ্রিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেই শুনানীর প্রেক্ষিতে চার মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রায় ১৯ কোটি টাকা জরিমানা মওকুফ করা হয়।
নতুন জরিমানা নির্ধারণ করা হয় টেলিটকের ৫ কোটি, গ্রামীণফোনের ৫০ লাখ, রবির ২ কোটি, বাংলালিংকের ১৫ কোটি টাকা।
কমিশনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, অভিযানে অবৈধ ভিওআইপি প্রতিরোধে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো বিটিআরসির জারিকৃত গাইলাইনের শর্ত অনুযায়ী যেসকল বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে সেক্ষেত্রে শীথিলতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া অবৈধ ভিওআইপি কল প্রতিরোধে তাদের গাফলতিও প্রমাণিত হয়েছে। অপারেটরগুলোকে ইতোমধ্যে নতুন জরিমানার সিদ্ধান্তের বিষয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে বিটিআরসি। যেখানে চারটি অপারেটরকেই ৩০ জুনের মধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। অভিযোনে অবৈধ ভিওআইপির অভিযোগে জব্দকৃত সিমের বিপরীতে বিটিআরসির প্রশাসনির জরিমানার বিষয়ে অপারেটরগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার সভাপতিত্ব করেন। শুনানীতে অংশ নেন বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। উপস্থিত ছিলেন মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রতিনিধিরাও। জব্দকৃত টেলিটকের সিমের বিষয়ে নিরীক্ষা-পুন:নিরীক্ষা, টেলিটকের আবেদন ও শুনানী ইত্যাদি শেষে কমিশন টেলিটকের প্রতি সর্বোচ্চ নমনীয়তা দেখায়।