1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
মহাসড়কে মহাদুর্ভোগ | Bastob Chitro24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন

মহাসড়কে মহাদুর্ভোগ

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২১ মে, ২০২২

রাজধানীতে প্রবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সড়কের অন্যতম হলো টঙ্গী-গাজীপুর মহাসড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করা সড়কটির নাম হয়ে গেছে জনদুর্ভোগের মহাসড়ক। বছরের পর বছর ধরে চলছে উন্নয়ন কাজ; অন্যদিকে সড়কের দুই পাশ দখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে চাল লেনের ব্যস্ত সড়ক ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন কাজ চলমান থাকার কারণে রাস্তা ভাঙা ও খানাখন্দের ফলে যানবাহন চলে হেলেদুলে। একটু বৃষ্টি হলেই মানুষের ভোগান্তি বাড়ে কয়েকগুণ। খানাখন্দে পানি জমে কাদাপানি একাকার হয়ে যায়। আর রোদ উঠলেই মহাসড়ক হয়ে পড়ে ধুলায় ধুলিময়। পথচারীদের মুখে রুমাল চেপে পথ চলতে হয়। এই রুটের বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, বিআরটি, সাধারণ যান চলাচলের পৃথক লেন নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের নির্মাণকাজ একসঙ্গে চলছে। ধীরগতির কারণে এখনো কোনোটির কাজই সম্পন্ন হয়নি।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা ট্রাফিক জোনের ডিসি সাইফুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বিমানবন্দর থেকে উত্তরা সড়কে নিয়মিতই যানজট সৃষ্টি হয়। তবে উন্নয়ন কাজের কারণে গত কয়েকদিন ধরে যানজট বেশি হচ্ছে। হঠাৎ আবার যানজট বেড়ে যাওয়ার কারণে এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যাত্রীদের নির্বিগ্নে চলাচলের জন্য ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

ধুলাবালু, খানাখন্দ আর ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী করে এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের রয়েছে নানা অভিযোগ। কখনো টঙ্গী ব্রিজ থেকে কলেজ গেট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। ৬ ঘণ্টার মতো সময় লাগে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার যেতে। ভোগান্তি এড়াতে এ রুটের বেশিরভাগ বাসিন্দাই এখন টঙ্গী থেকে ট্রেনে গাজীপুর ও ঢাকায় যাতায়াত করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ একসঙ্গে এতো কাজ করার ফলে কোনোটাই শেষ না হওয়ায় এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের। এ রাস্তার দুইপাশ চলে গেছে ব্যবসায়ীদের দখলে। আর মহাসড়ক চলে গেছে ইজিবাইক নামক অবৈধ যানের দখলে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টঙ্গী-গাজীপুর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিআরটি প্রকল্পের সড়ক ও স্টেশন নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। ৫ বছর মেয়াদের এ প্রকল্প চলছে প্রায় ১০ বছর ধরে। কাজের গতি কম হওয়ার কারণে দিনের পর দিন তাদের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। ফলে টঙ্গী-গাজীপুর সড়ক এখন সব মানুষের কাছে ভোগান্তির অপর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনে দিনে বেড়েই চলছে এই সড়কের বেহাল দশা। এই ভোগান্তির অবসান কবে হবে তার কোনো সঠিক সময় কারো জানা নেই। স্থানীয়দের প্রশ্ন এতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উন্নয়ন কাজের এতো ধীরগতি কেন?

গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারে প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ যানজট বিভিন্ন সময় রাজধানীর মহাখালী পর্যন্ত চলে আসে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে মহাখালীর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেও। যার কারণে দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ সবধরনের যানবাহন দীর্ঘ সময় আটকে থাকে একই স্থানে। এছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, সড়কের দুইপাশে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট, পাশাপাশি সড়কটিতে চলমান উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবী মানুষের। এই রুটের দুইপাশে বিভিন্ন এলাকায় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বসে নানা ধরনের পণ্যের দোকান। এতে ভোগান্তির মাত্রা বাড়ে এই সময়ে।

এই সড়কে যানজটের জন্য বেশ কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এগুলো হলোÑ মহাসড়কের দু’পাশে কোনো ফুটপাথ না থাকা, লাখ লাখ পোশাক শ্রমিকের মহাসড়কের ওপর দিয়ে যাতায়াত, রাস্তায় নির্মাণকাজ, মহাসড়কের পাশে অবৈধ পার্কিং, ধীর গতির ও অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল, রাস্তা দখল করে দোকানপাট ও গণপরিবহনের যত্রতত্র গাড়ি থামানো এবং যাত্রী ওঠা-নামা করানো।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও চলছে ড্রেন নির্মাণকাজ, কোথাও নির্মিত হচ্ছে ফ্লাইওভার, কোথাও বিআরটিএ স্টেশন আবার কোথাও চলছে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ। উন্নয়নে বিশাল এক কর্মকাণ্ড চলছে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ি পর্যন্ত। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পের কাজ করছে বিআরটিএ। টঙ্গী থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে অসহনীয় দীর্ঘ যানজট। এতে ঢাকামুখী ও উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীরা প্রতিদিন পড়ছেন দীর্ঘ যানজটে। নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।

এই সড়কের দুইপাশে ও কোথাও কোথাও মাঝের অংশে পড়ে আছে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। এর মধ্যেই চলাচল করছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, রিকশা, অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, চলমান বিআরটি প্রকল্পের ড্রেনের কাজের জন্য মহাসড়কের দু’পাশে কোনো ফুটপাথ নেই। ফলে লাখ লাখ শ্রমিক সকাল, দুপুর ও রাতে অফিস এবং বাড়ি ফেরার পথে মহাসড়ক ধরেই চলাচল করছেন। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে মাঝে মাঝেই পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই পথে চলাচলকারী সব যানবাহন এখন আর স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। সব যানবাহনকেই ধীরগতিতে চলতে হয়। একদিকে ভাঙা রাস্তা, অন্যদিকে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে রাস্তার অবস্থা আরো করুণ।

এই সড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, চেরাগ আলী মার্কেটের সামনে রাস্তার দুই পাশে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রাখা থাকে সবসময়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই স্থানটিকে তাদের সুবিধার্থে অস্থায়ী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলেছেন। এখানে আড়াআড়িভাবে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রাখার কারণে থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করতে হয়। এখন সড়কের কিছু অংশ ভাঙাচোরা। কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের কোথাও তিন লেন, কোথাও দুই লেনে পরিণত হয়েছে। এতে ওই পথে যানবাহন খুবই ধীরগতিতে চলছে। যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় যানবাহনের বেশ জটলা লেগে থাকে। প্রকল্পের কাজের কারণেই যানবাহনগুলো তাদের স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় রাস্তার মাঝে বিআরটি প্রকল্পের বাস বে নির্মাণকাজ চলমান। দুইপাশে রয়েছে দোকানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তে পানি জমে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে যানবাহন চলাচলে। টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের শ্রমিকরা কাজ করেন। সেখানে পাইলিং ভাঙার কাজ চলছে। এতে যানবাহন চলাচলে কিছুটা সমস্যা হয়। গাছা, বোর্ডবাজার, কুনিয়া বড়বাড়ি এলাকায় একই অবস্থা। বিআরটি প্রকল্পের স্টেশন তৈরির কাজ চলমান থাকায় সেখানে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রকল্পের কাজের নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য রাস্তা ছোট হয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে বড় বড় সøাব রাখার কারণে এক লেনে চলতে হয় যানবাহনগুলোকে।

এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ অটোরিকশা। ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা-অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও এ মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রকাশ্যে হাইওয়ে পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়ে এসব অটোরিকশা চলাচল করলেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে দাবি এলাকাবাসীর। শত শত ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা-অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল করছে। সড়কে এসকল রিকশা অটোরিকশাগুলো জটলা করে মহাসড়ক দখলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও রাজত্ব করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা। মহাসড়কে যানজট এবং দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব বাহন। ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও অটোরিকশার চালকরা আইন মানতে নারাজ। মহাসড়ক বড় থাকলেও এসব চালকরা উল্টো পথেই চলে। ইউটার্ন নেয়ার ধার ধারে না এসব বাহনের চালকরা। কখনো কখনো ডিভাইডারের ওপর দিয়েই পার করছে তাদের ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইকগুলো।

টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক কবির জানান, সকাল হলেই রিকশা নিয়ে মহাসড়কে বের হতে হয়। এই মহাসড়ক ছাড়া আন্য সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে বেশি আয় করতে পারি না। এই রোডে আটো চালাতে গিয়ে বিপদের কথা বিবেচনা করে রিক্স নিয়েই বের হই। কি আর করব একটু বেশি টাকা রোজগারের জন্য ঝুঁকি নিয়েই মহাসড়কে অটো চালাই।

টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল মালেক জানান, তিনি নিয়মিত ঢাকায় একটি বেসরকারি চাকরির কারণে এই সড়কে যাতায়াত করেন। বাসে তার কলেজ গেট থেকে মতিঝিল যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়। কোনোদিন তিনি নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে যেতে পারেননি বলে জানান। দীর্ঘদিন যাবৎ এভাবে কষ্ট করে যাতায়াত করে এখন তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পুরো সড়ক রাতদিন ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ধূলার কারণে এলাকার বাসিন্দাদের শ্বাসকষ্ট, এলার্জিসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বলাকা পরিবহনের চালক আনোয়ার জানান, টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যেতে কখনো কখনো চার থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ এই পথ যেতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা নয়। যতদিন যাবত কাজ চলছে ততদিন এই রুটে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সারাদিনে দুই সিঙ্গেল বাস চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। এতে গাড়ির মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

মাইক্রোবাস চালক আকরাম হোসেন শাকিল বলেন, এ রোডে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলাচলের পর থেকে যাত্রীরা আসতে চাইলেও ভাড়া নেই না। বেশি ভাড়া দিলেও পোষায় না। সারাদিন চলে যায় যানজটের মধ্যেই। যাত্রী নিয়ে পড়ে দেখি গ্যাস ও তেল খরচ বাদ দিলে কিছুই থাকে না।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ বিভিন্ন কারণে শেষ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালে এই সড়কে বাস চলার কথা ছিল। কিন্তু বর্ষাকালে এই সড়কে লাগাতার কাজ করা সম্ভব হয় না। তখন কাজ থেমে থাকে। গত দুই বছরে করোনা মহামারির কারণে কাজের গতি অনেকটাই থেমে থাকে। তবে এখন দ্রুত কাজ চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি